ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রাজধানীতে বেড়ে গেছে টানা পার্টির দৌরাত্ম্য

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজধানীতে বেড়ে গেছে টানা পার্টির দৌরাত্ম্য

আসাদ আল মাহমুদ: গত ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা। অফিস শেষে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে বাসে করে বাসায় যাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সুবর্ণা মীম। ফুলবাড়িয়া অতিক্রমের সময় এক যুবক বাইরে থেকে জানালায় হাত ঢুকিয়ে কানের একটি দুল টান দিয়ে ছুট দেয়। কান চেপে ধরে ওই যুবককে ধরার জন্য চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। মুহূর্তের মধ্যে শত মানুষের ভিড়ে গায়েব হয়ে যায় যুবকটি।   
 
শুধু মীম নয়, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের ডিভাইডারে দাড়িয়ে এভাবেই টানা পার্টির ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ চক্রের সদস্যরা দিনের আলোতে বা রাতের অন্ধকারে শত শত চোখের সামনেই ছিনতাই করছে।

ঢাকা নগরীতে টানা পার্টির উৎপাত নতুন কিছু নয়। টানা পর্টির সদস্যরা রাস্তার পাশে, বিনোদন কেন্দ্র বা শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ঝোঁপ বুঝে সুযোগটি কাজে লাগিয়ে জিনিষ টান দিয়ে নিয়ে যায়।  

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, টানা পার্টির জিনিষ টেনে নিয়ে যাওয়াটা হলো ছিনতাইয়ের একটি নতুন কৌশল। ছিনতাইকারীরা কৌশলে সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোনসেট, গলার দামি চেইন, লকেট, কানের দুল, ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। ঘটনাস্থলে এতো ভিড় থাকে যে, ছিনতাইয়ের পরে ছিনতাইকারী মানুষের ভিড়ে মিশে যায়। অনেক সময় ভুক্তভোগী তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারেন যে, তিনি টানা পার্টির সদস্য দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। আবার কখনো এটি বুঝতে ভুক্তভোগীর কিছুটা সময়ও লেগে যায়।

ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ বলছেন, জিনিষ হারানোর পর ঝামেলা এড়াতে তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে  নিরুৎসাহিত হন।

পুলিশ বলছে, টানা পার্টির কাজকে তারা ছিনতাইয়ের মতোই দেখছেন। এর বিরুদ্ধে তারা তৎপর রয়েছেন। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের অনেক সদস্যকে তারা আটকও করেছেন।

কথা হয় পুরান ঢাকার তারা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসানাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁতিবাজার মোড়ে রিকশায় বসে ফোনে কথা বলছিলেন। রাস্তায় জ্যামে পড়ায় নামতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় এক যুবক তার কান থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে গায়েব হয়ে যায় ছিনতাইকারী।

রাজধানীর পাশ্ববর্তী এলাকা কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী সুজন রায় বলেন, তিনি গত ২৫ জানুয়ারি রিকসায় বাদামতলী থেকে সোয়ারিঘাট যাচ্ছিলেন। সোয়ারিঘাটের আগে প্রচণ্ড জ্যাম পড়ে। গাড়ি থেকে নেমে হাটার সিদ্ধান্ত নিয়ে রিকসা ভাড়া দেওয়ার জন্য পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করেন। ঠিক এ সময় কিছু বুঝে উঠার আগেই এক যুবক মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয়। মানিব্যাগে ২ হাজার ৯০০ টাকা, ন্যাশনাল আইডি কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ছিল।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশের জেরার মুখে পড়েন। তাদের প্রশ্নের মুখে অভিযোগ না করেই থানা থেকে চলে আসেন।  

আরেক ভুক্তভোগী নিয়াজ মাহবুব বলেন, মিরপুর পল্লবী থানা এলাকায় তিনি টানা পার্টির ছিনতাইয়ের শিকার হন। ওই সময় ছিনতাইকারীরা তার হাতে থেকে ল্যাপটপের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওই ল্যাপটপে তার মূল্যবান কিছু নথিপত্র ছিল। এ কারণে তিনি থানায় অভিযোগ করতে যান। কিন্তু সেখানে তাকে সধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘থানার ডিউটি অফিসার আমাকে বলল জিডি করতে। আর জিডিতে ছিনতাই না লিখে খোয়া গেছে উল্লেখ করতে বলল। আসল ঘটনাটাই এখানে হাইড করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তারা। হতাশ হয়ে থানা থেকে ফিরে গেছি।’ 

গণমাধ্যম কর্মী লাইজুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি তিনি বাসে যাওয়ার সময় ধানমন্ডি থানা এলাকায় বাসের জানালা দিয়ে টানা পার্টির সদস্য তার মোবাইল ফোনসেটটি নিয়ে যায়। সে বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা তৎপর রয়েছি। ইতোমধ্যে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তৎপরতায় অজ্ঞান, মলম, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। টানা পার্টির বিরুদ্ধেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/আসাদ/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়