ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ব্যাংক কেলেঙ্কারি

প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুকে ৪র্থ দফায় তলব

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৩, ৬ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুকে ৪র্থ দফায় তলব

এম এ রহমান মাসুম : বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে চতুর্থ দফায় তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে তাকে আগামী ৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টায় হাজির হতে বলা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক শামসুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে গত ৮ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই জিজ্ঞাসাবাদ করার পরও শেষ হয়নি তদন্ত কর্মকর্তাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ। তাই আব্দুল হাই বাচ্চুকে চতুর্থ দফায় তলব করা হয়েছে বলে তদন্ত দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।

দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল এ জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান বেসিক ব্যাংকের আলোচিত প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু। তিন দিনে ৫৬টি মামলার মধ্যে ২৪টি মামলার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এর আগে ১৭ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় চেয়ে দুদকে লিখিত আবেদন করেন আব্দুল হাই বাচ্চু। তার আবেদন নাকচ করে দুদক।

গত ৪ ডিসেম্বর বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই দিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিজেকে দোষী মনে করি না।’

এরপর গত ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো প্রায় সাত ঘণ্টা আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান জাতীয় পার্টির এই প্রাক্তন সংসদ সদস্য। তবে সাংবাদিকদের জেরার মুখে এক পর্যায়ে তিনি বিড়বিড় করে বলেন, ‘কী বিপদেই না পড়লাম!’

বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর সম্প্রতি ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। এর আগে ব্যাংকের প্রাক্তন ১০ পরিচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’

প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করেন দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে।

অনিয়মের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান।

মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা আছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কণক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম আটটি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত বিষয়ে আরো চারটি মামলা করে দুদক।

২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে মোট সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়াসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।

জাতীয় পার্টির প্রাক্তন সংসদ সদস্য আব্দুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা আব্দুল হাই বাচ্চু পদত্যাগ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মার্চ ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়