ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সেতাফুল রহস্য :

ক্ষতিপূরণের ৯২ লাখ টাকা বাসা থেকে উদ্ধার (ভিডিও)

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১০, ৭ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্ষতিপূরণের ৯২ লাখ টাকা বাসা থেকে উদ্ধার (ভিডিও)

এম এ রহমান মাসুম : ভূমি অধিগ্রহণের সরকারি তহবিলের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার রহস্য উদঘাটনের পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এবার গ্রেপ্তারকৃত কিশোরগঞ্জের জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাসা থেকে ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুদকের তদন্ত দল।

মঙ্গলবার গভীর রাতে তার কিশোরগঞ্জের হারুয়া এলাকার কাচিয়ারচরের বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। অভিযানকালে কিশোরগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযানে টাকা উদ্ধারের বিষয়টি দুদক তদন্ত দল রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা অফিস সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাড়ি তল্লাশি করে ঘরের আলমারিসহ বিভিন্ন গোপন স্থানে ৯২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে উদ্ধার করা টাকা ক্ষতিপূরণের নামে আত্মসাত করা টাকা বলেই দুদকের তদন্ত দল সন্দেহ করছে। জব্দ করা টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে বলে দুদকের তদন্ত দল জানিয়েছে। সৈয়দুজ্জামান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

ভূমি অধিগ্রহণের সরকারি তহবিলের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গত ১৭ জানুয়ারি ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার ও মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এরপর রিমান্ড শেষে সেতাফুলের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির রেশ ধরে ও্ই মামলায় গ্রেপ্তার হন কিশোরগঞ্জের জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও পিয়ন দুলাল মিয়া।

কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তছলিমা আক্তারের এজলাসে ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নাম ছিল কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মাইনুল ইসলামেরও।

আসামি সৈয়দুজ্জামান ও পিয়ন দুলালের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসে কিশোরগঞ্জের জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ও সুপার গোলাম হায়দারের নাম। শুধু তাই নয় ১১ জানুয়ারি দাখিল করা ভূমি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে আসে ডিসি আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের অবহেলার প্রমাণ। তবে এখনো তাদের গ্রেপ্তার করেনি দুদক।
 


আত্মসাৎ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পালন করছে দুদকের বিশেষ দিল। দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম ও ফজলুল বারী। মামলার তদারকি করছেন দুদকের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. নাসিম আনোয়ার।

এ সংক্রান্ত অনিয়ম খতিয়ে দেখে তৈরি করা তদন্ত প্রতিবেদন গত ১১ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেন কমিটির প্রধান। ৮৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে সেতাফুল ইসলামের অনিয়ম ও জেলা প্রশাসকের দায়িত্বের অবহেলার সত্যতা পাওয়া যায়, যার স্মারক নম্বর-৩১.০০.০০০০.০৪৭.৬৮.১১৫.১৭.২১। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে এসব তথ‌্য নিশ্চিত করেছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জা তারিক হিকমতের সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসককে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসালামের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার নথিতে (নথি নম্বর ৩১.৪১.৪৮০০.০০৮.০৬.০২১.০৬) ক্ষতিপূরণের প্রতিটি চেক পাশ করার আগে জেলা প্রশাসক বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যাচাই করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না দেওয়া, সেতাফুল ইসলামের কাছ থেকে ১৪০টি এলএ চেকের প্রাপকের অংশ উদ্ধার করার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননিঅতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দুলাল চন্দ্র সূত্রধর ও অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. মাইনুল হক।

ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দুলাল চন্দ্র সূত্রধরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন এলএ কেসের আওতায় ৪৮টি এলএ চেকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিতরণ করায় সেতাফুল ইসলামকে ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া এবং ইস্যু করা কিন্তু পাওয়া যায়নি এমন ১৩টি চেক ফেরত দেওয়াসহ নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২০৫টি এলএ চেক নিজ হেফাজতে রেখে ইস্যু করার কারণ দর্শানোর সুপারিশ করলেও হিসাব না নিয়ে সেতাফুল ইসলামকে অবমু্ক্ত করার বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আজিমুদ্দিন বিশ্বাসকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

সেতাফুলের জবানবন্দির জের ধরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও পিয়ন মো. দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তারা কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তছলিমা আক্তারের এজলাসে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। যেখানে কিশোরগঞ্জের জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ও সুপার গোলাম হায়দারের অর্থ আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা উঠে আসে।

এ বিষয়ে আদালতে দেওয়া তাদের জবানবন্দির সূত্রে জানা যায়, সেতাফুল ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষতিপূরণের ২ কোটি টাকা একটি চেকের মাধ‌্যমে এবং ৭ ডিসেম্বর অপর চেকের মাধ‌্যমে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অফিসার ও সুপারের সহায়তায় উত্তোলন করেন। সেতাফুল কিশোরগঞ্জ জেলা ডিসি অফিসের মাইক্রোবাস ব‌্যবহার করে ব‌্যাংক থেকে ওই টাকা উত্তোলন করেন। এ সময় হিসাবরক্ষণ অফিসের পিয়ন দুলাল সেতাফুলের সঙ্গে থেকে উত্তোলন করা টাকা বহন করেন, যা তিনি (দুলাল) ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন।

জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের প্রায় ১৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলাম, এমন অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

ওই সময় সেতাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ জেলায় ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি জনপ্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা।


**



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৮/এম এ রহমান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়