ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নানা সংকটেও ঝুঁকি নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ৯ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নানা সংকটেও ঝুঁকি নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান

ফাইল ফটো

আসাদ আল মাহমুদ : প্রতিনিয়ত দেশে ঢুকছে জীবন বিধ্বংসী মাদক (মদ, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল)। নেপথ্যে রয়েছে শক্তিশালী কিছু চোরাকারবারী চক্র।

মাদকের থাবায় নিষ্পেষিত হচ্ছে যুব সমাজ। কিন্তু অপ্রতুল জনবল ও পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় মাদক নির্মূলে কাজ করতে পারছেনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। নিরস্ত্র (অস্ত্র না থাকায়) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের ৬৪ জেলায় কার্যালয় রয়েছে। সারা দেশে জনবল রয়েছে ১ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ১৯১ জন কর্মরত আছেন। বাকি ৫১৫টি পদ খালি রয়েছে।  পদগুলো সিপাই, এসআই, এডি, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের জন্য ডাক্তার ও নার্স। অধিদপ্তরের রাজধানীতে দুটি অফিস রয়েছে। দুই অফিসে জনবলের সংখ্যা মাত্র ৯৩ জন। সারা দেশে যানবাহন রয়েছে মাত্র ৫১। এর মধ্যে ৩৯টি জিপ, ৭টি কার, একটি অ্যাম্বুলেন্স, দুইটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল। এর মধ্যে ৬টি জিপ নষ্ট। আর ঢাকা মেট্রোপলিটনে গাড়ির সংখ্যা মাত্র তিনটি। এর মধ্যে একটি ব্যবহার করা হয় প্রশাসনিক কাজে।

মাদকবিরোধী অভিযানের বাইরেও সরকারি চারটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার, ওষুধসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাদকের ব্যবহার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পরিদর্শন, অনুমোদন এবং জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে এ অধিদপ্তরকে কাজ করতে হয়। এসব ক্ষেত্রেও জনবল সংকটের কারণে কাজে গতি নেই। 

কর্মকর্তাদের কোনো অস্ত্র না থাকায় সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনে ঝুঁকি নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু অন্য বাহিনীর মতো তাদের ঝুঁকিভাতা বা রেশন সুবিধাও নেই।

সূত্র আরো জানায়, মাদক সংক্রান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে ২০১১ সালের ২৮ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুরোধপত্র পাঠায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরপর ২০১২ সালের ৪ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অস্ত্র সংগ্রহ এবং ব্যবহারের একটি নীতিমালা চায়। সে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। গত বছর ২১ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর ও ফিল্ড লেভেলের অফিসারদের অস্ত্র দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তার প্রতিফলন আদৌ দেখা যাচ্ছে না।

গত বছর  মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর  ১১ হাজার ৬১২ মামলা এবং ১২ হাজার ৬৫১ জন আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে ২ হাজার ৫৪৪টির বিচার নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলায় ১ হাজার ১৬ জনের সাজা হয়েছে, খালাস পেয়েছে ১ হাজার ৫২৮ জন। শুধু ২০১১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত পেন্ডিং মামলার সংখ্যা ৪৮ হাজার ৬৮০টি। প্রতি মাসে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গড়ে ৯৬০ থেকে ১ হাজার মামলা করে থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় লোকবল, তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ ও যথাসময়ে চার্জশিট দিতে না পারায় অধিকাংশ মামলার কার্যক্রম চলছে না।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে গেলে পুলিশের সহযোগিতা নিতে হয়। প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অভিযান চালাতে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ চোরাচালানই আটক করা সম্ভব হয় না। কারণ পুলিশি সহায়তার সে প্রক্রিয়ায় সময় ব্যয় হয়, তার মধ্যেই মাদক কারবারিরা তাদের মিশন সম্পন্ন করে ফেলে। নিরস্ত্র এই বাহিনীর কর্মকর্তারা অস্ত্রধারী মাদকসেবী কিংবা মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন আহমেদ  বলেন, জনবল ও যানবাহন সংকটের কারণে কর্মকর্তাদের অভিযান পরিচালনায় বেগ পেতে হয়। অধিপ্তরের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ৫০৫ জনবলসহ ৫০টি যানবাহন চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে।

তিনি বলেন, নতুন করে ২৪৪ জন জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষকের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে রাজধানীর  ৩০০ ফিট এলাকায় একটি ভবন নির্মাণ হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের (ফিল্ড অফিসার) অস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের জনবল ও যানবাহনও বৃদ্ধি করা হবে। এসব বিষয়ে শিগগিরই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। তারপর আইন সংশোধন করে ডিএনসি কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেওয়া হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ মার্চ ২০১৮/আসাদ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ