ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাড্ডায় একের পর এক হত্যা

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ৬ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাড্ডায় একের পর এক হত্যা

মাকসুদুর রহমান : রাজধানীর বাড্ডায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। তদন্তে ধীর গতি এবং প্রকৃত অপরাধী গ্রেপ্তার না হওয়ায় সর্বশেষ এ তালিকায় নাম লেখাতে হয়েছে বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের চাচাতো ভাই কামরুজ্জামান দুখুকে। তার স্বজনরা চাচ্ছেন, দ্রুত বিচার শেষে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

২২ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে বেরাইদ ইউনিয়ন বাজারের বসে ছিলেন দুখু। সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাগ্নে ফারুক গ্রুপের কয়েকজন সন্ত্রাসী। এ খবর জেনে চেযারম্যানের লোকজনের তাকে উদ্ধার করতে আসলে ফারুক গ্রুপের সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিদ্ধ হন দুখু। পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান। ফারুক ও তার বিশ্বস্ত আইয়ুব সরাসরি এ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়। আইয়ুবই প্রথমে গুলি করে বলে বাড্ডা থানার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। বেরাইদ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে গোয়েন্দারা প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছেন।

বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে ভাগ্নে ফারুক জড়িত। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। একই সঙ্গে মামলাটি দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি।’

রোববার বিকেলে বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘বাড্ডায় একাধিক গ্রুপ আছে। এরাই এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধে জড়াচ্ছে। যা খুন-খারাবির পর্যায়ে যাচ্ছে। এগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে প্রতিটি ঘটনায় থানায় অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনেও সোপর্দ করা হচ্ছে।’

দুখু হত্যার তদন্তের অগ্রগতি কত দূর? এ প্রশ্নের জবাবে বাড্ডা থানার ওসি বলেন, ‘সর্বশেষ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে নজরদারি চলছে। প্রতিটি ঘটনা পৃথক কারণে ঘটছে।’

শনিবার দুপুরে বাড্ডা ও বেরাইদ ইউনিয়নে গিয়ে জানা গেছে, অবৈধ চাঁদাবাজি, খাল ভরাট, বালুমহাল দখল, অন্যের জমিতে মাছের ঘের, মাদক, ডিশ ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে একাধিক গ্রুপ রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে। এর মধ্যে ভাগ্নে ফারুক, মেহেদী, রায়হান, ডালিম-রবিন গ্রুপ, জাহাঙ্গীর-আলমগীর গ্রুপ ও অনিক গ্রুপ অন্যতম। তবে বেশিরভাগ অপকর্ম এখন করে যাচ্ছেন ভাগ্নে ফারুক গ্রুপ। তার ক্যাডাররা দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট রাতে বাড্ডার আদর্শনগর পানির পাম্প এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামাসহ চারজন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা।

আফতাবনগর গরুর হাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ ভাগ্নে ফারুকের নির্দেশে এ ঘটনা ঘটে। কেননা ওই সময় গরুর হাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে ভাগ্নে ফারুক ৬০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। এর আগে ৮ জানুয়ারি আনন্দনগরে দুই গ্রুপের গোলাগুলির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আমির হোসেন নামের একজন। একই বছরের ৩ মে বাড্ডা জাগরণী সংসদ ক্লাবে আফতাবনগর পশুর হাটের ৬০ লাখ টাকা চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর একটি বৈঠক হয়। বৈঠক চলাকালে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে বাড্ডা থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন রাহিনকে। এছাড়া ২০০৯ সালের বাড্ডায় নাজিমকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পর মেহেদী গ্রুপের অন্যতম ক্যাডার কাবিলা। যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। একই মাসের ১৬ তারিখ বাড্ডায় দুলাল হোসেন নামের এক পুলিশ সোর্সকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আর ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিনদুপুরে গুলি ও বোমা ছুড়ে হত্যা করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মামুনকে। এছাড়া বিভিন্ন সময় সাইদুর, মাসুম, আলা, রুবেল ও তাইজুলসহ আরো কয়েকজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তবে বেশিরভাগ মামলাই এখন থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দারা তদন্ত করছে। বিভিন্ন সময় অন্য গ্রুপগুলো এসব অপকর্ম করলেও এখন করছেন স্থানীয় এমপির ভাগ্নে ফারুক বাহিনী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মে ২০১৮/মাকসুদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়