ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘সাবধানে চালাতে বললেও যাত্রীদের অনুরোধ তারা রাখেননি’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সাবধানে চালাতে বললেও যাত্রীদের অনুরোধ তারা রাখেননি’

মামুন খান : বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে মাছুম বিল্লাহর চালানো বাসটি ফ্লাইওভারের ঢালে রেলিং ও দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ওই সময় যাত্রীরা বাসটি সাবধানে চালানোর জন্য চালক ও তার সহকারীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা যাত্রীদের অনুরোধ রাখেননি।

বাসচাপায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের মামলায় আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে এমনটাই উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর কাজী শরীফুল ইসলাম।

জাবালে নূর পরিবহনের বাসের মালিক ও চালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। চার্জশিটের আসামিদের মধ্যে চারজন কারাগারে এবং দুজন পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

চার্জশিটটি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৭৯, ৩২৩, ৩২৫, ৩০৪ ও ৩৪ ধারায় দাখিল করা হয়েছে।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি মাছুম বিল্লাহ ও জোবায়ের সুমনের ড্রাইভিং লাইসেন্স সঠিক থাকলেও তা ৪১ সিটের বাস চালানোর জন্য উপযুক্ত ছিল না। তা ছিল হালকা যান কার, জিপ ও মাইক্রোবাস চালানোর। দুর্ঘটনার সময় জব্দকৃত তিনটি বাসের কোনো প্রকার যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না।

চার্জশিটে আরো উল্লেখ করা হয়, বাসের চালক ও সহকারী নিয়োগের এখতিয়ার বাস মালিকের। এ মামলার আসামি চালক ও সহকারীদের লাইসেন্স ও বুদ্ধিমত্তা যাচাই ছাড়াই মালিক শাহদাত হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম নিয়োগ প্রদান করেন। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট অনুযায়ী আসামি মাছুম বিল্লাহ ও জোবায়ের বাস দুটি চালানোর উপযুক্ত নয়। অনুপযুক্ত চালক ও অনভিজ্ঞ সহকারী নিয়োগ দেওয়ার কারণে তারা নিজেদের ও মালিকের স্বার্থের জন্য বাস দুটি দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে রেষারেষি করে চালানোয় ঢাকা মেট্টো ব-১১-৭৬৫৭ বাসটি জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের ঢালের ডান দিকের রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ায়। আর ঢাকা মেট্টো ব-১১-৯২৯৭ বাসের চালক মাছুম ইচ্ছাকৃতভাবে ১৪/১৫ জন ছাত্রছাত্রীদের ওপর বাস উঠিয়ে দিয়ে ১৩/১৪ জনকে আহত করে। যাদের মধ্যে দুজন মারা যায়।

চার্জশিটে আরো বলা হয়, গত ২৯ জুলাই সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে আগারগাঁও তালতলা থেকে আব্দুল্লাহপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ বাসটি ছেড়ে আসে এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ বাসটি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০ বাসটি সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মিরপুর আনসার ক্যাম্প হতে বাড্ডা নতুন বাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। বাসগুলো ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন ইসিবি চত্ত্বরে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে একত্রিত হওয়ার পর ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০ পেছনে পড়ে যায়। অপর বাস দুটি পাল্লাপাল্লি ও রেষারেষি করে বেশি যাত্রী ও বেশি ভাড়া পাওয়ার আশায় দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে চালাতে শুরু করে। তারা জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের ঢাল থেকে প্রতিদিনের ন্যায় অপেক্ষমান যাত্রী ওঠানোর জন্য রেষারেষি অব্যাহত রাখে। এ কারণে বাস দুটি একে অপরকে চার বার ওভারটেক করে। বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে আসামি মাছুমের চালিত বাস ফ্লাইওভারের ঢালে রেলিং ও ওয়ালের সাথে ঘঁষা বা আঘাত লাগায়। ওই সময় যাত্রীরা বাসটি সাবধানে চালানোর জন্য চালক ও সহকারীদের অনুরোধ করেন। বেপরোয়া বাস চালানোর জন্য কেউ গুরুতর যখম ও মারা যেতে পারে তা জেনেও তারা দ্রুত গতিতে বাস চালাতে থাকে। একপর্যায়ে আসামি জোবায়ের কর্তৃক চালিত ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ বাসটি মাছুম বিল্লাহ চালিত ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ বাসটিকে পিছনে ফেলে ফ্লাইওভারের ঢালের সামনে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ডান দিকে রাস্তা ব্লক করে যাত্রী ওঠাতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে মাছুম বিল্লাহ চালিত বাসটি ডান দিক দিয়ে যেতে না পেরে ইচ্ছাকৃতভাবে বাম দিকে দিয়ে গিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষমান শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪/১৫ জন ছাত্রছাত্রীর ওপর তুলে দেয়। এতে ১৩/১৪ জন ছাত্রছাত্রী গুরুতর আহত হয়। তাদের মধ্যে উক্ত কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজীব মারা যায়। এছাড়া, এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র সোহেল রানা, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান চৌধুরী, মেহেদী হাসান জিসান, রাহাত, সজিব, জয়ন্তি, প্রথম বর্ষের ছাত্রী রুবাইয়া, এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তৃপ্তাসহ আরো কয়েকজন গুরুতর আহত হয়।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়