ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সফলতার পথে প্রধানমন্ত্রীর ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচি

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সফলতার পথে প্রধানমন্ত্রীর ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচি

হাসান মাহামুদ : দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ব্র্যান্ডিংয়ে যুক্ত করা হয় ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচি। প্রাথমিক পর্যায়ে ধারণা করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলে দেশে বিনিয়োগের খরা কাটবে। মাত্র দুই বছরের মাথায় এই কর্মসূচি দেশের বিনিয়োগে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ ১০টি উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- একটি বাড়ি একটি খামার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, আশ্রয়ন, শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম, সবার জন্য বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা কর্মসূচি।

বর্তমান সরকার দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি বিশেষ জোর দিচ্ছে। এজন্য বিনিয়োগ আকর্ষণে গত কয়েকবারের বাজেটে বিশেষ কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়। বিদ্যমান বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়িয়ে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এজন্য বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানেরও ঘোষণা রয়েছে। সরকারের এই মানসিকতার সাথে ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচি সম্পৃক্ত বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচির সফলতার লক্ষ্যে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ বিকাশ ও শিল্পায়ন ত্বরান্বিতকরণে কর রেয়াত, বিভিন্ন সেক্টরে ট্যাক্স হলিডে, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক মওকুফ প্রভৃতি।

‘বিনিয়োগ বিকাশ’ বহির্বিশ্বে এমনভাবে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে যাতে বিদেশীরা এ দেশে বিনিয়োগ এগিয়ে আসেন। এছাড়া, দেশী উদ্যোক্তাদেরও আস্থা ফিরিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর বাইরে দেশী ও বৈদেশিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) দেশে ও বিদেশে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, রোডশো ইত্যাদি আয়োজন করে আসছে।

এদিকে, বিডা সূত্র জানায়, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নিবন্ধন, লিয়াজোঁ, ব্রাঞ্চ ও রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসের অনুমোদন, বৈদেশী কর্মীদের কর্মানুমতি প্রদান, প্রাক অবকাঠামোগত সেবা প্রদান সহজতরকরণ, আইআরসি জারির সুপারিশসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান এবং অনলাইনের মাধ্যমে সকল ধরনের সেবা স্বল্প সময়ে প্রদান করছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মুখ্য সচিব ও এসডিজির প্রধান সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছে দিতে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন সেসবের মধ্যে বিশেষ ১০টি উদ্যোগ অন্যতম। এই ১০টি বিশেষ উদ্যোগের বিভিন্ন দিক এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের সাথে সম্পৃক্ত। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালে সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতোমধ্যে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগের প্রধান বাধাগুলো কী কী, তা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব বাধা দূর করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় শিল্পনীতিও বিনিয়োগবান্ধব করা হয়েছে। এছাড়া, ভারত, চীন, জাপান ও কোরিয়ার বিনিয়োগ বাড়াতে ওই দেশগুলোর জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল সংরক্ষণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশি কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। এছাড়া দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ৩০টির বেশি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী ১৩ বছরে (২০১৬ সালে ঘোষণা ছিল ১৫ বছরের) সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলারও ঘোষণা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে এবং প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ইচ্ছায় এসব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, যা ‘শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ’ নামে পরিচিত। এসব কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন ও ব্র্যান্ডিং সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

সূত্র জানায়, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকার ও বিভিন্ন গণমুখী উদ্যোগের মধ্যে এই ১০টি ক্ষেত্রকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতগুলোতে অগ্রাধিকার:
সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বরাবরের মতো চলতি বাজেটেও প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতসমূহকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে, ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো খাত বিদ্যুত, জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ, বন্দর উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইসিটি খাতে অধিকতর সম্পদ সঞ্চালন করা। ঘোষিত রূপকল্প অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। এছাড়া, পরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কসমূহকে চার লেনে উন্নীতকরণের চলমান কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার পদক্ষেপ রয়েছে।

ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিও জোর:
জাতীয় অর্থনীতির বিকাশে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ প্রভৃতির পাশাপাশি বিশেষ এই কর্মসূচিতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিও জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রমপুঞ্জিভূত মূলধন বাড়ানো।

গত ১০ বছরে মোট বিনিয়োগ বেড়ে জিডিপির ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ২৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হলেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২১ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যে সীমিত রয়েছে। এই বাস্তবতায় সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতা দূর করে মধ্য মেয়াদে (২০১৬-১৮) তা জিডিপির ২৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময়ে সরকারি বিনিয়োগও জিডিপির ৭ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মুখ্য সচিব ও এসডিজির প্রধান সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচির আওতাধীন ১০টি কর্মসূচিই দেশের উন্নয়নে এবং এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে, যেমন: সামাজিক নিরাপত্তা দারিদ্র বিমোচনে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। নারীর ক্ষমতায়ন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রশংসিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা ও সংস্থা যুক্ত হওয়ায় উন্নয়ন কার্যক্রম ও সমস্যার সমাধান দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা ও সংস্থার মধ্যে কর্মসূচি বাস্তবায়নের চুক্তি সম্পাদন হওয়ায় অনেক কর্মকাণ্ড দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলছে। আগামীতে দেশের প্রতিটি গ্রামে এই প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তি পর্যায়ের মূল্যায়নও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ অক্টোবর ২০১৮/হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়