ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৩৫০০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি : ১০ ব্যাংকের নথি দুদকে

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ৩ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৩৫০০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি  : ১০ ব্যাংকের নথি দুদকে

এম এ রহমান মাসুম : দেশের ১৬টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানে ১০টি ব্যাংকের নথিপত্র সংগ্রহ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

চট্টগ্রামভিত্তিক মেসার্স এসএ গ্রুপের সত্ত্বাধিকারী শাহাবুদ্দীন আলমের বিরুদ্ধে ওঠা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে চলতি বছরের আগস্ট থেকে অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। অনুসন্ধান পর্যায়ে ১৬টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টি ব্যাংকের নথিপত্র দুদক হাতে পেয়েছে বলে সংস্থাটির সূত্রে জানা গেছে।

যে সকল ব্যাংকের নথিপত্র দুদকে এসেছে তা হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের (এফএসআইবিএল) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা, ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা, ব্যাংক এশিয়ার সিডিএ শাখা, ঢাকা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা, জনতা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা, রূপালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা, এনসিসি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা ও অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘি শাখার ঋণ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে জানান, চলতি বছরের আগস্ট মাসে ওই অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র তলব করে ওই মাসে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। গত দুই মাসে পর্যায়ক্রমে নথিপত্রগুলো দুদকে এসেছে। বর্তমানে নথিপত্রগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে এস এ গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তলব করে বক্তব্য নেওয়া হবে। এছাড়া শাহাবুদ্দিন আলমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও অনুসন্ধান করছে দুদক।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনুসন্ধান পর্যায়ে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন।

তবে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনুসন্ধান পর্যায়ে নথিপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। নথিপত্র যাচাই-বাচাই শেষে অনুসন্ধান কর্মকর্তার সুপারিশক্রমে দুদক আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে ঋণের নামে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলাও সাহাবুদ্দীন আলম এবং তার স্ত্রী ও এস এ গ্রুপের মেসার্স লায়লা বনস্পতি প্রোডাক্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিসেস ইয়াসমিন আলমসহ ৭ জনকে আসামি করে গত ২৮ অক্টোবর মামলা করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক শামছুল আলম বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
অন্যদিকে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে ব্যাংক এশিয়ার করা এক মামলায় ১৭ অক্টোবর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে গ্রেপ্তার হন এসএ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলম। চট্টগ্রামের ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের সিডিএ অ্যাভিনিউ শাখা থেকে তাঁর নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৭০৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। যে অভিযোগে মামলা দায়ের করে ব্যাংক এশিয়া।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এসএ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলমের মোট ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬২২ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯ টাকা। যদিও দুদক জাল-জালিয়াতি ও ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে অপর্যাপ্ত জামানতের বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। দুদকের উপপরিচালক ঋত্বিক সাহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক অনুসন্ধান দল এ দায়িত্ব পালন করছে। অনুসন্ধান দলের অন্য দুই সদস্য হলেন- দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এসএ গ্রুপের ঋণ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের (এফএসআইবিএল) আগ্রাবাদ শাখায় প্রতিষ্ঠানটির ঋণ রয়েছে ৪৮১ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার পাওনা রয়েছে ৪২৩ কোটি টাকা। ৩৩৮ কোটি টাকা পাবে ব্যাংক এশিয়ার সিডিএ শাখা। এছাড়া ঢাকা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ২৪৭ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ২৮৮ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ২২১ কোটি, জনতা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ২০০ কোটি, রূপালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ১৫১ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘি শাখায় ১১৮ কোটি, কৃষি ব্যাংকের ষোলশহর শাখায় ১০০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় সাড়ে ৫৩ কোটি, উত্তরা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ৫২ কোটি, প্রাইম লিজিংয়ের ৩৬ কোটি, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ১৪ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এর বাইরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির কাছেও বড় অংকের ঋণ রয়েছে এসএ গ্রুপের।

এসএ গ্রুপের অধীনে তেল পরিশোধন, খাদ্য পণ্য, দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য, পানীয়, সিমেন্ট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারে এই গ্রুপের পরিচিত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে গোয়ালিনি কনডেন্সড মিল্ক, গুঁড়ো দুধ, মুসকান ড্রিংকিং ওয়াটার, সয়াবিন তেল, ঘি, আটা, ময়দা ইত্যাদি। গত কয়েক বছরে এসএ গ্রুপের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে শতাধিক মামলা করেছে পাওনাদার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এগুলোর বেশির ভাগই চেক ও অর্থঋণ সংক্রান্ত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ নভেম্বর ২০১৮/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়