ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

অগ্রযাত্রার এক দশক-১

ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি

কেএমএ হাসনাত : দারিদ্র্য ও বৈষম্যহীন সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অগণতান্ত্রিক পরিবেশ থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের পাশাপাশি দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে নিরলস প্রচেষ্টার ফসল আজকের বাংলাদেশ।

‘রূপকল্প ২০২১’-কে সামনে রেখে ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের অভিযাত্রা। আর এই অভিযাত্রার অন্যতম অংশীদার ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে। তিনি তাকে আশাহত করেননি। তার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি অনেক চড়াই-উৎরাই  পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে কিছু কিছু ব্যর্থতার কথা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। বিশ্বজুড়েই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এসব ব্যর্থতা অন্যান্য সফলতার কাছে ছাপিয়ে গেছে।

সরকার পরিকল্পিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০০৭ থেকে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার দীর্ঘায়িত প্রভাব ও সময়ে সময়ে উদ্ভূত দেশের অভ্যন্তরীণ  অস্থিরতাকে প্রজ্ঞা ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। দেশে ধারাবাহিকভাবে ও উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এবং দ্রুততার সঙ্গে দারিদ্র্য কমেছে।

২০২১ সালে পূর্ণ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশতক। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীতে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে যাত্র শুরু করেছিল বর্তমান সরকার। আর এই অগ্রযাত্রার অন্যতম অংশীদার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

রাষ্ট্রের সার্বিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্থ বিভাগের ওপর ন্যস্ত। সরকারের আর্থিক বিধিবিধান প্রণয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলীও সম্পাদন করে থাকে অর্থ বিভাগ। এছাড়াও সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করে অর্থ বিভাগ।

দেশের অর্থনীতিতে গত এক দশকে অর্থ বিভাগের অবদানের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কথা। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় রাজস্ব ও মুদ্রানীতি এবং মুদ্রা বিনিময় হার নীতির সমন্বয় সাধনের কাজটি করে অর্থ বিভাগ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মুল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ, সঞ্চয়, সরকারি আয়-ব্যয়, ঘাটতি, আমদানি-রপ্তানি, প্রবাস আয়, মুদ্রা সরবাহ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইত্যাকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকসমূহের প্রক্ষেপণসহ মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রস্তুত করা হয়।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গত দশ বছর সরকারের অর্জিত সাফল্যই প্রমাণ  করে আর্থিক খাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সঠিক ছিল। ২০০৯-২০১৮ সময়ে দেশে ধারাবাহিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার বজায় ছিল। প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা একই সঙ্গে বজায় রাখার জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও উৎকর্ষ জরুরি। বিবেচ্য সময়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রধান নিদের্শক মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, বাজেট ঘাটতি এবং সরকারি ঋণ/জিডিপি অনুপাতের অবস্থান ছিল বেশ সন্তোষজনক।

মুদ্রাস্ফীতি ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের ৭ দশমিক ২ এবং ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের ১২ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে সর্বশেষ ২০০৮ সালের আগস্ট সময়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) হয়েছে, সুদের হার ব্যবধান ২০০৫-২০০ অর্থবছরের ৫ দশমিক ৩৮ থেকে ২০১৭-২০১৮ শেষে ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমেছে। বাজেট ঘাটতি প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে ছিল। ঋণ/জিডিপি অনুপাত ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ক্রমশ কমে ২০১-২০১৭ সময়ে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকের অবস্থান:

অর্থবছর

জিডিপি প্রবৃদ্ধি

মূল্যস্ফীতি

সুদের হারের ব্যবধান

বাজেট ঘাটতি (জিডিপি’রঅনুপাত)

 ঋণ/জিডিপি অনুপাত

২০০৫-২০০৬

৬.৬৭

৭.২*

৫.৩৮

৩.১

৪৩.৫

২০০৬-২০০৭

৭.০৬

৯.৪

৫.৯৩

৩.৩

৪১.৬

২০০৭-২০০৮

৬.০১

১২.৩

৫.৩৪

৫.০

৪০.৬

২০০৮-২০০৯

৫.০৫

৭.৬

৪.৮৬

৪.০

৩৯.৩

২০০৯-২০১০

৫.৫৭

৬.৮

৫.৩০

৩.২

৩৭.৪

২০১০-২০১১

৬.৪৬

১০.৯

৫.১৫

৩.৮

৩৮.০

২০১১-২০১২

৬.৫২

৮.৭

৫.৬০

৩.৬

৩৭.৪

২০১২-২০১৩

৬.০১

৬.৮

৫.১৩

৩.৯

৩৬.৬

২০১৩-২০১৪

৬.০

৭.৪

৫.৩১

৩.৬

৩৫.০

২০১৪-২০১৫

৬.৫৫

৬.৪

৪.৮৭

৪.১

৩২.৩

২০১৫-২০১৬

৭.১১

৫.৯

৪.৮৫

৩.৯

৩১.৫

২০১৬-২০১৭

৭.২৮

৫.৪

৪.২

৩.৪

৩০.৮

২০১৭-২০১৮*

৭.৮৬

৫.৮

৪.৪৫

৫.০*

২৯.৮*


* (স্মারণীতে ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির ভিত্তি বছর ১৯৯৫-১৯৯৬ ধরা হয়েছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব এবং একই অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ও ঋণ/জিডিপি অনুপাত সংশোধিত বাজেটের হিসাব দেখানো হয়েছে )

ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো খাতে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ দিয়ে অর্থ বিভাগ একদিকে যেমন প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করেছে অন্যদিকে তেমনি কৃষি খাতে প্রণোদনা ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি  খাতে ভর্তুকি দেওয়ার মাধ্যমে খাদ্যশস্যেও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রাজস্ব ও মুদ্রানীতির যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। একইভাবে, সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯’ এর যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কেবল উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহের জন্য ঋণ গ্রহণ ও বাজেট ঘাটতি আবশ্যিকভাবে জিডিপির পাঁচ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার বিষয়ে সুদৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছে অর্থ বিভাগ। ফলে জিডিপির অনুপাতে সরকারি ঋণের পরিমাণ ক্রমশ কমে এসেছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ নভেম্বর ২০১৮/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়