ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উৎসে কর যথাযথভাবে জমা না হওয়ায় উদ্বিগ্ন এনবিআর

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উৎসে কর যথাযথভাবে জমা না হওয়ায় উদ্বিগ্ন এনবিআর

এম এ রহমান মাসুম : সুনির্দিষ্ট খাত থেকে উৎসে আয়কর কর্তন, সংগ্রহ ও সংগৃহীত কর যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

একই সঙ্গে বিভিন্ন সেবা গ্রহণের বিপরীতে বিল প্রদানকালে উৎসে কর কর্তন না করার বিষয়টি রাজস্ব ব্যবস্থায় আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে বলেও মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি এনবিআরের কর আইন শাখার একটি চিঠির সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে। এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কর আইন-১) সুমন দাস সই করা চিঠির সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। যা ইতিমধ্যে দেশের সকল কর অঞ্চলের অফিসগুলোতে নির্দেশনা দিয়ে পাঠানো হয়েছে।

গত ৪ ডিসেম্বর এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ সপ্তম অধ্যায়ে বর্ণিত সুনির্দিষ্ট খাতসমূহ থেকে উৎসে আয়কর কর্তন ও সংগ্রহ এবং সংগৃহীত কর সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, কতিপয় উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে উৎসে কর কর্তন করেনি এবং অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সরকারি কোষাগারে তা জমা প্রদান করা হয়নি। বিশেষকরে ঠিকাদার এবং সরবরাহকরীগণকে বিল প্রদানকালে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫২ ধারা ও ১৯৮৪ সালের আয়কর বিধিমালার ১৬ বিধি অনুসারে বিভিন্ন সেবা গ্রহণের বিপরীতে সেবা প্রদানকারীরা বিল প্রদানকালে উৎসে কর কর্তন না করার বিষয়টি রাজস্ব ব্যবস্থায় আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

চিঠিতে বলা হয়, এ অবস্থায় উৎসে কর্তন না করার কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আয়কর অধ্যাদেশের ৫৭ ধারা অনুযায়ী খেলাপী করদাতা হিসেবে গণ্য করার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে কর্তনযোগ্য সুদসহ সমুদয় কর আদায় করতে হবে।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, আয়কর বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাকে উৎসে কর কর্তনসংক্রান্ত আইনগত বিধানসমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। বিশেষভাবে আয়কর অধ্যাদেশের ৫৮(৩) ধারা ও আয়কর বিধিমালার ১৮ (৭) অনুযায়ী নির্ধারিত ছকে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতি মাসে উৎসে কর কর্তনের বিস্তারিত বিবরণী সংশ্লিষ্ট আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমাদের মোট আয়কর রাজস্বের ৫০ শতাংশ উৎসে কর থেকে আসে। এ জন্য উৎসে কর সঠিকভাবে কর্তন করা হচ্ছে কিনা কিংবা কর্তন হলেও সময়মতো জমা দেওয়া হচ্ছে কিনা এসব বিষয়ে মনিটারিং বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি কর কর্মকর্তারাও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে থেকে উৎসে কর ঠিকমতো আদায় করছে কিনা এ বিষয়টিও নজরে আনা প্রয়োজন।

প্রতি অর্থবছরেই মোট আয়করের ৫৫-৬০ শতাংশ অর্থ উৎসে কর হিসেবে আদায় করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৬৪ হাজার টাকা আয়কর আদায় হয়। এর মধ্যে শুধু উৎসে কর আদায় হয়েছে ৩৩ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা, যা মোট করের ৫৩ শতাংশ। কয়েক বছরের গড় আদায় হিসাব করলে উৎসে করের অংশ দাঁড়ায় প্রায় ৬০ শতাংশ।

এনবিআর সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৩ হাজার ২০৭ কোটি টাকা আয়কর আদায় হয়। যেখানে শুধু উৎসে করের হার ছিল প্রায় ৫৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৭ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা আদায় হয়। যেখানে উৎসে কর আদায় হয় ২৭ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা, যা মোট আয়করের ৫৯ শতাংশ। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৬০ শতাংশ।

বর্তমানে ৫৬টি খাত থেকে উৎসে কর আদায় করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, ঠিকাদারের বিল, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের আমানতের সুদ আয়, জমি কেনাবেচা, সংবাদপত্র, রেডিও-টিভিতে প্রচারিত বিজ্ঞাপন, পেশাগত কারিগরি সেবাদানকারী অথবা কারিগরি সহায়তা ফি, ক্যাটারিং সার্ভিস, ক্লিনিং সার্ভিস, কালেকশন অ্যান্ড রিকভারি সার্ভিস, প্রাইভেট সিকিউরিটি সার্ভিস, ম্যানপাওয়ার সাপ্লাই সার্ভিস, ক্রিয়েটিভ মিডিয়া সার্ভিস, পাবলিক রিলেশন সার্ভিস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, ট্রেনিং-ওয়ার্কশপ ফি, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কারিগরি সেবা প্রদানকারী বা সেবা সরবরাহকারী এজেন্টের ফি, ক্রেডিট রেটিং সেবা ফি, মোটর গ্যারেজ বা ওয়ার্কশপের ফি, বেসরকারি কনটেইনার পোর্ট বা ডকইয়ার্ড সেবার ফি, শিপিং এজেন্সি কমিশনের বিপরীতে নির্ধারিত হারে উৎসে কর আদায় করা হয়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ডিসেম্বর ২০১৮/এম এ রহমান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়