ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সরকারে নাকি বিরোধী দলে, জাপায় মতানৈক্য

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ২ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকারে নাকি বিরোধী দলে, জাপায় মতানৈক্য

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : একাদশ জাতীয় সংসদে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি সরকারে নাকি বিরোধী দলে থাকবে তা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে।

বিরোধী দলে নয়, মহাজোটের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারে থাকতে চান জাতীয় পার্টির অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শীর্ষ নেতা। তবে কেউ কেউ চান গতবারের মতো সরকারে ও বিরোধী দলে দুটোতেই থাকুক জাপা। আবার দলের একটি অংশ চায়, জাপা শুধু বিরোধী দলেই থাকুক।

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যবৃন্দ ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় দলটির শীর্ষ নেতারা এভাবেই মত দেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে ঢাকা-৪ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, শেখ হাসিনা আর এরশাদের নেতৃত্বে মহাজোট হয়েছে। আমরা মহাজোটেরই অংশ। মহাজোটের কারণেই আমরা এমপি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমরা সরকারে না থাকলে এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বিষয়টি উপলদ্ধি করতে হবে। আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না।

তিনি পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের নির্বাচনপূর্ব বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে জাতীয় পার্টিকে সরকারে থাকার দাবি জানান।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, আদেলুর রহমান, পনিরউদ্দিন আহমেদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য গতবারের মতো বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারে থাকার পক্ষে মত দেন।

প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান বলেন, মহাজোট যেহেতু সরকারই সৃষ্টি করেছে তাই মহাজোটের মাধ্যমে সরকারে থাকাই উচিত।

শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, আমি মনে করি, আমাদের গতবারের মতো সরকারের সাথে থাকা উচিত। তা না হলে আমরা টিকে থাকতে পারব না।

তবে জাতীয় পার্টিকে যেকোনো একটি অবস্থান নেওয়ার পক্ষে মত দেন অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্য। তারা বলেন, হয় সরকারে, না হয় বিরোধী দলে। গতবারের মতো উভয় কূলে থাকলে দেশবাসীর সমালোচনা শুনতে হবে।

প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি ইউ তাজ রহমান বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক হতে হবে। হয় সরাসরি সরকারে, না হয় বিরোধী দলে। বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিত্ব নেওয়া ঠিক হবে না।

একই ধরনের মত দিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।

নির্বাচনের আগে পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা ও দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ একাদশ সংসদে সরকারে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বলছিলেন, জাপা আর বিরোধী দলে থাকতে চায় না।

মহাজোটের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে জিতে আসা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে কমিটি করার দাবি জানান। সভায় কাজী ফিরোজ রশিদ উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি।

এদিকে, একাদশ সংসদ নির্বাচন শেষে নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যৌথ বৈঠকে উপস্থিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন ঢাকা-১ দোহার নবাবগঞ্জ আসনে বিএনপির সমর্থনপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলাম। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও তিনি এবার ওই আসনে মহাজোট ও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। একপর্যায়ে নির্বাচনে তাকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থন দিলে ধরে নেওয়া হয়, তিনি আর জাতীয় পার্টিতে ফিরছেন না। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে বুধবার যৌথসভায় হাজির হন তিনি। তার উপস্থিতি বৈঠকের নেতাদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। দলের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে জোরালো বক্তব্যও রাখেন তিনি।

সালমা ইসলাম বলেন, বিগত ১০ বছরে এ পার্টির জন্য আমি কী করি নাই। অনেক শ্রম দিয়েছি। কিন্তু দল আমাকে বঞ্চিত করেছে। আমার পক্ষে অবস্থান নিলে আমি এমপি হতাম। জাপাকে আরো একটি আসন উপহার দিতে পারতাম। আমি অন্য দলের প্রতীকে যেন নির্বাচন করি, সে অফার ছিলো, আমি যাইনি।

একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির সত্যিকারের বিরোধী দল হওয়া উচিত বলেও মত দেন সালমা ইসলাম।

জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে নবনির্বাচিত ১৪ জন এমপিসহ ৩৬ জন উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত ছিলেন না পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, প্রাক্তন দুই মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। এছাড়া, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন না।

বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, পার্টির সংসদীয় দলের সদস্যরাই মহাজোটের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সংসদে দলের ভূমিকা নির্ধারণ করবেন।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। দলকে আরো শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।

যৌথসভা পরিচালনা করেন মহাসচিব মো. মশিউর রহমান রাঙ্গা। সভায় উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য- কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, আবুল কাশেম, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, ফখরুল ইমাম এমপি, সালমা ইসলাম, অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, নূর-ই হাসনা লিলি চৌধূরী, হাবিবুর রহমান, এস এম ফয়সল চিশতী, আজম খান, এ টি ইউ তাজ রহমান, আতিকুর রহমান আতিক, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান- শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, কেন্দ্রীয় নেতা- পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ এমপি, পনির উদ্দিন আহমেদ এমপি, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, রানা মোহাম্মদ সোহেল প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জানুয়ারি ২০১৯/নঈমুদ্দীন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়