ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মাদক ব্যবহার : ‘বাতির নিচেই অন্ধকার’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাদক ব্যবহার : ‘বাতির নিচেই অন্ধকার’

আসাদ আল মাহমুদ : দেশে একটি অন্যতম সমস্যার কারণ হয়ে দাঁ‌ড়িয়েছে মাদকাসক্তি।  নানা রকম প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ক্রমেই বাড়ছে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা।  সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, রাজধানীতে যেখানে মাদক নির্মূলের পদক্ষেপ বেশি নেওয়া হয়, পরিকল্পনা করা হয়, সেই রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগেই মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি।  এ যেন বাতির নিচেই অন্ধকার।

ঢাকা বিভাগে ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ মাদকে আসক্ত। চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ১৩ দশমিক ৯০, রাজশাহী বিভাগে ৭ দশমিক ১০, সিলেট বিভাগে ৬ দশমিক ৯০, খুলনা বিভাগে ৬ দশমিক ২০ । বরিশাল বিভাগে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মাদকাসক্তের সংখ্যা নির্ধারণে দেশে প্রথমবারের মতো একটি সমীক্ষা সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সমীক্ষা চালানো হয়।

দেশের ৭টি বিভাগের ৭ বছরের ঊর্ধ্বে ১৯ হাজার ৬৬২ জনের ওপর বাংলাদেশে মাদক ব্যবহারের প্রকোপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের ওপর সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. ফারুক আলমের নেতৃত্বে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বছরব্যাপী পরিচালিত এই সমীক্ষার তত্ত্বাবধান করেন।

সমীক্ষা অনুযায়ী, মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা শ্রমিকদের মধ্যে বেশি। শ্রমিকদের মধ্যে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যবসায়ী ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, কৃষক ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, চাকরিজীবীদের মধ্যে মাদক সেবন করেন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক আলম বলেন, ১৯ হাজার ৬৬২ জনের কাছ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত প্রশ্নমালা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের অ্যালকোহল, স্মোকিং অ্যান্ড সাবসট্যান্স স্ক্রিনিং টেস্ট (এএসএসআইএসটি) করা হয়েছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন,  অভিভাবকদের সম্মতি নিয়ে আসক্তদের প্রশ্ন ও পরীক্ষা করা হয়। সমীক্ষা অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে আর্থসামাজিক এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৩৩টি প্রশ্নের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হয়। এরপর এএসএসআইএসটির মধ্যে কোন কোন মাদক কত দিন ধরে সেবন করা হচ্ছে, সেই তথ্য নেওয়া হয়। সব শেষে মানসিক রোগের উপস্থিতি আছে কি না, এর ওপর ডিএমএস ম্যাথডে ২৪টি সেলফ রিপোর্টিং প্রশ্ন করে তা নির্ণয় করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে সমীক্ষাটি চালানোর জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। এর আগে মাদক সেবনকারীর সংখ্যা কোনো সমীক্ষায় পাওয়া যায়নি। তারাই প্রথমবারের মতো এ ধরনের সমীক্ষা চালিয়েছে। আমরাও (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর) মাদক সেবনকারী বা গ্রহণকারীদের সংখ্যাসহ অন্যান্য বিষয়ের সমীক্ষা চালাব। পরিসংখ্যান ব্যুরোর কারিগরি সহযোগিতায় চলতি বছর থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে।

সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, মাদকের প্রকার অনুসারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গাঁজা ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ, অ্যালকোহল ২৭ দশমিক ৫০, ইয়াবা ১৫ দশমিক ২০, অপিয়ড ৫ দশমিক ৩০ এবং ঘুমের ওষুধ ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। পুরুষের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারীদের মাঝে দশমিক ৬ শতাংশ। পেশা অনুসারে মাদক ব্যবহারকারীর হার শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি-এটি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে বেকার জনগোষ্ঠী, যা ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যবসায়ী ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, কৃষক ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং চাকরিজীবীদের মধ্যে মাদক সেবন করেন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসারে বেশি আয়ের মানুষের মধ্যে মাদক সেবনকারী বেশি। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭ হাজার ৫০০ টাকার নিচে মাসিক খরচকারীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী ৩ দশমিক ২ শতাংশ, ৭ হাজার ৫০১ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক খরচকারীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী ২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ১৫ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে মাসিক খরচকারীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৬০ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ২৫ শতাংশ অ্যালকোহল গ্রহণ করে থাকে।

ধূমপান, গুল, অন্যান্য উপায়ে তামাকপাতা গ্রহণকারী সাত বছরের ঊর্ধ্বে মোট জনসংখ্যার ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে জনগণের মধ্যে দেশে মানসিক রোগের প্রকোপ ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগের প্রকোপ ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

মাদক সেবনকারীদের ওপর সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বিভিন্ন মানসিক রোগের প্রকোপ থাকে। এর মধ্যে মারাত্মক অবসাদে আক্রান্ত হয় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, রোগ নিয়ে চিন্তায় থাকে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, সব সময় চিন্তাগ্রস্ত থাকে ২ শতাংশ, সিজোফ্রেনিয়ায় শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ আক্রান্ত থাকে।

মাদক সেবনের কারণে শিশু-কিশোরদের মধ্যে হঠাৎ করে উত্তেজিত হওয়া, রাতের বেলা বিছানায় প্রসাব করে দেওয়ার মতো বিভিন্ন মানসিক রোগের প্রকোপ থাকে। কোয়ালিটেটিভ রিসার্চের ফলাফলে মাদকাসক্তির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে যথাক্রমে কৌতূহল, অসৎ সঙ্গ, মাদকের সহজলভ্যতা, অভিভাবকদের নজরদারির অভাব এবং ত্রুটিপূর্ণ সন্তান প্রতিপালনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জানুয়ারি ২০১৯/আসাদ/হাসান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়