ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বহুতল ভবন নিয়ে শঙ্কায় নগরবাসী

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০১, ২ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বহুতল ভবন নিয়ে শঙ্কায় নগরবাসী

আসাদ আল মাহমুদ : রাজধানীর অধিকাংশ বহুতল ভবন যেন মৃত্যুকুপ। অনেক ভবনেই নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হলে হলেও ভবন মালিকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। আর এ কারণে রাজধানীতে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এর ফলে বহুতল ভবন নিয়ে শঙ্কায় আছে নগরবাসী।

নগরীতে একের পর এক বহুতল ভবন বাড়ছে। অনেক ভবনের নিচে মার্কেট, উপরে আবাসন (ফ্ল্যাটবাড়ি) করা হচ্ছে। কিন্তু বিধি মেনে ভবন নির্মাণ না করায় দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০১৬ সালে ২১ আগস্ট  ববসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে আগুন  লাগে । এর আগে ২০০৯ সালে সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। ঐ অগ্নিকাণ্ডে সাত জন নিহত হয়।

২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) ভবনে আগুন লাগে। এর আগে ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ভবনে আগুন লেগে এনটিভি, আরটিভি ও আমার দেশসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় আগুনে তিনজনের মৃত্যু হয়।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ আগুনে নিহত হয় ২৬ জন। একদিন পরেই গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে আগুনে প্রায় দুইশ দোকান পুড়ে যায়।

রাজধানীর প্রায় ৭০ শতাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যব্স্থা নেই। মহানগরীর যেসব ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তার একটি তালিকা করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এতে রাজধানীর ১০৬৯  প্রতিষ্ঠান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২০,৫৮৮টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে অধিদপ্তর। ফায়ার সার্ভিসের খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ওই তালিকার মধ্যে রয়েছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ, হাবিবুল্লাবাহার কলেজ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, গুলশান টাওয়ার, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, পলওয়েল সুপার মার্কেট, মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট।

ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে এক মাসের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়। এর পর ২০১৮ সালেও এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। কয়েক দফায় নোটিশ দিয়ে ভবন মালিকদের সতর্ক করা হলেও অনেক ভবনেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা করেনি। ২০১৭ সালে ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগার পর কর্তৃপক্ষকে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখার জন্য চারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, জরুরি বহির্নিগমন ব্যবস্থা রয়েছে রাজধানীর ৫.৭১ শতাংশ ভবনে, ভবনে আগুন লাগলে দ্রুত উদ্ধার করে আনার  সক্ষমতা আছে ২.৮৬ শতাংশ  ভবনে, ফায়ার লিফট রয়েছে ১১.৪৩ শতাংশ ভবনে। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা আছে ৫.৪৩ শতাংশ ভবনে,  হেলিকপ্টার অবতরণের ব্যবস্থা ১৫.২৪ শতাংশ ভবনে, ৫০ হাজার গ্যালনের নিচে পানি ধারণ করে রাখতে পারে ৩১.৪৩ শতাংশ ভবনে। ফায়ার সার্ভিসের জন্য ভবনগুলোতে আলাদা পানি মজুদ রাখার নিয়ম থাকলেও রাজধানীতে হাতে গোনা কিছু ভবন ছাড়া অন্যগুলোতে আলাদা পানির ব্যবস্থা নেই। আর যে পানি আছে তা নিজেরা ব্যবহার করছে।

এবিষয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব রাইজিংবিডিকে বলেন, যেসব ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা  নেই সেখানে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে  নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।  দরকার হলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর সার্ভিস ( গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ) বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের  পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ রাইজিংবিডিকে বলেন, রাজধানীর অনেক ভবনেই অগ্নিনির্বাপক নেই। ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনকে চিঠি দেওয়া হলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।  সমস্যা সমাধানে রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনকে নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। আশাকরি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, সারা দেশে বর্তমানে ৩০২ টি ফায়ার স্টেশন চালু রয়েছে এবং জনবল  ৮হাজার ৩’শ। অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে  ১৯৮ কোটি টাকার সরঞ্জাম ক্রয় কার্যক্রম চলমান আছে। এ ছাড়া চীন সরকারের অনুদানে ১৭৪ কোটি টাকার অগ্নিনির্বাপনী ও উদ্ধার সরঞ্জাম ইতোমধ্যে গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে ২২ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্পেশাল ওয়াটার টেন্ডার, ১২ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফোম টেন্ডার, ১০০টি টোয়িং ভেহিক্যাল, ১৫০টি  টু-হুইলার ওয়াটার মিস্ট, ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এসব অগ্নিনির্বাপনী ও উদ্ধার সরঞ্জাম এ বিভাগের কর্মক্ষমতা অধিকতর শক্তিশালী হবে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ এপ্রিল ২০১৯/আসাদ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়