ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তারেক-জোবায়দার অ্যাকাউন্ট জব্দ : আইনজীবীদের ভিন্ন ভিন্ন মত

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ২০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তারেক-জোবায়দার অ্যাকাউন্ট জব্দ : আইনজীবীদের ভিন্ন ভিন্ন মত

মেহেদী হাসান ডালিম : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের লন্ডনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের যে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত, তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন আইনজ্ঞরা।  দুর্নীতি দমন কমিশনের শীর্ষ আইনজীবী আদালতের ওই আদেশকে সঠিক ও আইনসম্মত বললেও বিএনপির শীর্ষ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতের আদেশটিকে এখতিয়ার বহির্ভূত বলে মনে করেন।

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪/১ উপধারায় বলা আছে, আদালত প্রয়োজন মনে করলে কোনো আসামির দেশে বা বিদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিতে পারবেন। ’ এর আগে আদালত হংকংয়ে মোরশেদ খানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন দুদকের এ শীর্ষ আইনজীবী।

অপরদিকে, বিএনপির শীর্ষ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আদালত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের লন্ডনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন বলে শুনেছি। আমি মনে করি আদালত এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে এ আদেশ দিয়েছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার অংশ এটা। এটা হাস্যকর। এখানকার আদালত ফরেন কোনো অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিতে পারেন না।’

রোববার এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন বলে উল্লেখ করেন খন্দকার মাহবুব।

বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশে যুক্তরাজ্যের কোনো ব্যাংক হিসাব জব্দ করা সম্ভব কি না, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে এটা সম্ভব নয়। এখন নতুন কোনো আয়োজনে যদি সরকার যায় তাহলে সেটা নতুন কিছু হবে। শুধু ক্রিমিনাল মামলায় ডিফাইন করা আছে, সেকশন ১৮৮-এ বাংলাদেশে যেটি অপরাধ হিসেবে ধরা হয়, সেটা যদি দেশের বাইরেও কেউ করেন তাহলে সেটা অপরাধ হিসেবে ধরে বিচার করা সম্ভব। অর্থনৈতিক ডিলিং বা অর্থনৈতিক ক্রাইমের বিষয়ে এটি নয়। এখানে অ্যাকাউন্ট জব্দ করার কথা বলছে। লিগ্যালি যদি ট্রানজেকশন হয় তাহলে ওরা শুনবে কেন? আর ওখানে আনডিসক্লোজড মানি ট্রানজেকশন হতে পারারও সুযোগ নেই।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের ব্রিটেনের স্যানট্যানডার ব্যাংকের তিনটি হিসাব জব্দের (ফ্রিজ) আদেশ দেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের এ সংক্রান্ত একটি পারমিশন মামলার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।

ফ্রিজ করার আদেশ হওয়া তিনটি ব্যাংক হিসাবই ব্রিটেনের স্যানট্যানডার ব্যাংক ইউকের। পারমিশন মামলার আবেদনে বলা হয়, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং এবং অর্থপাচারপূর্বক বিদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধানকালে দুদক কর্তৃক তদন্ত টিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রিটেনের স্যানট্যানডার ব্যাংক ইউকে পরিচালিত হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালট্যান্ট লিমিডেট শীর্ষক প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে তারেক রহমান এবং জোবায়দা রহমানের তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৫৯ হাজার ৩৪১ দশমিক ৯৩ ব্রিটিশ পাউন্ড স্থানান্তরের এফআইইউ, ইউকের নির্দেশে আটক আছে। উক্ত অর্থ তারা অন্যত্র হস্তান্তর বা রূপান্তর করার চেষ্টা করছেন। তাই বর্ণিত অর্থের বিষয়ে এক্ষুণি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৭ ধারা মতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৪ ধারা মতে অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।

আদেশের পর দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পারমিশন মামলার আদেশটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্রিটেনের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে পাঠানো হবে। সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পাঠিয়ে আদেশ কার্যকর করবেন।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৯/মেহেদী/সাইফুল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়