ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নিজ দপ্তরে মামলা, বিশেষ ক্ষমতাসহ আসছে সংশোধিত বিধিমালা

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৯ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিজ দপ্তরে মামলা, বিশেষ ক্ষমতাসহ আসছে সংশোধিত বিধিমালা

এম রহমান : নিজ দপ্তরে মামলা দায়ের, সরাসরি বিশেষ জজ আদালতে চার্জশিট দাখিল এবং ব্যাংক হিসাব ও কর নথি সংগ্রহে বাড়তি ক্ষমতাসহ বেশ কয়েকটি বিধান যুক্ত করে চূড়ান্ত হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংশোধিত বিধামালা।

গত ২৩ এপ্রিল আইন মন্ত্রনালয়ে এক সভায় খসড়া চুড়ান্ত হয়েছে যা এখন মন্ত্রিপরিষদে রয়েছে। সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদসহ সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শিগগিরই রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে গেজেট আকারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এর আগে দুদকের পক্ষ থেকে বিধিমালা সংশোধন করে চূড়ান্ত সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মঈদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাদের কাজ শেষে সংশোধিত বিধিমালার খসড়া মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সবাই একমত পোষণ করেছেন। এখন মন্ত্রিপরিষদ হয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে গেজেট হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

বিধিমালার বিষয়ে তিনি বলেন, এতদিন দুদককে থানায় ভুলভাবে মামলা রুজু করতে হয়েছে। সারা বিশ্বের স্বাধীন দুর্নীতি দমন সংস্থাগুলোতে নিজ দপ্তরেই মামলা করার বিধান চালু রয়েছে। দুদকের মামলা থানায় রুজু হলেও পুলিশের এ বিষয়ে করণীয় কিছু নেই। থানা থেকে ওই মামলা যায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। কিন্তু ওই আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় চার্জশিট জমা হয় সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে। এর মাঝে অনেক সময়ের অপচয় হয়। এ কারণে আমরা বিধিতে নিজ কার্যালয়ে মামলা ও চার্জশিট বিশেষ জজ আদালতে দাখিলের বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছি।

দ্বিতীয় বিষয় হলো ব্যাংক ও আয়কর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার বিষয়ে। এর আগে হাইকোর্ট এ বিষয়ে নির্দেশনা দিলেও আমাদের প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদাভাবে ব্যাখ্যা দিতে হয়। একারণে আমরা চাচ্ছি বিষয়টি বিধিমালায় সংযুক্ত হোক।

দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত বিধিতে বলা হয়েছে, ‘২০০৪ সালের আইন অনুযায়ী দুদক স্বাধীন। এ সংস্থার নিজস্ব অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা আছে। মামলা পরিচালনার জন্য আছে নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট। দুদকের তফসিলভুক্ত যে কোনো অপরাধের জন্য থানায় এজাহার দায়ের বা থানার প্রতি মুখাপেক্ষী থাকা কমিশনের স্বাধীন ও স্বশাসিত সত্তার পরিপন্থী। এছাড়া থানায় এজাহার দায়েরের অবাধ সুযোগ থাকায় অযথা হয়রানির আশঙ্কাও থাকে।

যুক্তি হিসেবে দুদক বলছে দুদক বনাম মহীউদ্দীন খান আলমগীর মামলায় দুদকে এজাহার দায়েরের কথা আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ২০০৭ সালের বিধিমালার ২(ছ) ধারায়ও দুদক কার্যালয়ে দুর্নীতি মামলার এজাহার দায়েরের সুযোগ ছিল। কিন্তু বিধিতে সংশোধনী না আনায় কাজটা এতদিন করা সম্ভব হয়নি।’

অন্যদিকে চার্জশিট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল না করে সরাসরি সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে দাখিলের বিধানের বিষয়ে  প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘চার্জশিট সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দাখিলের জন্য বিধান সুস্পষ্ট করা দরকার। অন্যথায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।’এ সংক্রান্ত আইনটি তুলে ধরে সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয়, ‘দ্য ক্রিমিনাল ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৮-র ৪(২) ধারায়ও সংশ্লিষ্ট দায়রা জজকে সিনিয়র স্পেশাল জজ ঘোষণা করে অপরাধ আমলে নেয়ার একচ্ছত্র এখতিয়ার দেয়া আছে।’

অন্যদিকে কোনো অভিযোগ পাওয়ার পর দুদকের বিদ্যমান ২০০৭ সালের বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধানের আদেশ পাওয়ার তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান কাজ শেষ করতে হয়। প্রস্তাবিত বিধিতে বলা হয়, এত অল্প সময়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়-সম্পদ বা বড় ধরনের দুর্নীতির অনুসন্ধান করা বাস্তবে কঠিন। সময় স্বল্পতার কারণে অনেক তথ্য অনুসন্ধানের বাইরে থেকে যায়। এ অবস্থায় সংশোধিত বিধিতে দুর্নীতির অনুসন্ধানের সময়সীমা ১৫ কার্যদিবসের পরিবর্তে ৪৫ কার্যদিবস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিধি অনুযায়ী কাউকে সম্পদের হিসাব দিতে নোটিশ জারির সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাকে দুদকের নির্দিষ্ট ছকে হিসাব বিবরণী দাখিল করতে হয়। এই সময়সীমা (৭ কার্যদিবসের পরিবর্তে) ২১ কার্যদিবস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সবমিলিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও দায়দেনার হিসাব দিতে ৪৫ দিন সময় পাবেন।

এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক বলেন, সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময় বৃদ্ধির বিষয়টি নতুন করে যোগ করা হয়েছে। সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য সাত দিন, আবেদন করলে আরো সাত দিন সময় রয়েছে বিদ্যমান বিধিতে। ওই সময় নিয়ে প্রায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে। নোটিশ যার বিরুদ্ধে জারি হলো তিনি আদালতের হস্তক্ষেপ চান। আমাদেরও বারবার আদালত গিয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হয়। এই কারণে সংশোধিত বিধিমালা প্রথম পর্যায়ে ২১ কর্মদিবস করার প্রস্তাব দিয়েছে।

সংশোধিত নতুন বিধিতে কমিশনের অনুসন্ধানকারী বা তদন্তকারী কর্মকর্তা আবশ্যক বোধ করলে ব্যাংকার্স বুকস (ব্যাংকার্স বুকস এভিডেন্স এক্ট ১৮৯১-এ সজ্ঞায়িত) বা আয়কর অফিস হতে আয়কর রিটার্ন, বিবরণী, হিসাব, সাক্ষ্য প্রমাণ, এ্যাসসমেন্ট নথি, দলিলপত্র কমিশন আইন ও বিধিমালার বিধান মোতাবেক উদঘাটন বা পরীক্ষা বা জব্দ বা উহার অনুলিপি তলব করার ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা থাকছে। এক্ষেত্রে অন্য আইন বাধা হবে না।

আয়কর আইনেরর সাথে  সংশোধিত বিধিমালা সাংঘর্ষিক কিছু হবে কি না এমন প্রশ্নে মঈদুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক ও আয়কর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার বিষয়ে এর আগে হাইকোর্ট এ বিষয়ে নির্দেশনা দিলেও আমাদের প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদাভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। একারণে আমরা চাচ্ছি বিষয়টি বিধিমালায় সংযুক্ত হোক। আর কর কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য-উপাত্ত চাইলে অনেক সময় তারা নিজেদের আইনের দোহাই দিয়ে তথ্য দিতে চায় না। অথচ আয়কর আইনেই এ বিষয়ে অনুমতি দেওয়া রয়েছে।

আয়কর আইনের ১৯৮৪ অধ্যাদেশের ১৬৩ ধারার ১ ও ২ ধারায় তথ্য গোপণ করার কথা বলা হয়েছে। তবে ৩ উপধারায় বলা রয়েছে, পেনাল কোর্টের আওতায় অপরাধ, ফরেন এক্সচেঞ্জের অপরাধ, অর্থপাচার সংক্রান্ত অপরাধ ও আয়কর সংশ্লিষ্ট অপরাধসহ বেশ কয়েকটি অপরাধের ক্ষেত্রে উপধারা ১ ও ২ গোপন রাখার আদেশ প্রযোজ্য হবে না। অর্থ্যাৎ আইনি জটিলতা নেই। তারপরও আয়কর বিভাগের বিভিন্ন সময় নথিপত্র পাওয়া নিয়ে নানা জটিলতা এড়াতে বিধিতে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সংশোধিত খসড়া বিধিমালা তৈরি করে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সেটি ওই বছরের মে মাসে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তোলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে  নিজ দফতরে মামলা করার নজিরসহ বেশ কিছু বিষয়ে দুদকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ এপ্রিল ২০১৯/এম এ রহমান/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়