ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ট্যাক্সের টাকা লোপাট, জালিয়াত চক্র চিহ্নিত

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ৪ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ট্যাক্সের টাকা লোপাট, জালিয়াত চক্র চিহ্নিত

এম এ রহমান: জনগণের আয়করের টাকা সরকারি হিসাবে জমা না করে অভিনব কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে আত্মসাৎ করছে একটি চক্র। অভিযোগ রয়েছে ব্যাংক, ট‌্যাক্স বার ও কর অফিসের একটি জালিয়াত চক্র পরস্পর যোগসাজশে অর্থ লোপাট করেছে।

দুই থেকে তিন বছর ধরে এমন আত্মসাতের ঘটনা ঘটলেও অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক অভিযানে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। অভিযানে সত‌্যতা পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, দিনাজপুরের আয়কর অফিসের একটি চক্র বেশ কিছুদিন ধরে এমন অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় সোনালি ব্যাংকের একটি চক্র।

দুদকের পাশাপাশি অভিযোগ বিষয়ে পৃথকভাবে তদন্ত করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি টিম। রংপুর কর অঞ্চলের অতিরিক্তি কর কমিশনার শেখ মোঃ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিম তদন্তের দায়িত্বে আছে। ইতিমধ্যে ১২ জনেরও বেশি ব্যক্তির সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে কর অফিস, জেলা ট্যাক্স বার ও সোনালী ব্যাংকের বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তদন্ত এখনো চলছে বলে জানিয়েছে রংপুর কর অফিস।

এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ) কালিপদ হালদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা আগেই অবগত হয়েছি। এনবিআর নিজের আইনি কাঠামোতে চক্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরপর দুদককেও আমরা সহযোগিতা করেছি। তাদের অভিযানেও সত্যতা মিলেছে। আমাদের লোক অবশ্যই জড়িত রয়েছে। তবে ব্যাংকের লোক বেশি জড়িত বলে মনে হচ্ছে। আমাদের একটি টিম তদন্ত করছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রের টাকা এভাবে লোপাট হবে- এটা মেনে নেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় পাবে না। জড়িতদের চিহ্নিত করে বরখাস্ত করা এবং ফৌজদারি আইনে ব্যস্থা নেয়া হবে।

গত ২৮ এপ্রিল রংপুরের আয়কর বিভাগের আওতাধীন দিনাজপুর কর অফিসে অভিযান চালিয়ে বেতনের একটি হিসাব থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা অনৈতিকভাবে উত্তোলনের প্রমাণ পায় দুদক। আরো কিছু হিসাব যাচাই করলে আত্মসাতকৃত অর্থ পাওয়া যাবে বলে টিম মনে করে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুধু তাই এবার পুরো জালিয়াত চক্রকে আইনের আওতায় আনতে এবং খোয়া যাওয়া করের টাকা উদ্ধারে অনুসন্ধানের অনুমতি চেয়েছে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শন টিম। দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) বরাবর পাঠানো চিঠির সূত্র ধরে বিষয়টি জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দিনাজপুর আয়কর অফিসে করদাতা প্রদত্ত আয়কর বাবদ আদায়কৃত টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযাগের প্রেক্ষিতে দিনাজপুরের সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখা ও আয়কর অফিস পরিচালনা করে দুদকের পরিদর্শন টিম। অভিযান পরিচালনাকালে দেখা যায় করদাতাদের আয়কর পরিশোধের পে-অর্ডারগুলো (১-১১৪১-০০৬৫-০১১১) জমা না করে ব্যাংক ও আয়কর অফিসের একটি জালিয়াত চক্র দিনাজপুর আয়কর অফিসের সার্কেল-৮ এর কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ সংক্রান্ত চলতি তিনটি হিসাবে (হিসাব নং-১৮০৯৩৩৩০০১৯৬৪, ১৮০৯৩৩৩০০৫২৫৫ ও ১৮০৯৩৩৩০০৪৩৬৪) জমা করে। যা পরে বিভিন্ন সময় উত্তোলন করে আত্মসাত করে। গত ২৮ এপ্রিল অভিযানকালে তাৎক্ষণিকভাবে ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। দুদকের অনুসন্ধান থেকে এটা পরিস্কার যে, দিনাজপুরের ৩টি আয়কর সার্কেলে জালিয়াত চক্র একই প্রক্রিয়ায় সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছে।

অভিযানের প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই দুদকের প্রশাসন শাখা কমিশনের অনুমতির জন্য প্রেরণ করে বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, অভিযোগ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত হওয়ায় আমরা এ বিষয়ে কমিশনেরর চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। অভিযাগের গুরুত্ব থাকায় আশা করছি অনুসন্ধানের অনুমতি দিতে পারে। তবে চূড়াস্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

দুদক সূত্র আরো জানায়, আয়কর বিভাগের রংপুর কর অঞ্চলের আওতাধীন দিনাজপুরের করদাতাদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে অন্য হিসাব ব্যবহার করে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান এর নেতৃত্বে টিম অভিযান পরিচালনা করে। টিমের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সহকারী পরিচালক মোঃ আহসানুল কবীর পলাশ, সহকারী পরিদর্শক মোঃ ওবায়দুর রহমান, ডাটা এন্ট্রি. কন্ট্রোল অপারেটর মোঃ শাহাজাহান আলী।

নিয়মানুযায়ী আয়কর বিভাগ হতে প্রাপ্ত টাকা চালান বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, দিনাজপুর কর্পোরেট শাখার ট্রেজারি হিসাব কোডে জমা হওয়ার কথা, কোনো ব্যক্তিগত হিসাবে জমা হওয়ার সুযোগ নেই।  কিন্তু পে-অর্ডার বা চালানগুলো ব্যাংকে জমা হওয়ার পর চালানগুলো ছিড়ে ফেলে এবং পে-অর্ডারগুলোর পেছনে ঘষামাজা করে একটি নির্দিষ্ট বেতন বিলের হিসাব নম্বরে জমা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। উক্ত কর্মকাণ্ডে দিনাজপুরের সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এবং আয়কর বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে দুদক টিম।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মে ২০১৯/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়