ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অবিক্রিত লবণ নিয়ে বিপাকে চাষি

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ২৩ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবিক্রিত লবণ নিয়ে বিপাকে চাষি

হাসিবুল ইসলাম মিথুন, কক্সবাজার থেকে ফিরে : কক্সবাজারের চকরিয়ার আনিসুর রহমান ২০ কানি জমিতে লবণ চাষ করছেন। লবণের দাম কম হওয়ায় লাভ তো দূরের কথা, খরচ উঠাতে পারবেন কি না, সেটা নিয়ে চিন্তিত তিনি।

এখানকার সব লবণ চাষির অবস্থা একই রকম। তিন মাস আগে মাঠ থেকে যে লবণ বিক্রি হতো ২৮০ টাকা মণ, সে লবণের দাম এখন অর্ধেকে নেমে ১৫০ টাকা হয়েছে। লবণের ন্যায্য দাম পেতে সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন তারা। দাবি উঠেছে লবণ বোর্ড গঠনেরও।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১৬ লাখ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও উৎপাদন ইতোমধ্যে ১৮ লাখ টন ছাড়িয়েছে। রেকর্ড লবণ উৎপাদনের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত লবণ কোম্পানিগুলো লবণ কেনা কমিয়ে দেওয়ার কারণে দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এসব অঞ্চল থেকে এসিআই সল্ট লিমিটেড, মোল্লা সল্ট, মধুমতিসহ বড় ও নামি-দামি কোম্পানিগুলো লবণ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।

লবণের দরপতনের কারণে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়ায় লবণ বিক্রি করছেন না বলে জানান এসব এলাকার কৃষকরা।

আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার চার হাজার মণ লবণ মজুদ আছে। গর্ত করে মাঠেই রেখেছি এ লবণ। কীভাবে লবণের দাম বৃদ্ধি করা যায় সরকার যেন সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। ’

তিনি বলেন, ‘চকরিয়া উপজেলার ৬০-৬৫ শতাংশ এলাকায় লবণ চাষ হয়। বড় ও নামি-দামি কোম্পানিগুলো লবণ না নেওয়ার কারণে চাষি পর্যায়ে লবণ বিক্রি অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে লবণের দাম কম হওয়ায় চাষিরা লবণ বিক্রি করছেন না। যার ফলে লবণ মাঠে হাজার-হাজার মণ লবণ অবিক্রিত পড়ে আছে।’
 


এ বিষয়ে এসিআই সল্ট লিমিটেডের বিসনেস ডিরেক্টর মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের কারখানার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ কেজি লবণ সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু মহামান্য আদালতের নিষেধাজ্ঞায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় আমরা খুচরা বাজার থেকে লবণ কেনা বন্ধ রেখেছি। যদি মহামান্য আদালত পুনরায় আমাদের অনুমতি দেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে লবণ কেনা চালু করতে পারব।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে দেশে ভোক্তা ও শিল্পখাতে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। বিপরীতে বিসিক দেশে লবণ উৎপাদন এলাকার ৬৪ হাজার ১৪৭ একর জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ টন। গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ কক্সবাজারের উপকূল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলায় লবণ উৎপাদনে জড়িত রয়েছে প্রায় ৪ লাখের বেশি কৃষক ও শ্রমিক। অনূকূল আবহাওয়া থাকায় ১৩টি লবণ উৎপাদন মোকামের অধীনে লবণ উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১৮ লাখ টন।

এ বিষয়ে বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরি বলেন, ‘এ অঞ্চলের কৃষক সাধারণত ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মে মাসের শেষ পর্যন্ত লবণ চাষ করে থাকে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে তা আরো বাড়তে পারে।’

চকরিয়ার কোটাখালীর লবণ চাষী মো. ফারুখ হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, পাঁচ কানি (এক কানি সমান ৩৯ শতাংশ) জমিতে লবণ চাষ করছে। এক কানি জমিতে ২৫০ মণ লবণ চাষ হয়। এতে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। জমি তৈরিতে ২৭ হাজার, মাটিতে পলিথিন বিছাতে ১০ হাজার ৫০০ টাকা, জমিতে পানি দিতে ৩ হাজার টাকা। নিজের শ্রমের মূল্যসহ আরো খরচ আছে। বড় বড় কোম্পানি এখন লবণ কিনতে চাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যেন আমাদের কথা চিন্তা করে। আমরা যেন ন্যায্যমূল্যে লবণ বিক্রি করতে পারি। এটা না করতে পারলে লাভ তো দূরের কথা লবণ চাষের খরচই উঠবে না।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, লবণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকে কক্সবাজারে একটা ‘লবণ বোর্ড’ গঠন করতে হবে। তারা যেন ঠিক মতো দাম পায় সে ব্যাপারে দেখবে এ বোর্ড।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মে ২০১৯/হাসিবুল/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়