ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফ্রান্সের শক্তি তারুণ্য, উরুগুয়ের অভিজ্ঞতা

শেখ আল মুমিন শুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৭, ৬ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফ্রান্সের শক্তি তারুণ্য, উরুগুয়ের অভিজ্ঞতা

শেখ আল মুমিন শুভ : ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অব আর্থ’ হিসেবে পরিচিত ফুটবল বিশ্বকাপের এবারের আসর শেষ আটে এসে পৌছেছে যা আজ থেকে শুরু হবে । নানা অঘটন ও চমকে পরিপূর্ণ রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটি ম্যাচ ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। প্রায় প্রতিটি ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি কোন দল জিতবে! প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠার লড়াইয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও ফ্রান্স । দল দুটির বর্তমান স্কোয়াড, খেলোয়াড়দের স্কিল ও পারফরম্যান্স বিবেচনায় ম্যাচটি এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা হাইভোল্টেজ ম্যাচে পরিণত হয়েছে । ইউরোপের গণমাধ্যমগুলো বলছে, ‘অঘোষিত ফাইনাল।’ লড়াইটা, ফ্রান্সের তারুণ্য শক্তির আর উরুগুয়ের অভিজ্ঞতার।

যদি বলা হয় বিশ্বকাপে ইউরোপের সেরা তিন দল কোন তিনটি? তাহলে ইতালি, জার্মানির পর স্পেন, ফ্রান্স বা ইংল্যান্ডের নাম আসতে পারে। আর একই তালিকা যদি ল্যাতিন আমেরিকার ক্ষেত্রে করা লাগে তাহলে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার পর নিশ্চিত আসবে উরুগুয়ের নাম।

বিশ্বকাপ শিরোপার ক্ষেত্রে ব্রাজিল, ইতালি, জার্মানির পর আর্জেন্টিনার সাথে উচ্চারিত হয় উরুগুয়ের নাম। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্ব প্রথম ১৯৩০ বিশকাপের শিরোপা জিতেছিল উরুগুয়ে। পরের দুই আসরে না খেললেও চতুর্থ আসর অর্থাৎ ১৯৫০ বিশ্বকাপে অংশ নেয় এবং সেই আসরে ব্রাজিলকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা ঘরে তুলে উরুগুয়ে। তাদের দলে খুব একটা বিশ্বমানের তারকা কখনোই ছিলো না, টুর্নামেন্টে আসতো আন্ডারডগ হিসেবে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে খুব বেশি আসরে খেলতে পারেনি উরুগুয়ে, মাত্র ১২ বার খেলেছে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ কম খেলার সুযোগ পেলেও যতবারই খেলেছে নিজেদের চমকপ্রদ খেলা দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। শারীরিকভাবে উচ্চাকৃতির হওয়ায় কাউন্টার অ্যাটাকের সাথে লং পাসে বেশি খেলে তারা। এবার তাদের দলে রয়েছে কাভানি,সুয়ারেজ,মুসলেরা, গডিন, পেরেইরা এর মত একঝাক নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় যারা যেকোন সময় খেলার অবস্থা বদলে দিতে পারেন। অভিজ্ঞতায় তারা অনন্য। সেমিফাইনালে উঠার জন্যে পুরো উরুগুয়ে চেয়ে থাকবে তাদের আক্রমণের প্রধান সেনানী এডিসন কাভানি ও লুইস সুয়ারেজ এর দিকে। তবে কাভানি ইনজুরির কারণে খেলবেন কিনা তা শেষ মুহূর্তে জানাবে উরুগুয়ে। তবে এই দুইজনের জুটি ও সম্মিলিত আক্রমণ যেকোন রক্ষণের জন্যে তীব্র আতঙ্কের কারণ। বিশ্বকাপে উরুগুয়ের করা ৭ গোলের ৫ গোলই করেছেন এই দুজন । দুজনেই পুরো দস্তুর জাত গোল স্কোরার । দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ ১০ গোল করেন কাভানি। সর্বশেষ ক্লাব মৌসুমে পিএসজির হয়েও দূর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েছেন, হয়েছেন পিএসজির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা । সর্বশেষ মৌসুমে পিএসজির ফ্রেঞ্চ লীগ ও কাপ সহ চারটি শিরোপা জয়ে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন কাভানি । এদিক থেকে সুয়ারেজ খুব একটা পিছিয়ে নেই । বার্সেলোনার হয়ে লীগ ও কাপ জয়ের সাথে করেছেন ২৫ গোল ও ১২ অ্যাসিস্ট । উরুগুয়ের জয়ে এই দুইজনের বড় ভুমিকা পালন করতে হবে এটা একরকম নিশ্চিত।

এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে দামি দল ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স । আর হবেই বা না কেন , তাদের দলে রয়েছে এমবাপ্পে , উমিতিতি , গ্রিজম্যান , জিরুড , ভারানে , ডেম্বেলের মত তরুণ তারকারা । দলের আক্রমণ ও রক্ষণ দুটোই একেবারে ঝাঁঝালো । বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ফ্রান্স দশ ম্যাচে গোল করেছে ১৮টি এবং গোল হজম করেছে মাত্র ৬টি । এ থেকে বুঝা যায় পুরো দল কতটা কার্যকর। উরুগুয়ের বিপক্ষের ম্যাচে রক্ষণ ভাঙ্গার মূল দায়িত্ব থাকবে দুই ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে ও অ্যান্টোনিও গ্রিজম্যানের ওপর । বিশ্বকাপে করা ফ্রান্সের ৭ গোলের ৫ গোলই করেছেন এই দুজন । ফ্রান্সের যে ২৩ জন খেলোয়াড় এবারের বিশ্বকাপ দলে রয়েছেন তাদের মার্কেট মূল্য ১৪১০.০৩ মিলিয়ন ইউরো প্রায় । এদের মধ্যে সবচেয়ে দামী হলেন পিএসজির ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে , যার মূল্য প্রায় ১৮৭ মিলিয়ন ইউরো । ১৭ বছর পর মোনাকোকে ফরাসী লীগ জেতানোর প্রধান ভূমিকা পালন করেন এই বিস্ময়বালক এবং সেখান থেকে রেকর্ড পারিশ্রমিকে গত মৌসুমে যোগ দেন পিএসজিতে । তার  স্কিল, স্পিড, পাসিং একুরেসি, ড্রিবলিং সবকিছুই একেবারে নয়নাভিরাম। যা ধরে রেখেছেন জাতীয় দলের হয়েও। বিশ্বকাপে এমবাপ্পে তার সাথে পাচ্ছেন আরেক গোলমাষ্টার গ্রিজম্যানকে । সর্বশেষ মৌসুমে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে ১৯ গোলের সাথে ৯টি অ্যাসিষ্ট করেছেন । আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পেয়েছেন গোলের স্বাদ।

দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে উরুগুয়ে। আটবারের মোকাবেলায় তিন জয় ল্যাতিন আমেরিকার দেশটি, একবার জিতেছে ফ্রান্স। চারটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। সর্বশেষ তারা মুখোমুখি হয়েছিল ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে। সেখানে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। ১৯৬৬, ২০০২ এবং ২০১০ বিশ্বকাপে তিনবার খেলেছে দুই দল। ১৯৬৬ সালের ম্যাচে জয় পায় উরুগুয়ে।

লড়াইয়ের মঞ্চ একেবারে প্রস্তুত। প্রস্তুত দুই দলের যোদ্বারাও। একের পর এক আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে ম্যাচটা দারুণভাবে জমে উঠবে আশা করা যায়।  ফ্রান্সের এবারের বিশ্বকাপের স্লোগান হচ্ছে ''তোমার শক্তি, তোমার আবেগ, চলে আসো লাস ব্লুস'' আর উরুগুয়ের “সূর্যের আলোকে রাশিয়ার আকাশ হবে আলোকিত নীল” । দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কারা নিজেদের স্লোগান সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। জবাবের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জুলাই ২০১৮/শেখ আল মুমিন শুভ/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়