ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কৃত্রিম প্রবাল রক্ষা করবে প্রাকৃতিক প্রবালকে?

মো. রায়হান কবির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কৃত্রিম প্রবাল রক্ষা করবে প্রাকৃতিক প্রবালকে?

মো. রায়হান কবির : দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে ধ্বংস হতে চলেছে। যত্রতত্র সৈকতে নামা, নিয়ম ভেঙে প্রবাল আহরণ এবং অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের ফলে সমুদ্রের স্বাভাবিক ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।

এমনকি আমরা রোদ থেকে বাঁচতে যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করি এটাও প্রবাল ধ্বংসের পেছনে আরেকটি কারণ। সানস্ক্রিনে যে অর্গানিক কম্পাউন্ড ব্যবহার হয় তার একটি উপাদান হচ্ছে অক্সিবেনজোন। এই অক্সিবেনজোন প্রবালের যম। প্রবালের ডিএনএ ধ্বংস করে এর বংশ বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয়।

আমেরিকার হাওয়াই সহ ইসরায়েলের সমুদ্রের কিছু অংশে আশংকাজনক হারে অক্সিবেনজোন লক্ষ্য করা গেছে। ওইসব অঞ্চলে প্রচুর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়। ফলে নষ্ট হচ্ছে সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য। প্রবালেরও কিন্তু জীবন আছে। প্রবাল মূলত ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের কাঠামো। আর ছোট প্রবাল কীট যাকে পলিপস নামেই সবাই চেনে, এরা এসব প্রবালের শেকড় তৈরি করে। এসব পলিপসও কিন্তু প্রবালের মতো আস্তরণ বা দেয়াল তৈরি করে কিন্তু তা খুব ধীরে এবং ছোট পরিসরে। ফলে প্রবাল মানুষ সৃষ্ট কারণে নষ্ট হলে এর বেড়ে ওঠার সুযোগ কম।

এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর মাত্র ৪৬% প্রবাল সুস্থ ও সবল আছে। এবং সবচেয়ে আশংকার বিষয় হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের ভেতর পৃথিবীর প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রবাল ধ্বংসের মুখে পড়বে। তাই প্রবাল বাঁচাতে দরকার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ। যদিও তেমন কোনো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে চোখে পরছে না।

তবে কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগ কিন্তু দেখা যাচ্ছে। বিখ্যাত সমুদ্র বিজ্ঞান অনুসন্ধানকারী জ্যাকস কস্তা তার জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন সমুদ্র গবেষণা করে। যার অন্যতম ছিল প্রবাল নিয়ে গবেষণা। তিনি তার শেষ জীবনেও সমুদ্র রক্ষা এবং এর দূষণের বিরুদ্ধে বলে গেছেন। এখন ওনার নাতি ফেবিয়ান কস্তা নতুন গবেষণায় আলোর মুখ দেখাচ্ছেন। তিনি থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে প্রবালের কাঠামো প্রিন্ট দিয়ে প্রবালকে কৃত্রিমভাবে বংশ বৃদ্ধি করতে চাচ্ছেন। তবে কৃত্রিম হলেও এই প্রবালের কাঠামোও হবে প্রাকৃতিক কাঠামোর মতো ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের তৈরি।

ফেবিয়ান কস্তার ভাষায়, ‘আমরা যদি কৃত্রিম প্রবালের কাঠামো সমুদ্রে ছড়িয়ে দিতে পারি এবং তার সংস্পর্শে প্রবাল কীটকে আনতে পারি তবে সেটা প্রাকৃতিক প্রবালেই রুপ নিতে পারে।’ তিনি এ বিষয়ে পপুলার মেকানিক্স নামের একটি ম্যাগাজিনের মার্চের সংখ্যায় বিস্তারিত বলেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ফেবিয়ান কস্তা অশেন লার্নিগ সেন্টার ইতিমধ্যেই সমুদ্রে কৃত্রিম প্রবাল বিস্তারের কাজ শুরু করে দিয়েছে।

ভেনেজুয়েলার কাছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্রের বোনেয়ার নামের অংশে তারা সমুদ্রের তলদেশে প্রবাল বুনে চলেছেন। এখন দেখা যাক, এটা কতটা কার্যকর। যদি এটা সত্যিই ফলপ্রসূ হয় তবে আমাদের সরকারেরও উচিত আবহাওয়া পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেঞ্জের আওতার তহবিল থেকে সেন্টমার্টিনকে রক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়