ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ধর্ষণ প্রতিরোধে ১০ উদ্ভাবন

প্রকাশিত: ০২:২০, ১৯ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ১৫:৪৫, ১ আগস্ট ২০২১
ধর্ষণ প্রতিরোধে ১০ উদ্ভাবন

প্রতীকী ছবি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিশ্বের সব দেশেই কঠোর আইন থাকলেও, ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। ধর্ষণ ঠেকাতে কঠিন সাজা প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন ডিভাইসও উদ্ভাবন করা হচ্ছে। তেমন কিছু ডিভাইস নিয়েই এ প্রতিবেদন।

 

নিরাপত্তা অ্যালার্ম ডিভাইস

‘অ্যাথিনা’ নামক এই ডিভাইসটিতে একটি সুইচ রয়েছে, যা চাপ দেওয়া মাত্রই ৯০ ডেসিবল উচ্চ শব্দে অ্যালার্ম বাজতে শুরু করে। ডিভাইসটি ব্যাগ, প্যান্টের পকেট অথবা মোবাইল ফোনের সঙ্গে আটকে রাখা যায়। লকেট হিসেবে গলায় পড়ে থাকা যায়। বিপদের পরিস্থিতিতে এর সুইচ চাপ দেওয়ার মাত্রই উচ্চ মাত্রার অ্যালার্মের শব্দ আক্রমণকারীকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে বা শব্দের কারণে কাছাকাছি উপস্থিত কারো মনোযোগ আকর্ষণের ফলে সম্ভাব্য সাহায্য পেতে সহায়তা করবে। এছাড়াও ডিভাইসটি লোকেশন সহ মেসেজ পাঠাবে পূর্ব নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে।

 

প্রতিরক্ষামূলক নেকলেস

‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল’ নামক এই ডিভাইসটি নেকলেস অথবা ব্রেসলেট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অলংকার হিসেবে পরিধান করে এটি শুধু সৌন্দর্য বাড়াবে তা নয় বরঞ্চ অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে নারীদের বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। এই নেকলেস বা ব্রেসলেটের বাটনে চাপ দেওয়া মাত্রই পরিধানকারীর মোবাইলে ফোন ভুয়া কল আসবে, যা রিসিভ করে পরিস্থিতে থেকে বাঁচতে কোনো অজুহাত তৈরি করা যেতে পারে। এছাড়া বাটনটি ৩ সেকেন্ড চেপে ধরে থাকলে পূর্ব নির্ধারিত কোনো ফোন নম্বরে লোকেশন সহ বিপদের এসওএস মেসেজ চলে যাবে।

 

লোমশ মোজা

এটি ঘন ও বড় লোমযুক্ত মোজা। যা উরু থেকে শুরু করে পুরো পা জুড়ে পরিধান করা যায়। এর সুবিধাটা হচ্ছে, ঘন ও বড় লোমের পা দেখে আক্রমণকারীর আগ্রহ নষ্ট করতে পারে। ২০১৩ সালে চীনের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এক ব্যবহারকারী নারীদের রক্ষা করা উদ্দেশ্যে তার উদ্ভাবনের এই ছবিটি পোস্ট করার পর, তা ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে বন্য রূপের কারণে অনেকে এই উদ্ভাবনের সমালোচনা করেছে।

 

সুইযুক্ত প্যাড

অনিতা ইঙ্গমার্কসডটার নামক সুইডেনের এক নারী ‘ফেম ডিফেন্স’ নামক এই ধর্ষণ বিরোধী প্যাডের পরিকল্পনার প্যাটেন্ট আবেদন করেছেন। এই প্যাডটি নারী তার যৌনাঙ্গে বহন করবেন। এতে একটি ধারালো পিন রয়েছে যা ধর্ষণের ঘটনার অপরাধীর যৌনাঙ্গে মারাত্বকভাবে বিদ্ধ করবে। প্যাডটির ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে ডিভাইসটির বাহক হিসেবে নারী নিজে আঘাত পাবে না। তবে ফেম ডিফেন্স প্যাড বাস্তবে উদ্ভাবিত হয়নি। এটি ধর্ষণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটা ধারণার নকশা মাত্র।

 

কাঁটাযুক্ত কনডম

ধর্ষণ বিরোধী বিশেষ নারী কনডম উদ্ভাবন করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সনেট এলের্স নামক একজন নারী চিকিৎসক। ধর্ষিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন নারীরা ‘রেপ-এএক্সই’ নামক এই কনডম অনির্দিষ্ট কালের জন্য পড়ে সুরক্ষিত রাখতে পারবে নিজেকে। খাঁজকাটা ধারালো দাঁত আকৃতি রয়েছে এই কনডমে, যা আক্রমণকারীর স্পর্শকাতর অঙ্গে বিদ্ধ হয়ে যাবে এবং তীব্র যন্ত্রণা দেবে। চিকিৎসকের সহায়তা ছাড়া এটি অপসারণ করা অসম্ভব। অপরাধের প্রমাণ হিসেবে যা সুবিধাজনক।

 

ফাঁদ

এই ডিভাইসটি অনেকটা ইদুঁর ধরার ডিভাইসের মতো কাজ করে। মোশন সেন্সরের সঙ্গে এর দুইদিকেই ধারালো কাঁটা রয়েছে। বেল্ট স্টাইলের এই ডিভাইসটি অন্তর্বাসের নিচে পড়ে থাকতে হয়। আক্রমণকারীর স্পর্শকাতর অংশের সংস্পর্শে এলে এটি সেখানে মারাত্মকভাবে বিদ্ধ হবে। ডিভাইসটি তৈরি করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাস্কর্য কাজের জন্য পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের ইরা শারম্যান।

 

প্রতিরক্ষামূলক বেল্ট

সুইডেনের তিন কিশোরী তৈরি করেছে নারীদের প্রতিরক্ষামূলক এই বেল্ট, যা খুলতে দুই হাত ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও পরিধান করা এই বেল্ট জোর করে খুলে ফেলতে গেলে গোলকধাঁধা সৃষ্টি করবে। বেল্টটিতে একটি জটিল কোড রয়েছে, যা বেল্টটি অনলক করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে সঠিক অবস্থানে রাখতে হয়।   

 

ইনজেকটর  

ইরা শারম্যানের তৈরি আরেকটি ধর্ষণ বিরোধী ডিভাইস। এটাকে তিনি ‘দূর্ভেদ্য ডিভাইস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইনজেকটর নামক এই ধাতব ডিভাইসটি ধর্ষণে চেষ্টাকারী ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিভাবে থামাতে শরীরে প্রথমত কড়া ঘুমের ইনজেকশন দেবে এবং দ্বিতীয় কখনো মুছবে না এমন স্থায়ী ট্যাটু সৃষ্টি করবে।

 

ধর্ষণ প্রতিরোধী বক্ষবন্ধনী

২০১২ সালে ২৩ বছর বয়সী এক মেডিকেল শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ এবং হত্যার খবর গোটা ভারতবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। যা বিচলতি করেছিল চেন্নাইয়ের আরএম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মনীষা মোহনকেও। এই শিক্ষার্থী আরো দুই সহপাঠীর সহায়তার তৈরি করেন ধর্ষণ প্রতিরোধক ইলেকট্রিক বক্ষবন্ধনী (ব্রা), যা ধর্ষককে আঘাতে সক্ষম। স্তনের ওপর একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চাপ তৈরি হলে ৩,৮০০ কিলো-ভোল্ট সমপরিমাণ বৈদ্যুতিক শক দেবে এটি, যা আক্রমণকারীকে মারাত্মকভাবে আহত করবে। এছাড়াও এই ইলেকট্রিক ব্রা-তে থাকা জিপিএস সেন্সর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটনার তথ্য পুলিশ বা পরিবারের কাছে কাছে পাঠাবে। এই অন্তর্বাসের ভেতরের অংশে রয়েছে বিশেষ পলিমার ফলে পরিহিত ব্যক্তির শরীরে শক লাগবে না। কাউকে সাধারণভাবে জড়িয়ে ধরলে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তাতে ‘সোসাইটি হারনেসিং ইক্যুইপমেন্ট’ নামক এই বক্ষবন্ধনী আঘাত হানবে না। বরং স্তনে শক্তভাবে চাপ দিলে সক্রিয় হবে। তবে এই পদ্ধতি সক্রিয় করার একটি বোতাম রয়েছে। ফলে পরিধানকারী নারী নিজের প্রয়োজনমতো সেটি চালু বা বন্ধ করতে পারবেন।

প্রতিরক্ষামূলক অন্তর্বাস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এআর ওয়্যার তৈরি করেছে ধর্ষণ প্রতিরোধে বিশেষ অন্তর্বাস বা শর্ট প্যান্ট। এটি ধর্ষণকারীকে আঘাতের কোনো ডিভাইস নয় কিন্তু এমন ধরনের অন্তর্বাস যা সময়ক্ষেপণ করবে এবং কোনো নিরাপদ উপায় ভাবার জন্য নারীকে অনেক সময় দেবে। এই অন্তর্বাস ধর্ষণে উদ্ধত ব্যক্তি কোনোভাবেই টেনে খুলতে পারবে না, এমনকি কাচি বা ছুড়ি চালিয়েও কাটা সম্ভব হবে না। এই অন্তর্বাস বা শর্ট প্যান্টে বোতাম আকৃতির বিশেষ লক রয়েছে, যা কেবলমাত্র পরিধানকারী জানবে।

তথ্যসূত্র: লিফটার

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়