ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মোবাইল বায়োমেট্রিকস সেবায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণা

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ২২ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মোবাইল বায়োমেট্রিকস সেবায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণা

প্রতীকী ছবি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : মানুষ এখন খুব সহজে তাদের মোবাইল ফোনের স্ক্রিন বা পর্দায় আঙুল ছোঁয়াতেই কেনাকাটার বিল পরিশোধ হয়ে যায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করার এই প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে। এক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড ভুলে গেলেও সমস্যা নেই। কারণ মোবাইল বায়োমেট্রিকস বা আঙুলের ছাপ পদ্ধতিতে অত্যন্ত সহজ ও নিরাপদ উপায়ে পাসওয়ার্ড প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থাও রয়েছে।

আইরিস স্ক্যান বা ‘সেলফি’ ব্যবহারের মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট শণাক্ত করে ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ ওই মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর আইডেনটিটি বা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। এভাবে গ্রাহকদের জন্য মোবাইল ফোনভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা অধিকতর সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং নিরাপদ করে তুলতে ব্যাংকগুলো বায়োমেট্রিক টেকনোলজি বা আঙুলের ছাপ পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকে।

তবে মোবাইল বায়োমেট্রিকস এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেন সেবা প্রদানকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এই সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা থাকার কথা উঠে এসেছে। যেমন, সেবাটি প্রদানে নিয়োজিত ব্যাংক খাতের নির্বাহীদের মধ্যে মাত্র ৩৬ শতাংশ জানিয়েছেন যে, এ কাজে তাদের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এই কাজে ব্যাংকারদের মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণে বা মোকাবিলায় ‘মোবাইল বায়োমেট্রিকস ইন ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস : অ্যা ফাইভ ফ্যাক্টর ফ্রেমওয়ার্ক’ বা ‘আর্থিক সেবায় মোবাইল বায়োমেট্রিকস : পাঁচ উপাদান কাঠামো’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গাইডলাইন বা পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তিমুখী এসব গাইডলাইন বা সুপারিশ মেনে চললে ব্যাংকের নির্বাহীরা অত্যন্ত সফলতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে মোবাইল বায়োমেট্রিকস পৌঁছে দিতে সক্ষম হবেন। এক্ষেত্রে তাদের কেবল পারফরম্যান্স বা যথাযথভাবে কার্য্য সম্পাদন, ব্যবহারযোগ্যতা, পারস্পরিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা ইত্যাদি বিষয় মেনে চলার ওপর জোর দিতে হবে।

মাস্টারকার্ড ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওই প্রতিবেদনে যেসব ফ্যাক্টর বা উপাদানের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে কিছু ভোক্তাদের কাছে দৃশ্যমান এবং এগুলো সত্যিকার অর্থেই তাদের অভিজ্ঞতায় কিছু প্রভাব ফেলে। তবে ঝুঁকি এড়িয়ে দীর্ঘ মেয়াদে সফলতা পেতে হলে একটি ব্যাংককে সবগুলো উপাদানেই সমানভাবে জোর দিতে হবে। এই ফ্রেমওয়ার্ক বা পাঁচ উপাদানের কাঠামোটি আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের গ্রাহকদের সমস্যা ফেলেছে এমন ধরনের ফাঁদ এড়িয়ে চলার সুযোগ করে দেবে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ইভান মার্টিনোভিচ বলেন, ‘বায়োমেট্রিক অথেনটিফিকেশন বা আঙুলের ছাপ প্রমাণীকরণ সেবার সম্ভাবনা অনেক। তবে এ সংক্রান্ত সেবার সলিউশন্স বা সমাধান নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আলোচ্য ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামোর পাঁচটি উপাদানের প্রত্যেকটিতেই জোর দিতে হবে। মাস্টারকার্ডের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ফলে আমরা মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে বাস্তব সমস্যা সমাধান ও মোকাবিলায় সর্বোত্ত কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক ধারণা নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এই প্রযুক্তিক সেবার প্রচলন ও বিকাশে গ্রাহকদের জন্য সেবার ধারাবাহিকতা, মান বজায় রাখা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকা জরুরি।’

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে পরিচালিত এই গবেষণা উদ্যোগ সম্পর্কে মাস্টারকার্ডের গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজ রিস্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা ব্লগে মেসেজে বলেন, ‘কার্যকর মোবাইল বায়োমেট্রিক সেবা গ্রাহকমুখী আর্থিক সেবা গ্রাহকদের তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আর্থিক লেনদেন বা কোনো বিল পরিশোধের সুযোগ করে দিচ্ছে। এভাবে তারা এখন পাসওয়ার্ড-ফ্রি বা পাসওয়ার্ড মুক্ত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন যেখানে ডিজিটাল আইডেনটিটি বা প্রযুক্তিভিত্তিক পরিচয়টাই বড় হয়ে উঠবে। তখন সবচেয়ে বড় কথা হবে- আমরা কে, আমরা কী স্মরণ করছি সেটি নয়।’

আগামী বছরে সারা বিশ্বে স্মার্টফোন বিক্রির মোট পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে। সর্বত্রই স্মার্টফোনের বিক্রি ও ব্যবহার বাড়ছে। ফলে মোবাইল বায়োমেট্রিকস সেবার সম্ভাবনা বাড়ছে, যেটাকে ব্যাংকগুলো সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে পরিচালিত গবেষণা উদ্যোগ এবং মাস্টারকার্ড আইডেনটিটি চেক মোবাইলের মতো প্রথম বায়োমেট্রিকস সলিউশন্স বা সেবার মাধ্যমে মাস্টারকার্ড আর্থিক সেবার বিকাশে ব্যাপকভিত্তিক ও দায়িত্বশীল সেবা নিয়ে এসেছে।

অজয় বাঙ্গা আরো বলেন, ‘আর্থিক সেবা খাত মোবাইল বায়োমেট্রিকসের প্রচলন ও বিকাশ এবং ও গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় মাস্টারকার্ড ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত পাঁচ উপাদানের ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো হচ্ছে একটি মৌলিক বিষয়। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজন যৌথ উদ্যোগ। আমরা তখনই কেবল লক্ষ্যে পৌঁছাব যখন মোবাইল শিল্প খাত, গবেষক, সরকার, প্রযুক্তি সেবা ও পণ্য বিক্রেতারা মোবাইল বায়োমেট্রিকসের জন্য উদ্ভাবিত পাঁচ উপাদানের ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামোটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসবে।’

অপাস রিসার্চের ইনটেলিজেন্ট অথেনটিফিকেশনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর রাভিন সনজিথ বলেন, ‘ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা আর্থিক সেবায় মোবাইল বায়োমেট্রিকসের ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ড ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করেছে। এ সেবা প্রচলন ও বিকাশে সহায়ক হবে এমন কিছু মৌলিক উপাদান তারা তুলে ধরেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করি যে পাঁচ উপাদানের ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামোটি আর্থিক সেবা খাতের পেশাজীবী ও নীতিনির্ধারকদের জন্য অপরিহার্য গাইডলাইন বা নির্দেশনা হয়ে উঠবে। এর ফলে তারা বিষয়টি সম্পর্কে অনেক বেশি জ্ঞান লাভ করবেন, কৌশলগত আলোচনায় পারদর্শিতা দেখাতে পারবেন। এতে বায়োমেট্রিকস সেবায় দক্ষতা ও সফলতা আসবে।’

আর্থিক সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর বায়োমেট্রিকস সেবায় ব্যবসায়িক সফলতার জন্য সহায়ক হবে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অপাস রিসার্চের সংক্ষিপ্তসারে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে তাদের প্রতিটি পর্যায়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে। https://globalrisk.mastercard.com ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত হোয়াইট পেপার পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া মাস্টারকার্ডের সহযোগিতায় অপাস আগামী ১১ জুলাই আলোচ্য পাঁচটি উপাদানের ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামোটির ওপর একটি ওয়েবিনার প্রকাশ করবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুন ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়