ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পাহাড়কে জাতীয় সম্পদ ঘোষণার দাবি

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ৮ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাহাড়কে জাতীয় সম্পদ ঘোষণার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের সব পাহাড়কে জাতীয় সম্পদ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।

শনিবার দুপুরে সংগঠনটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘পাহাড় রক্ষা- মানবিক ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়।

রাজধানীতে পবা কার্যালয়ে এ গোলটেবিল বৈঠক হয়। বৈঠকে পাহাড়কে জাতীয় সম্পদ ঘোষণার দাবির পাশাপাশি ৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরে সংগঠনটি।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রায় প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে মানবিক ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। প্রকৃতির সঙ্গে কিছু লোভী মানুষের অপরিণামদর্শী আচরণের ফলেই এ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। পাহাড় ধস যেন একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পাহাড় ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও সরকারের পক্ষ থেকে এর যথাযথ প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না। পাহাড় ধস প্রতিরোধের বিষয়ে গত দুই দশক ধরে যথেষ্ট আলোচনা ও সমালোচনা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমাদের মনে রাখতে হবে, পাহাড় কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি নয়। এটি প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পূর্ণ জাতীয় সম্পদ।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে এবং সহ-সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শামিম খান টিটু, সহ-সম্পাদক মো. সেলিম ও ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরী ও কায়সার আহমেদ, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হক, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, ইয়ুথ সানের সভাপতি মাকিবুল হাসান বাপ্পি, নিরাপদ পানি চাই আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

বৈঠকে প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, গত প্রায় চার দশকে পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় ধসের বিচ্ছিন্ন ঘটনায় প্রতি বছরই প্রাণহানি ঘটছে। ২০১৭ সালের ১২ জুন চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলায় পাহাড় ধসে ১৬২ জন প্রাণ হারান, ৪ শতাধিক মানুষ আহত হন। জানমালের ক্ষতির পাশাপাশি রাঙ্গামাটি দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জন প্রাণ হারান। ২০০৭ সালে তাৎক্ষণিকভাবে গঠিত কমিটি কর্তৃক ৩৫টি সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও পাহাড় ধস প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনায় বিগত এক দশকে কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। ফলে এবারের মহাবিপর্যয়। এতে ব্যাপক প্রাণহানি, অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে।

তিনি বলেন, পাহাড় রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এখনই মানবিক ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা আবশ্যক। অন্যথায় আমাদেরকে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়গুলোর গঠন প্রকৃতি বালিযুক্ত, দোআঁশ, বালিময়। এ ধরনের পাহাড়ে টানা ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে এগুলোতে ধস নামে। পাহাড় ধসের মাত্রা ও গতি বেড়েই চলেছে এবং বিপর্যস্ত এলাকার বিস্তৃতিসহ জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হারে বেড়েছে। প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের ফলে পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রশাসনিক উদাসীনতা।

তিনি আরো বলেন, পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হলেও থেমে নেই পাহাড় কাটা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ লক্ষ্যই করা যায় না। ভূমিদস্যুরা পাহাড় কেটে ক্ষতবিক্ষত করে রাখে। ফলে দেশে পাহাড় ধসের ঘটনা এখন একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনুষ্ঠানে সংগঠনটির পক্ষ থেকে কয়েক দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- পাহাড়গুলোকে জাতীয় সম্পদ ঘোষণা করা। পাহাড়ের গঠন প্রকৃতি, বৃষ্টিপাতের মাত্রা ও পরিমাণের ভিত্তিতে পাহাড়গুলোকে সতর্ক, ঝুঁকিপূর্ণ, চরম ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা এবং তার আলোকে জনগণকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে অবিলম্বে সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা। পাহাড়ের অবৈধ দখলদার, ভূমিদস্যু তথা ডেভেলপার ও রিয়েল এস্টেট কোস্পানিসহ পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ও সহযোগিতাকারীদের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও ইমারত নির্মাণ আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান।

ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ জায়গায় বসবাসের জন্য জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। প্রতিবেশের হুমকি ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সাইট নির্ধারণ এবং ইকোটুরিজম ও কৃষি কার্যক্রম পরিচালনা করা। এখনই পাহাড়ের গাছপালা ও মাটি কাটা বন্ধ করা এবং জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ পাহাড় প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জুলাই ২০১৭/হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়