ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত

বাদশাহ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ১৩ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার পানিবন্দি প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবল স্রোতে চিলমারী উপজেলার কাঁচকোলে ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের ৫০ মিটার বাঁধ ও রৌমারী উপজেলার যাদুর চরে কত্তিমারী বাজার রক্ষা বাঁধ ভেঙে নতুন করে ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বুধবার বিকেলে বন্যার পানিতে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতরা হলেন চিলমারী উপজেলার শাখাহাতি গ্রামের সাইদুল ইসলামের মেয়ে লাইলী বেগম (২৮) ও সদর উপজেলার সদর উপজেলার খামার হলোখানা গ্রামের পনির উদ্দিনের ছেলে হামিদুল হক (১৭)।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে জেলায় ৮৭টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।

চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে সাত উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের ৫০০ গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করছে।

অনেক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে উচুঁ জায়গায় আশ্রয় নিলেও এসব এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ১৫০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।



জেলায় এক হাজার হেক্টর জমির আউশ, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

সরকারিভাবে স্বল্প পরিসরে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেসরকারি কোনো ত্রাণ তৎপরতা চোখে পড়েনি।

সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চর ভগবতিরপুরের আমজাদ আলী বলেন, ৬ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় বউ-বাচ্চা নিয়ে নৌকায় জীবন যাপন করছি। বাড়ি-ঘর, গরু-ছাগল ছেড়ে কোথাও যাব সে জায়গাও নাই। এমন অবস্থায় ঘরে খাবারও শেষ হয়ে গেছে। চেয়ারম্যান মেম্বাররা ১০ কেজি করে চাল দিচ্ছে তাও সবাই পাচ্ছে না।

একই চরের আমেনা বেগম বলেন, ঘরের ভেতর চৌকি ভাসিয়ে কোনোরকমে একবেলা রান্না বাড়া করে ছেলে-মেয়েদের খাওয়াচ্ছি। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে আমাদের।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন মঞ্জু বলেন, আমার উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি যা বিতরণ অব্যাহত আছে।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, বুধবার বিকেলে বন্যার পানিতে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে লাইলী বেগম মৃগী রোগী। চরাঞ্চলে ৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক তলিয়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী উচুঁ জায়গায় কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। জেলার বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে ৮৭টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে বন্যাকবলিত সাত উপজেলায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে এপর্যন্ত ৩০০ মেট্রিক টন চাল, আট লাখ টাকা ও দুহাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরো নতুন করে ১০০ মেট্রিক টন চাল, দুহাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট ও তিন লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা বিতরণের কার্যক্রম চলছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি সাত সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।




রাইজিংবিডি/কুড়িগ্রাম/১৩ জুলাই ২০১৭/বাদশাহ সৈকত/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়