ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নতুন সদস্যভুক্ত কোম্পানির জন্য বেসিসের উদ্যোগ

সৈয়দ আলমাস কবীর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ১৮ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নতুন সদস্যভুক্ত কোম্পানির জন্য বেসিসের উদ্যোগ

সৈয়দ আলমাস কবীর : বিগত কয়েক বছরে আইসিটি সেক্টরে সরকারের সুদৃষ্টির কারণে বিভিন্নভাবে এ শিল্পের অগ্রগতি হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এ শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঐতিহাসিক অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে। যদিও তাদের ব্যবসায়িক অন্তর্দৃষ্টির অভাব রয়েছে এবং টেকসই উন্নতির জন্যে দক্ষতা বাড়ানোর দরকার। বেসিস এর নতুন সদস্য সংখ্যা এর সর্বমোট সদস্যদের অর্ধেকের বেশি। এটা অবশ্যই উৎসাহদায়ক দিক যে এই শিল্পে নতুনদের আগমন হচ্ছে। এই নতুনদের যথাযথ সহায়তার মাধ্যমে পরিচালিত করা বেসিসের অন্যতম দায়িত্ব।

নতুন কোম্পানির জন্য অতি প্রয়োজনীয় শর্তাবলী:

* অর্থের যোগান
* যথাযথ আইনি সহায়তা
* সঠিক ব্যবসায়িক পক্রিয়া
* ব্র্যান্ডিং এবং অবস্থান তৈরি

আইটি কোম্পানিতে স্বাচ্ছন্দে অর্থের যোগান বা বিনিযোগ সব সময়ের একটি সমস্যা। অন্যান্য সেক্টরের মতো দৃশমান কোনো সম্পদ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগেুলোকে দেখাতে পারে না। এসব কোম্পানিগুলোর সম্পদ হল তাদের সফটওয়্যার বা তাদের কাজ, যেগুলো অদৃশ্যমান এবং প্রায় সর্বক্ষেত্রে ব্যাংক তাদের নিরাপত্তার সদৃশ হিসেবে গ্রহণ করে না। যতক্ষণ না আমরা আইপি মূল্যায়নসহ একটি আর্থিক মূল্য নির্ধারণ না করি ততক্ষণ ব্যাংকগুলো আইটি খাতে তাদের ঋণের ঝুঁকি নির্ধারণ করতে পারবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত, আমাদের নতুন (ও পুরাতন) আইটি কোম্পানিকে তাদের প্রয়োজনীয় তহবিল গঠন করে সাহায্য করার উপায় বের করতে হবে। বেসিস নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেমন মাইডাস, বিনা জামানতে ছোট মাঝারি থেকে বৃহৎ ঋণ দিতে একটি চুক্তি করবে। এই ঋণের পরিমান কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিকল্পনার সম্ভাব্যতার ওপর নির্ভর করবে। বেসিস নিয়মিত এই কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম দেখাশুনা করবে।

আইনি সহায়তা বা আইনি পরামর্শের অভিজ্ঞতা অন্য আরেকটি সমস্যা (নতুন ও পুরাতন) সদস্যদের জন্য। আইনী মতামতগুলো প্রায়ই একটি আইটি কোম্পানির কাজগুলোতে দরকার হয়, বিশেষ করে অনৈতিক কর্মচারী অভিবাসনের ক্ষেত্রে, সোর্স কোডের চুরি, ক্লায়েন্টদের হাইজ্যাকিং ইত্যাদি। বেসিস সদস্যরা একটি আইন সংস্থা থেকে প্রাথমিক আইনি মতামত পাবে, যারা তাদেরকে এই বিষয়ে বিনামূল্যে পরামর্শ দিবে। যেমন, একটি প্রখ্যাত আইন সংস্থার সঙ্গে একটি চুক্তি করা হয়েছে। সদস্যভুক্ত কোম্পানিগুলো বিনামূল্যে একটি হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে আইনি মতামত নিতে সক্ষম হবে। তাদের সফটওয়্যারের বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানা (আইপি) রক্ষার জন্য, সদস্যভুক্ত কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ আইপি ফোরামের সহায়তা নিতে সক্ষম হবে, যাদের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কেননা একটি আইটি কোম্পানি তার কপিরাইট, ট্রেডমার্ক বা পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত সম্পদগুলোর সুরক্ষার ক্ষেত্রে অসহায়।

এটা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায় যে আমাদের আইটি কোম্পানির চমৎকার প্রযুক্তিগত সম্পদ রয়েছে, কিন্তু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায়িক দক্ষতার অভাব রয়েছে। বেসিস সম্প্রতি একটি ডাচ পরামর্শদাতা কোম্পানির সঙ্গে কাজ শুরু করেছে, যারা সদস্যভুক্ত কোম্পানিগুলোকে সর্বোত্তম ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণ দেবে। তারা মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক বিপণন ও কৌশল পরিকল্পনা, হিসাব এবং নিরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়েও পরামর্শ দেবে। পরামর্শদাতারা বছরে কমপক্ষে দুই ধরনের ওয়ার্কশপ রাখবে, যেখানে সদস্যভুক্ত কোম্পানিগুলো অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে যা তাদের দক্ষতা বাড়াতে সক্ষম হবে।

বেসিস একটি খ্যাতনামা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে যারা এর সদস্যভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাকাউন্টগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবে। নতুন কোম্পানিগুলোর ক্রমন্নোতির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা প্রায়ই দেখা যায় যে, উদ্যোক্তারা যারা হিসাব করার সমান্য জ্ঞান রাখে তারা এই কোম্পানিগুলো পরিচালনা করেন এর ফলে ছোট কোম্পানিগুলো অল্প সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নগদ অর্থ-প্রবাহ বিশ্লেষণ, বাজেট, কার্যকরী পুঁজি খাটানো ইত্যাদি বার বার উপেক্ষা করা হয়, ফলে বেসিস সদস্যভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ কোনোমতে টিকে আছে। বেসিস চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মগুলোর মাধ্যমে এই অর্থ পরিচালনার বিষয়গুলোর ওপর পরামর্শ প্রদান করবে এবং কোম্পানিগুলোকে বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা করবে।

আগেই বলেছি, আমাদের আইটি কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগই প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং তাদের দক্ষতা সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষনীয়। তবুও, তারা সঠিকভাবে তাদের পণ্য বা পরিষেবাগুলো উপস্থাপন করতে পারে না, যা সম্ভাব্য ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। তাদের নিষ্প্রভ্ ব্র্যান্ডিং ভালো পণ্য এবং সেবা নেয়ার ব্যর্থতার জন্য দায়ী। আমাদের আইটি কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এবং ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের সময় বিষয়গুলো আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বেসিস পেশাদার বিপণন সংস্থাগুলোর সঙ্গে কর্মসূচির ব্যবস্থা করবে যারা সদস্যভুক্ত কোম্পানিগুলোকে সঠিকভাবে নিজেদের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য সহায়তা করবে। তারা পণ্য ও সেবাগুলো কীভাবে ব্র্যান্ডিং করবে সে সম্পর্কেও পরামর্শ দেবেন।

নতুন কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা বেসিস সদস্য হবে তাদের জন্য কিছু অতিরিক্ত সেবা রয়েছে। বেসিস বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন কোম্পানিগুলোর জন্য প্রতিটি এসটিপি-তে কমপক্ষে একটি ফ্লোর বরাদ্দ করার কথা বলেছে, যেখানে বিনামূল্যে চার্জ বা নামমাত্র ভাড়া রয়েছে। এই নতুন বা সম্ভাব্য সদস্যদের জন্য ওয়ান-স্টপ উইন্ডো থাকবে যেখান থেকে আবেদনপত্রের জন্য এবং বাণিজ্য লাইসেন্সের নবায়ন, টিআইএন প্রশংসাপত্র, ভ্যাট নিবন্ধন ইত্যাদি প্রদান করা হবে।

বেসিস সদস্যভূক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য এই ইকো সিস্টেম তাদের শক্তিশালী ভিত্তি দাঁড় করাবে এবং তাদের ব্যবসার উন্নতি করতে সক্ষম হবে। এর ফলে বাংলাদেশে একটি গতিশীল এবং জোরালো আইসিটি শিল্পের উদয় হবে, যা প্রায় দুই দশক আগে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল।

- লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়