ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গুগল কি বিপথে চলে যাচ্ছে?

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ২৯ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গুগল কি বিপথে চলে যাচ্ছে?

প্রতীকী ছবি

নিয়ন রহমান : টেক জায়ান্ট গুগলের সব সেবা মানুষের মঙ্গলের জন্য। ২০০০ সাল থেকে ‘ডোন্ট বি এভিল’ (অশুভ কিছু করবে না)- এই নীতিতে এগিয়ে চলেছে ‍গুগল। এমনকি ‘ডোন্ট বি এভিল’ গুগলের কোড অব কন্ডাক্ট এর প্রথম বাক্যও।

কিন্তু প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম গিজমোডো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এপ্রিলের শেষের দিকে কিংবা মে এর শুরুর দিকের কোনো এক সময় গুগল তাদের কোড অব কন্ডাক্ট এর শুরুতে থাকা ‘ডোন্ট বি এভিল’ স্লোগান বা নীতিটি মুছে দিয়েছিল। কেবল শেষের দিকে এই বাক্যটি শুধু একবার লেখা ছিল।

এই স্লোগান অন্তর্ভুক্ত না থাকাটা খুবই ছোটখাটো ঘটনা মনে হলেও, এটাকে এভাবেও দেখা যায় যে গুগল সম্ভবত তাদের নৈতিক দিক থেকে এই বাক্যটিকে আর অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। এমনকি আমাদের মনে এ ধরনের ধারণা তৈরি হওয়া জন্য গুগল ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রমাণ দিয়েছে যে, নীতির এই পরিবর্তন ভবিষ্যতে মানুষের জন্য অসুবিধা বয়ে আনবে।

এখন গুগল এমন একটি অবস্থানে আছে যে এর প্রভাব আমাদের জীবনে অনেক। এখন কথা হচ্ছে, গুগল কি এই ক্ষমতা শুধুমাত্র মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করবে, নাকি মন্দের জন্যেও? এ প্রতিবেদনে গুগলের সাম্প্রতিক তিনটি প্রকল্প তুলে ধরা হলো, যা আশ্চর্যজনক মনে হলেও দ্বিতীয়টির দিকেই নির্দেশ করছে!

প্রজেক্ট ম্যাভেন
ভালো এবং মন্দ অবশ্যই একদম ব্যক্তিগত নীতিমালার বিষয় এবং একজন ব্যক্তির ‘মন্দ’ আরেকজনের কাছে নৈতিকভাবে বোধগম্য নাও হতে পারে। তবুও ড্রোন চালানোর মাধ্যমে কাউকে খুন করার বিষয়ে সাহায্য করাটা যে নৈতিক ভাবে খারাপ এটা বলার অবকাশ রাখে না।

মার্চে খবর প্রকাশিত হয় যে, প্রজেক্ট ম্যাভেনে যুদ্ধে ব্যবহার উপযোগী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ড্রোন তৈরির একটা প্রকল্পে গুগল মার্কিন সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করছে। গুগলের হাজার হাজার কর্মী এই পার্টনারশিপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। গত সপ্তাহে প্রতিবাদস্বরূপ কেউ কেউ গুগলের চাকরি থেকে পদত্যাগও দিয়ে দেয়।

এরপরেও গুগল এখনো প্রজেক্ট ম্যাভেন এর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং কর্মীদের মতে, গুগল দিন দিন মিলিটারি অপারেশনে আগ্রহী হচ্ছে এবং এ নিয়ে অন্যান্য কর্মীরা কি ভাবছে সে সম্পর্কে গুগলের উদাসীন মনোভাব বিরাজ করছে।


প্রতারণামূলক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা!
মিথ্যে কথা বলা নৈতিকতার আরেকটি ধূসর অধ্যায়! কিন্তু এমনটা দেখা যাচ্ছে যে, গুগল এ বিষয়ে দিনদিন বেশ পারদর্শী হয়ে উঠছে। শুধুমাত্র কোম্পানিতে কর্মরত ব্যক্তিরাই এমনটা বলছেন না, সর্ব সাধারণের সঙ্গে গুগলের সম্পর্কটাও এমনই হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টে ডুপ্লেক্স নামে নতুন একটি ফিচার পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করেছিল। যেখানে ব্যবহারকারীর পক্ষ হয়ে প্রয়োজনীয় অনেক ফোনকল করে দিতে সক্ষম এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।  কিন্তু অভিযোগ উঠে যে, এই ব্যাপারটা পুরোপুরি নকল। পরীক্ষামূলক প্রযুক্তিটি পুরোপুরি প্রতারণার। এ প্রসঙ্গে অক্সফোর্ডের গবেষক থমাস কিং বলেন, ‘গুগলের এই প্রক্রিয়া মানুষের কাছে ভুল ধারণা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে, এছাড়া প্রযুক্তিটি খুব একটা কার্যকরীও নয়।’

তবে গুগলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়োসি মাটিয়াস বলেন, ‘মূলত এই কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সফটওয়্যারটির পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে জানানো যে, এমন একটা প্রযুক্তি অচিরেই গুগল নিয়ে আসছে।’



দ্য সেলফিস লেজার
গত সপ্তাহে প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যমে দ্য ভার্জ ২০১৬ সালে গুগলের অভ্যন্ত একটি ভিডিও হাতে পায়।  দ্য সেলফিস লেজার শিরোনামের এই ভিডিওটিতে দেখা গেছে, গুগল শুধুমাত্র তার ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ-ই করে না বরং সেটা নিজেদের কাজে ব্যবহারও করে থাকে। এর প্রধান লক্ষ্য হল মানুষের আচার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের লাভ বৃদ্ধি করা।

দ্য ভার্জ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গুগল বিষয়টি একদম পুরোপুরি উড়িয়ে না দিয়ে জানায়, শুধুমাত্র কিছু তত্ত্বের নির্ভর করে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। গুগলে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের কাজের ফলাফল কি হবে মূলত তা বুঝতেই কয়েক বছর আগে এটি তৈরি করা হয়েছিল। গুগলের এরকম কোনো প্রজেক্ট নেই এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের কোনো কার্যক্রম চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

অবশ্য এটা অনুমান করা কঠিন কিছু না যে, ইউজার এক্সপিরিয়েন্সের জন্য এমন একটা ডাটাবেজ গুগলের কাছে অবশ্যই আছে। যে ডাটাবেজের ওপর ভিত্তি করেই গুগল বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।


তবে এটা সত্য যে, গুগলের অনেক অনেক ভালো দিক রয়েছে। এছাড়া গুগল প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে অর্থ দান করে এবং পরিবেশ উন্নয়নের অনেক প্রজেক্টে অর্থায়ন করে থাকে, এমনকি অনেক অসহায় শিশুদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

সে যাই হোক, গুগল এমনই শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠান যে, তারা যদি ঠিক করে থাকে তাদের মূলনীতি থেকে ‘ডোন্ট বি এভিল’ (অশুভ কিছু করবে না) এই বাক্যটি পুরোপুরি সরিয়ে ফেলবে, তবে কে জানে এটা মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। আপাতত এটাই আমরা আশা রাখতে পারি যে, এই কোম্পানি আরো বড় হয়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নৈতিকবোধ যেন হারিয়ে না ফেলে।

তথ্যসূত্র : ফিউচারিজম

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ মে ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়