ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘বেঁচে থাকুক সেবা, ভালো থাকুক সহজ সরল মানুষগুলো’

শোয়াইব আল আহসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৪, ৩১ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বেঁচে থাকুক সেবা, ভালো থাকুক সহজ সরল মানুষগুলো’

শোয়াইব আল আহসান: ‘মা, এখনও নৌকা পাইনি। তবে কোনো সমস্যা নেই, চিন্তা কোরো না খুব তাড়াতাড়ি…’। হঠাৎ মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেল। রাত ৯.৪০মিনিটে গোমতী নদীর তীরে অন্ধকারে একা বসে মায়ের সাথে এটিই ছিল শেষ কথোপকথন। দিনটি ছিল ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ, বৃহস্পতিবার।

প্রতিদিনের মতো ইনডোরের সব কাজ শেষ করে রওনা হই আউটডোর সার্ভিসের জন্য। হোমনার ‘সোহাগ’ ও ‘মাস্টার ইলেকট্রনিক্স’-এর সব কমপ্লেইন সলভড করে বিকাল ৪টায় রওনা হই রামচন্দ্রপুরের উদ্দেশ্যে। প্রায় ৫.৪৫মিনিটে রামচন্দ্রপুর পৌঁছে ‘এসকে ইলেকট্রনিক্স’-এর সব কমপ্লেইন সলভড করতে করতে প্রায় ৭টা বেজে যায়। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম সার্ভিস সেন্টারে ফেরার। এরই মধ্যে ‘ইসলাম ইলেকট্রনিক্স’ রামচন্দ্রপুর থেকে ফোন আসে। ‘ভাই, কই আছেন? আমার ৪টা কমপ্লেইন আছে। সব না পারলেও একটা করে দিতেই হবে। এক ভদ্রমহিলা বিকাল থেকে বসে আছে। তাড়াতাড়ি আসেন।’

আমি কিছু বলার আগেই লাইনটি কেটে যায়।  কোনো কিছু না ভেবে পথ পরিবর্তন করে সোজা চলে যাই ‘ইসলাম ইলেকট্রনিক্স’-এ। পৌঁছে দেখি তখনও ঐ ভদ্রমহিলা ডিলারকে বকাবকি করেই যাচ্ছেন। ভদ্রমহিলাকে শান্ত করে অল্প সময়ের মধ্যে তার কাজটি করে দেই। আসলে প্রোডাক্টে কোনো সমস্যা ছিল না। তিনি সঠিকভাবে অপারেট করতে পারেননি। সবকিছু ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিতেই ভদ্রমহিলার রাগান্বিত চেহারায় নেমে আসে প্রশান্তির ছায়া। তার মুখ সরল হাসিতে ভরে যায়। তিনি তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলেন, ‘স্যার, আমরা তো কিছু বুঝি না, কিছু মনে নিয়েন না।’

কমপ্লেন সলভড করে দেয়ায় খুশি হন ইসলাম ইলেকট্রনিক্সের মালিক ইয়ামিন ভাইও। এবার কাজ শেষ করে রওনা দিলাম ফেরার পথে। রাত ৮টা পার হয়ে গেছে। গ্রামের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে এখন মধ্যরাত। বাগমারা বাজারে পৌঁছাতে হবে ৯টার পূর্বে, নয়তো আর কোনো যানবাহন পাওয়া যাবে না। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, চতুর্দিকে অন্ধকার। নিজের শরীর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। নদীর তীর ধরে হাঁটছি, হোঁচট খেয়ে দু'বার পড়েও যাই। চারদিকে কোনো শব্দ নেই। ঘাটে পৌঁছে দেখি নৌকা নেই। নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় মোবাইল ফোনটি চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়। এতো কষ্টের মাঝেও যখন গ্রাহকের সহজ-সরল হাঁসি ও ধন্যবাদের কথা মনে ভাসে, সত্যি সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। বেঁচে থাকুক সেবা, ভালো থাকুক সহজ সরল মানুষগুলো।

শোয়াইব আল আহসান (অফিস আইডি-২৭৬৬৫) উপরোক্ত লেখাটির জন্য মা দিবসে প্রথম সেরা লেখক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, হোম অ্যাপ্লায়েন্স সেকশন-এ গৌরীপুর শাখায় কর্মরত। গত ১৩ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে মা দিবস। এই দিনটিকে স্মরণে রেখে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে সেরা লেখক শোয়াইব আল আহসানের মায়ের হাতে তুলে দেয়া হয় স্মারক সম্মাননা। এ সময় তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে!’ পুরস্কার পেয়ে তিনি ওয়ালটন সম্পর্কেও তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘ওয়ালটন দেশ সেরা প্রতিষ্ঠান। আমার খুব ভালো লাগে। এই প্রতিষ্ঠানের আরও ভালো হবে। আমি আল্লাহ্‌র কাছে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য দোয়া করি।’

শোয়াইব আল আহসান আপনার সন্তান। সে মা দিবসে তার কর্মজীবনের একটি স্মৃতিচারণ লিখে পুরস্কার পেল। ছেলের ছোটবেলার কোনো স্মৃতি আপনার মনে পড়ে কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেক স্মৃতি আছে। ও যখন ছোট ছিল প্রায়ই বলত, মা আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো। মানুষের সেবা করব। আল্লাহ্‌র কি ইচ্ছা কোরআনের হাফেজের পুরস্কার পেল সে। এসএসসিতে পেল গোল্ডেন প্লাস। তারপর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করল। আমি বলতাম, বাবা সৎভাবে চেষ্টা করো, তুমি পারবে। সে আজ ওয়ালটনের মাধ্যমে দেশবাসীর সেবা করছে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মে ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়