ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩২, ৫ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য

মাকসুদুর রহমান : কমলাপুর স্টেশন সংলগ্ন জামে মসজিদের সামনের ফুটপাত। শনিবার দুপুরে কয়েকজন ভামসান কিশোর দাঁড়িয়ে বিক্রি করছিল গাঁজা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুটপাত ও আশপাশ এলাকায় এই কিশোরদের কাছ থেকে সহজেই গাঁজা নিয়ে চলে যাচ্ছে ক্রেতারা।

মাদক বিক্রেতা এক কিশোর রাইজিংবিডিকে বলেছে, ‘মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের কারণে স্টেশনের ৮ নম্বর প্ল্যাটফরম সংলগ্ন মাদক বিক্রেতা জমিলার স্পট বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে এখন এখানে মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। ১শ’ টাকার গাঁজা এনে তা ১শ’ ২০ টাকয় বিক্রি করি।’

এ সময় আরেক কিশোর বলে ওঠে, ‘লাগবো নাকি! ইয়াবাও দিতে পারমু মামা।’

অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্ন কথা বলেছেন কমলাপুর জিআরপি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসিন ফারুক। তিনি বলেন, ‘এরা কমলাপুর স্টেশনের ছিন্নমূল। একবার তাড়িয়ে দিলে আবার আসে।  বয়স কম হওয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না। আমার কি করার আছে।’

কারওয়ানবাজার রেললাইনের পাশে খুপড়ি ঘরের সামনে এক মাদক বিক্রেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি শুধু গাঁজা বিক্রি করি। অন্যরা ইয়াবা বিক্রি করে। তবে আগের মতো প্রকাশ্যে বিক্রি করা যায় না।’

তেজগাঁও রেলস্টেশন বস্তি ও মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে এখনও ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে আগের মতো হাঁকডাক দিয়ে নয়, পরিচিত গ্রাহকদের কাছেই বিক্রি হচ্ছে। র‌্যাবের হাতে ক্যাম্পের মাদকসাম্রাজ্ঞী পাপিয়া স্বামীসহ গ্রেপ্তার এবং পরবর্তী সময়ে বন্ধুকযুদ্ধে ইয়াবা গডফাদার নাদিম ওরফে পঁচিশ নাদিম নিহত হওয়ার পর প্রকাশ্যে এখানে মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে না বলে সূত্রগুলো জানায়। তবে নতুন কিছু তরুণ এখানে মাদকদ্রব্য বিক্রির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মোবাইল ফোনে অর্ডার নিয়ে এসব তরুণকে দিয়ে বিভিন্ন বাসা ও অ্যাপার্টমেন্টে ইয়াবা সরবরাহ করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য আছে, নিজেরা টিকে থাকার জন্য মাদক বিক্রেতারা ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। মোবাইল ফোনে কিংবা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অর্ডার করলে গ্রাহকের বাসায় ইয়াবা ও অন্য মাদকদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ, র‌্যাব যাতে ক্রেতা সেজে ফাঁদে ফেলতে না পারে, সেজন্য এ পদ্ধতি চালু করেছে মাদক বিক্রেতারা। এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন নম্বর ও কণ্ঠস্বর অপরিচিত হলে তাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে না। অপরিচিত কারও কাছে মাদকদ্রব্য বিক্রি করলেও কয়েকটি জায়গায় ঘুরিয়ে লোকজন দিয়ে যাচাই-বাছাই করে বিশ্বস্ত মনে হলে তারপর ওই গ্রাহকের কাছে মাদকদ্রব্য বিক্রি করছে তারা।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘অভিযানের ফলে মাদকের সহজলভ্যতা কমেছে। পরিস্থিতি অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে এসেছে তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এটা পুরোপুরি বন্ধ করার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অভিযানের কারণে মাদক বিক্রি কমেছে। তবে বন্ধ হয়নি। কৌশল পাল্টে চলছে মাদক কেনাবেচা। সাঁড়াশি অভিযানের কারণে তালিকাভুক্তরা গা-ঢাকা দিয়েছে। তবে তাদেরই নিয়োগ করা কিছু নতুন মুখ মাদকদ্রব্য বিক্রি করছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জানুয়ারি ২০১৯/মাকসুদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়