ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রতিবেশী গ্যালাক্সির সবচেয়ে স্পষ্ট ছবি

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২০, ১০ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রতিবেশী গ্যালাক্সির সবচেয়ে স্পষ্ট ছবি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : আমাদের পৃথিবী মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে (ছায়াপথে) অবস্থিত। এই গ্যালাক্সিতে কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ বিলিয়ন পর্যন্ত নক্ষত্র রয়েছে।

মহাবিশ্ব অসীম। মহাবিশ্বের যে অংশটুকু আমাদের কাছে দৃশ্যমান, সে অংশেই ১০০ বিলিয়নেরও বেশি গ্যালাক্সি রয়েছে। অধিকাংশ গ্যালাক্সির আকার কয়েকশ আলোকবর্ষ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ পর্যন্ত এবং গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব মিলিয়ন আলোকবর্ষের পর্যায়ে।

আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্যতম একটি প্রতিবেশী গ্যালাক্সি হচ্ছে, ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সি। স্থানীয় বড় গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে এটি তৃতীয়তম গ্যালাক্সি যার প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের মিল্কিওয়ে, অ্যান্ড্রোমিডা সহ আরো ৪৪টি ছোট গ্যালাক্সি রয়েছে।

পৃথিবী থেকে ৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সি, যা রাতের আকাশের দিকে তাকালে আমরা খালি চোখে অস্পষ্ট দেখতে পাই। কিন্তু মহাকাশে থাকা নাসার হাবল টেলিস্কোপের চোখ মানুষের চোখের মতো সীমাবদ্ধ নয়। তাই এই টেলিস্কোপ আমাদের প্রতিবেশী ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সির এ যাবতকালের সবচেয়ে বিস্তারিত ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে।

কতটা বিস্তারিত? উত্তরটা হচ্ছে, খুবই বিশাল ছবি। যা ৫৪টি আলাদা ছবির সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে। এটি ৬৬৫ মিলিয়ন পিক্সেলের (১.৬৭ জিবি টিআইএফএফ) একটি ছবি। এই ছবিতে ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সির ১৯৪০০ আলোবর্ষ অঞ্চল এবং ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন স্বতন্ত্র নক্ষত্র ফুটে উঠেছে।

ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সিটি ৬০ হাজার আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে ছবিটিতে ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সির কেন্দ্রের অংশ এবং অভ্যন্তরীণ কাঠামো বিশদভাবে ফুটে উঠেছে।



ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সি ‘মেসিয়ার ৩৩’ বা ‘এনজিসি ৫৯৮’ নামেও পরিচিত। এই অঞ্চলের এটি ‍তৃতীয় বৃহত্তম গ্যালাক্সি। প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির আকার ২ লাখ আলোকবর্ষ এবং আমাদের মিল্কিওয়ের আকার ১ লাখ আলোকবর্ষ। অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে, মিল্কিওয়েতে ২০০-৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে এবং তুলনামূলভাবে কিছুটা ছোট হওয়ায় ট্রায়াঙ্গুলামে প্রায় ৪০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে। এই গ্যালাক্সিটি খুবই দ্রুত হারে নতুন নক্ষত্র সৃষ্টি করে চলেছে।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জুলিয়ান ডালকান্টন বলেন, ‘হাবল টেলিস্কোপের তোলা ছবিগুলো দেখার পর আমার প্রথম অনুভূতি ছিল- বাহ্, অনেক নতুন নক্ষত্র সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘২০১৫ সালে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণে নক্ষত্র সৃষ্টির যে হার দেখা গিয়েছিল, তার তুলনায় ১০ গুণ বেশি হারে ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র সৃষ্টি দেখা গেছে।’

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, অ্যান্ড্রোমিডা এবং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির তুলনায় ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সি কিছুটা ভিন্ন স্বভাবের এবং এটি গ্যালাটিক সংঘর্ষে যায় না। এটি যদি তার অবস্থান বজায় রাখে তাহলে এর অস্তিত্ব থাকবে কিন্তু যদি অশান্ত হয়ে ওঠে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে।

হাবল টেলিস্কোপের নতুন গবেষণায় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সির ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে সক্ষম হবেন। বিশেষ করে গ্যালাক্সিটির নক্ষত্রের গঠন সম্পর্কে জানতে বিজ্ঞানীরা খুবই আগ্রহী। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, গ্যালাক্সিটির দুটি অঞ্চল সম্পর্কে- একটি হচ্ছে ১৫০০ আলোবর্ষ আকারের এনজিসি ৬০৪ অঞ্চল, যার মধ্যে ২০০টিরও বেশি সদ্যগঠিত নক্ষত্র রয়েছে। আরেকটি হচ্ছে এনসিজি ৫৯৫, এই অঞ্চলটি বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো কম পরিচিত।

আপনি কম্পিউটারের ওয়ালপেপার আকৃতির ছবিটি লিংক থেকে।



তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়