ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এই জিনিসগুলোর আবিষ্কারক নারী

সাখাওয়াত মিশু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৮, ৭ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এই জিনিসগুলোর আবিষ্কারক নারী

সাখাওয়াত মিশু : নারীদের অনেক আবিষ্কারই জ্ঞান-বিজ্ঞানের এবং পৃথিবীর পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ইতিহাসে নারীদের কৃতিত্বগুলো খুব কমই স্থান পেয়েছে এবং উপেক্ষিত হয়েছে।

এমন অনেক জিনিস রয়েছে যেগুলোর আবিষ্কারক নারী, তা হয়তো আপনি জানেন না। এমন ১৬টি জিনিস নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং
আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন যন্ত্র কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক প্রোগ্রামিং। আর এক্ষেত্রে প্রথম যিনি অবদান রাখেন তিনি বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি লর্ড ব্যারনের মেয়ে বিজ্ঞানী অ্যাডা লাভলেস। তিনি ১৮১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের উৎসাহে পড়াশোনা করেন গণিতশাস্ত্রে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ‘কম্পিউটারের জনক’ চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন অ্যাডা লাভলেস। একবার ব্যাবেজের জন্য একটি ফরাসি আর্টিকেল অনুবাদ করেন তিনি। ওই আর্টিকেলে নিজের মন্তব্যও তুলে ধরেন অ্যাডা। তার মন্তব্যটি ছিল মূল আর্টিকেলের চেয়ে তিন গুণ বড়। আর্টিকেলটিতে অ্যাডা অক্ষর এবং সংখ্যা ব্যবহার করে কম্পিউটার কোডিং করার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন (যা এখনো তৈরি হয়নি)। তার ধারণাটি ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত হয়। এ অবদানের কারণে তিনি ইতিহাসে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন।

উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার
দূরে কোথাও যাচ্ছেন। হঠাৎ পথে বৃষ্টির কবলে পড়লেন। বৃষ্টির পানিতে চালকের সামনের গ্লাসটি দিয়ে সামনের কোনো কিছুই আর চোখে পড়ছে না। কিন্তু গাড়িটি তখন মাঝ পথে, এ অবস্থায় কি হতে পারে একবার ভাবুন তো। বৃষ্টি কিংবা তুষারপাতেও গাড়ির চলাচল নির্বিঘ্ন করতে যিনি ভূমিকা রেখেছেন তিনি আমেরিকান নারী মেরি অ্যান্ডারসন। একবার অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্য থেকে নিউইয়র্ক শহর ভ্রমণে যাচ্ছিলেন এই নারী। তখন তিনি লক্ষ্য করলেন, তুষারপাতের কারণে গাড়ির চালক ভালোভাবে সামনের দিকটা দেখতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর পর গাড়ির সামনের গ্লাসটি তুষারে ঢেকে যাচ্ছিল। চালককে বারবার গাড়ির জানালা খুলে গ্লাস পরিষ্কার করতে হচ্ছিল। এর সমাধানে অ্যান্ডারসন কাঠ এবং রাবার দিয়ে একটি ডিজাইন তৈরি করলেন, যা বৃষ্টি ও তুষারপাতের সময় গাড়ির গ্লাসকে স্বচ্ছ রাখতে সহায়ক হয়েছে। যদিও অ্যান্ডারসন তার ১৯০৩ সালের আবিষ্কারটিকে বিক্ষিপ্ত এবং অকার্যকর বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার মতে, তার এ নকশাটি কাউকে উপকৃত করেনি।

টার্ন সিগন্যাল
কানাডিয়ান ফ্লোরেন্স লরেন্সকে বিশ্বের প্রথম ‘চলচ্চিত্র তারকা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তার অবদান শুধু বড় পর্দাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। লরেন্স তার ব্যবহৃত গাড়ির জন্য প্রথম একটি টার্ন সিগন্যাল ডিজাইন করেন, যা গাড়ির ফিন্ডারের ওপর বসানো হয় এবং একটি বাটনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লরেন্স একটি ব্রেক সিগন্যালও ডিজাইন করেছিলেন। যদিও তিনি তার আবিষ্কারের কোনো পেটেন্ট তৈরি করেননি। তবুও তার আবিষ্কার পরবর্তীতে পৃথিবীতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

মনোপলি
অর্থনীতিবিদ হেনরি জর্জ তার ‘প্রগ্রেস অ্যান্ড প্রপার্টি’ বইয়ে ‘মনোপলি’ তত্ত্ব দেন। তার এই তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হন আমেরিকান গেম ডিজাইনার এলিজাবেথ ম্যাগি। তিনি হেনরি জর্জ’র এই তত্ত্ব দ্বারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদ গরিবদের আরো গরিব করবে আর ধনীদের করছে আরো ধনী। এ লক্ষ্যে ম্যাগি ১৯০৪ সালে ‘দ্য ল্যান্ড লর্ডস গেম’ এর পেটেন্ট তৈরি করেন। যে খেলায় একজন খেলোয়াড় একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে ধনী হতে পারেন। অপ্রত্যাশিতভাবে ১৯৩০ সালে চার্লস ড্যারো নামের এক বেকার ম্যাগির আইডিয়া চুরি করে এবং পার্কার ব্রাদার্স কোম্পানির কাছে এর স্বত্ব বিক্রি করে দেন। ম্যাগি তার আইডিয়া চুরির বিষয়টি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেও তার আইডিয়া বিক্রি করে এরই মধ্যে ৫০০ ডলার আয় করে ফেলেন।

ডিশ ওয়াশার
প্রথম ব্যবসায়িকভাবে সফল স্বয়ংক্রিয় ‘ডিশ ওয়াশার’ কোনো হতাশ গৃহিণী আবিষ্কার করেনি। আমেরিকান নারী জোসেফিন কোচেরিন ছিলেন সমাজের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের নাতনি এবং আবিষ্কারক। যখন গৃহকর্মীরা বাসন পরিষ্কার করত, কোচেরিন তখন খুবই বিরক্ত হতেন। তাই তিনি বাসন পরিষ্কার করার সহজ পদ্ধতি অনুসন্ধান শুরু করলেন। কোচেরিন তার বাড়ির পেছনে একটি মোটর-চালিত ডিশ ওয়াশার তৈরি করেন। ১৮৮৬ সালে এর একটি পেটেন্ট তৈরি করেন। পরবর্তীতে তিনি একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যেখান থেকে প্রাথমিকভাবে রেস্টুরেন্ট এবং হোটেলগুলোতে এ মেশিন বিক্রি করা হতো। পরে এ কোম্পানিটিই হয়ে ওঠে ‘কিচেনএইড’।



জেনথান গাম
পিএইচডি ডিগ্রিধারী নারী অ্যালেনি রোজালিন জিনস যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগে কাজ করতেন। একবার একটি কোমল পানীয় কোম্পানি কৃষি বিভাগের ল্যাবে একটি সোডার নমুনা পাঠিয়েছিল। তারা জানতে চেয়েছিল কেন ওই সোডাটি অতিরিক্ত মিষ্টি হয়ে গেল। জিনস বুঝতে পারলো, একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া কোমল পানীয়র মধ্যে ছিল। এটি কোমল পানীয়তে ডেক্সট্রান উৎপাদন করেছিল, যা ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। ডেক্সট্রান প্রাথমিকভাবে কোরিয়ান যুদ্ধে আহত সৈন্যদের চিকিৎসার সময় রক্ত ঘন করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। জিনস এই বিষয়টিকে তার গবেষণায় গাইড হিসেবে ব্যবহার করে। যা থেকে জিনস পরবর্তীতে জেনথান গাম আবিষ্কার করে। এই গামটি বর্তমানে খাদ্য, প্রসাধনী, এবং অন্যান্য পদার্থের মান উন্নয়নে ব্যবহার হচ্ছে।

‘অদৃশ্য’ গ্লাস
কোন বিশেষ কোটেশন ছাড়া বলতে গেলে গ্লাস একটি কঠিন পদার্থ, যা আলোর প্রতিফলন ঘটাতে পারে। ক্যাথরিন বুর ব্লডগেট, যিনি ১৯২৬ সালে প্রথম নারী হিসেবে ক্যামব্রিজ থেকে পদার্থে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। জেনারেল ইলেকট্রিক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি কাচের ওপর পাতলা স্তর নির্মাণের একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন যে তার এই আবিষ্কার গ্লাসের চকচকে ভাব দূর করতে সক্ষম হবে। ১৮৩৮ সালে ক্যাথরিনের ‘অদৃশ্য’ গ্লাসের একটি পেটেন্ট তৈরি করা হয়।

হোম সিকিউরিটি সিস্টেম
ঘর থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা করলেই যে বিষয়টি প্রথমে চিন্তায় আসে তা নিশ্চয় ঘরের নিরাপত্তা। আর ঘর নিরাপদ রাখার কঠিন এ কাজটি সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এক নারী। তিনি মেরি ভ্যান ব্রিটান ব্রাউন। তিনি ১৯৬০ এর দশকে নার্স হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তার স্বামী অ্যালবার্ট ব্রাউন ছিলেন একজন ইলেকট্রনিক্স টেকনিশিয়ান। তখন ব্রিটান ব্রাউন তার স্বামীকে নিয়ে নিউ ইয়র্কের কুইন্স এলাকার তাদের বাড়িটি সুরক্ষিত করতে একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন। তারা বাড়িতে এমন একটি ক্যামেরা বসালেন যা দিয়ে সদর দরজা আশপাশের দৃশ্য ধারণ করতে পারতো এবং ক্যামেরাটি বাড়ির ভিতরে থাকা টিভিতে সরাসরি ভিডিও পাঠাতো। একইসঙ্গে সেখানে উভমুখি অডিও ডিভাইস ছিল। যার মাধ্যমে মালিক বাড়ির বাহিরে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে পারতো। এছাড়া সেখানে এমন একটি রেডিও প্রযুক্তি বসানো হয়েছিল যেটি কেউ দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে তার তথ্য গার্ড বা পুলিশকে জানিয়ে দিতে পারতো।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়