ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সফটএক্সপোতে ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে সেমিনার

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২১ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সফটএক্সপোতে ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে সেমিনার

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : বেসিস সফটএক্সপো’র শেষ দিনে আজ ‘৫জি নিউ এরা ট্রান্সফরমিং আওয়ার লাইভস’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৫জি নিউ এরা ট্রান্সফরমিং আওয়ার লাইভস
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির স্পেকট্রাম কমিশনার আমিনুল ইসলাম। মূল বক্তব্য প্রদান করেন জিএসএমের এশিয়া প্যাসিফিকের পরিচালক রাহুল সাহা, এরিকসনের বাংলাদেশ প্রধান আব্দুস সালাম এবং হুয়াওয়ে নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের সিইও জ্যাং জ্যানজুন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের সিটিও রাধে কোভাচেভিচ এবং রবির সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। সঞ্চালনায় ছিলেন অ্যামটবের সাবেক সচিব টিআইএম নুরুল কবীর।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রয়োজন এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন। আর ডিজিটাল উন্নয়নের অন্যতম অবকাঠামো হলো ইন্টারনেট সংযোগ। সমগ্র দেশকে এই সেবার আওতায় না আনা গেলে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের সঠিক সুফল হতে বঞ্চিত হবে জাতি। এক্ষেত্রে এই অবকাঠামোগত উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা ৫জি নেটওর্য়াক। ১০ জিবিপিএস গতি সম্পন্ন ৫জি- ৪জি এবং ৪.৫জি ইন্টারনেট সেবা হতে ১০ থেকে ১০০ ভাগ উন্নত সেবা প্রদানে সক্ষম। লিটেন্সি ১ মিলিসেকেন্ড। এর নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বাণিজ্যিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ সম্ভাবনায় সারা বিশ্বেই ৫জি আজ প্রযুক্তি উন্নয়নের ভবিষৎ হিসেবে আলোচ্য। বিশ্বের কিছু কিছু দেশে ইতিমধ্যে এ সেবার সুফল ভোগ করা শুরু হয়ে গেছে আবার কিছু কিছু দেশে চলছে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে ৫জির সম্ভাবনাসহ সেবা প্রদান, বিনিয়োগ এবং মার্কেট রেডিনেস নিয়ে আলোচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

অনুষ্ঠানে ৫জি রোল আউটে আমাদের অবস্থান, সরকারের উদ্যোগ, দেশের অবকাঠামোগত দিক থেকে এই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য আমরা প্রস্তুত কিনা এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ৫জি ব্যবহারে অন্যান্য দেশের উদাহরণ দিয়ে বক্তারা জানান, ৫জিকে জনপ্রিয় করতে ইতিমধ্যেই থাইল্যান্ড একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্বান্ত অনুযায়ী দেশটির সরকারি সংস্থা, অপারেটর ও ভেন্ডর সহ সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ৩ বছরের মধ্যে তারা টুজি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোবাইল বাজারের কথা উল্লেখ করে তারা জানান, দেশের আমদানিকৃত মোবাইলের  ৫০ ভাগেরও বেশি অংশ ফিচার ফোন আমদানি করছে। যা নেটওয়ার্ক ৩জি, ৪জি, ৫জি সেবার সুবিধাভোগের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা হতে পারে।

বক্তারা বলেন, সর্বত্র বাধাহীন সংযোগ, নেটওয়ার্ক ইকোনমিক্স অ্যান্ড ইনোভেশন, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ট্রান্সফরমেশন, ম্যাসিভ আইওটি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কমিউনিকেশন এবং ব্রডব্যান্ড এনহান্সড করাই ৫জি সেবার মূল সুবিধা। আরো বলা হয়, বর্তমান সময়ের মোবাইল গ্রাহক এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা চায় ডাটা সেবা এবং এই সেবা প্রদান সহজীকরণে ৫জি সেবার প্রয়োজনীয়তাই এখন আলোচ্য।

দেশের জাতীয় আয়ে মোবাইল ইন্টারনেট সহ মোবাইল সেবার অবদানের কথা উল্লেখ করে আলোচকরা আরো বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং এর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। বাজার বাড়ছে তাই আমরা মনে করি, ৫জি সেবা চালু হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সমগ্র দেশকে একটি উচ্চমানের ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত করা যাবে যা দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করবে। ৫জি সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগের পরিমাণটি বেশ বড় তাই এই বিনিয়োগের সফলতা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজন একটি সঠিক কর্মপরিকল্পনা, পলিসিগত উন্নয়নসহ সরকার, কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা। টেলিকম খাতের সমস্যা উল্লেখ করে বক্তারা আরো জানান, টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের ব্যবসায়িক মডেলে বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ তাই সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সকল খাতের সমন্নয় ব্যতীত ৫জি প্রচলন ও প্রসার কঠিন।

এছাড়াও ৫জি সেবা চালু হলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন সহ বর্তমান অবকাঠামোগত সমস্যা বিশেষ করে ৩জি এবং ৪জি সেবা প্রদানের সমস্যা সমূহ নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। সেই সঙ্গে এই সমস্যা মোকাবেলা সহ ৫জির সম্ভাবনাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়গুলোতেও আলোকপাত করেন বক্তারা।

এছাড়াও সফটএক্সপোতে আজ অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘এক্সপোর্ট স্ট্রাটেজি অ্যান্ড মার্কেট রেডিনেস’ শীর্ষক সেমিনার।

এক্সপোর্ট স্ট্রাটেজি অ্যান্ড মার্কেট রেডিনেস
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের সভাপতি আলমাস কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান। মূল বক্তব্য প্রদান করেন টিএফও কানাডার প্রোগাম পরিচালক এবং সাংবাদিক মেরী হেদার হোয়াইট। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিএফও কানাডার বিপণন বিভাগের মিশেল হাসলা, আইটিসির জাজ ত্যাজম্যান সহ আরো অনেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন সিট্রেডের কান্ট্রি প্রধান তানভীর আহমেদ।

মূল বক্তব্যে বক্তা কানাডায় তথ্যপ্রযুক্তি রপ্তানির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে জানান, কানাডায় মোট বাণিজ্যের ৩৭ শতাংশই সম্পন্ন হচ্ছে অনলাইনে এবং এর জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। এছাড়াও কানাডায় অন্যান্য বাণিজ্যিক সম্ভাবনা সহ বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে  কথা বলেন বক্তা।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, রপ্তানি বাণিজ্যে সফল হতে হলে বড় প্রতিষ্ঠান হতে হবে এমন কথা নয় তবে উদ্যোক্তাদের তার পণ্যের বাজার চাহিদা সর্ম্পকে জানতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকতে হবে দক্ষতা। রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানির চেয়ে সেবা রপ্তানিতে গুরুত্ব দেন বক্তারা। এছাড়াও রপ্তানি বাণিজ্যে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে রপ্তানি পরিকল্পনা, স্ট্রাটেজিস, ব্যয়, সুযোগ, চ্যালেঞ্জ, সিদ্বান্ত এবং যথাযথ বিনিয়োগ সহ ইত্যাদি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। মনোযোগী হতে হবে যথাযথ ডকুমেন্টেশনে। এছাড়াও ব্লকচেইন সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।

বাংলাদেশে সিট্রেডের কাজের প্রশংসা করে বেসিস সভাপতি বলেন, প্রযুক্তির জগতে মেয়েদের কাজ করার সুযোগ অনেক এবং সিট্রেডের সহযোগিতায় নারী উদ্যোক্তারা আরো ভালো করবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো জানান, আইটিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বেসিস মহিলা কর্মকর্তাদের  অনুদানের ব্যবস্থা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন ২০২১ অনুযায়ী ৫ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্য অর্জন করতে নতুন জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি করে রপ্তানি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে নারী অংশগ্রহণ অনস্বীকার্য।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়