ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘আ.লীগের শিকড় মাটি ও মানুষের সঙ্গে গাঁথা’

রফিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ২৭ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আ.লীগের শিকড় মাটি ও মানুষের সঙ্গে গাঁথা’

রাইজিংবিডি ডেস্ক : এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শিকড় গাঁথা রয়েছে, এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাই বার বার চেষ্টা করেও কেউ এই দলটিকে ধ্বংস করতে পারেনি।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সকল অধিকার আদায়ের এবং রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন আওয়ামী লীগকে শেষ করার জন্য আইয়ুব-ইয়াহিয়া চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ এবং খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলাদেশের জনগণের সাথে আর বাংলার মাটিতে এমনভাবেই গাঁথা যে, এটাকে কখনো শেষ করতে পারেনি কেউ।’

তিনি বলেন, ‘আজ এটা প্রমাণিত হয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে যে দল জনগণের কথা বলে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে গড়ে ওঠে, সেই দলই হচ্ছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যাদের সৃষ্টি, তাদের গোড়ায় মাটি থাকে না। ওই স্বর্ণলতার মতো গাছের ডালে বসে ওই গাছের রস খেয়ে বাঁচে, গাছ মরে গেলে তারাও থাকে না। কাজেই তাদের কোন অস্তিত্ব থাকে না, ক্ষমতা ছাড়া। সেটাই আজ বাংলাদেশে প্রমাণিত সত্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, যে যতই গণতন্ত্র নাই বলে চিৎকার করুক, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে সৃষ্ট রাজনৈতিক দল কখনোই গণতন্ত্র দিতে পারে না। দেশের মানুষের কল্যাণও করতে পারে না। তাই যদি করতে পারত তাহলে এই ২১ বছর (’৭৫ এর পরে ২১ বছর) যারা যারা ক্ষমতায় ছিল তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে পারত। তারা কিন্তু বাংলাদেশের উন্নতি করতে পারে নাই, করেও নাই। বরং দেশের মানুষকে তারা ভিক্ষুক বানিয়ে রেখেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানের বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা যখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ঘোষণা দিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, তাহলে বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। এই ছিল তাদের মানসিকতা। কারণ, তারা তো দেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করেনি।’

অন্যদিকে, জাতির পিতার বক্তব্য- ‘ভিক্ষুক জাতির কোন ইজ্জত থাকে না’ উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে কারণে আজকে দেশকে আমরা এমন জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি যে, কেউ আর আমাদের করুণার চোখে দেখে না, ভিক্ষুক জাতি হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ মানেই দুর্যোগের দেশ মন্তব্য করে অবহেলার চোখে দেখে না।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, রমেশ চন্দ্র সেন, মুহম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠসিক সম্পাদক মেজবাহউদ্দিন সিরাজ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ এবং আবুল হাসনাত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা সঞ্চালনা করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের আর্থ-সমাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে যেমন আমরা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয় করেছি, সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধান করেছি, আমাদের সীমানা চুক্তির বাস্তবায়ন করেছি- যার সব কাজই জাতির পিতা শুরু করে গিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন ক্রয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহাকাশ থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত আমাদের বিচরণ যাতে আমরা করতে পারি সেই ব্যবস্থা আমরা করে গেছি। যারা এর আগে ক্ষমতায় ছিল তারা এর কিছুই করে নাই এবং করতেও চায়নি। বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক, এটাও তারা চায়নি। ভোগবিলাসে গা ভাসিয়েছে আর ওই হানাদার বাহিনী যাদের পরাজিত করেছিলাম (মুক্তিযুদ্ধে) সেই পরাজিত শক্তির পদলেহন করেছে।’

তিনি বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলণের ইতিহাস থেকে এর নেতৃত্ব দানকারী বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত মুছে ফেলতে চেয়েছিল।

আমরা স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিক্রম করেছি, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না। সত্য একদিন না একদিন উদ্ভাসিত হয়। যেটা বাংলাদেশে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এ হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়, ১৯টি ক্যু হয়েছিল, সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসার এবং সৈনিকদের হত্যা করা হয়, যারা কোনো কিছু জানত না, সে সময় ছুটিতে ছিল, তাদেরকেও হত্যা করা হয়।

সে সময়ে দেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিরাতে কারফিউ, কারো স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কোনো অধিকার ছিল না, স্বাধীনভাবে চলার পথ ছিল বন্ধ। ’৭৫ এর পরে প্রায় ১০টি বছর কেবল কারফিউ দিয়েই দেশ চালানো হয়েছে।

সে সময় দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে ঋণখেলাপি এবং কালো টাকার মালিক সৃষ্টি করা হয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা পর্যায়ে কতগুলি দল করার সুযোগ দেওয়া হয়। যেখানে মানুষের কথা বলার বা ভোটের কোনো অধিকার ছিল না। মার্শাল ল দিয়ে আমাদের সংবিধানকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। এইভাবেই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী স্বৈরশাসনের উচ্ছিষ্টভোগী তথাকথিত সুশীলসমাজের কতিপয় প্রতিনিধির সমালোচনা করে বলেন, স্বৈরশাসকদের ডাণ্ডার ভয়ে এবং নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা স্বৈরশাসকদের অনেক অনৈতিক কাজকে বৈধতা প্রদান করেন। অনেকে গণতন্ত্র রক্ষার নামে এদের সঙ্গে হাতও মিলান।

তিনি বলেন, ‘এই চাটুকারের দলই মিলিটারি শাসকদের পদলেহন করত। আর তাদের শাসনামলটাকেই তারা খুব ভালোভাবে দেখে। কারণ, স্বাধীনতাবিরোধীরাই তখন ক্ষমতায়। বিচার চলছিল এমন যুদ্ধাপরাধীদেরকেও মুক্তি দিয়ে দেওয়া হয়।’

প্রধানমন্ত্রী জিয়াউর রহমানের তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘গণতন্ত্রের বড় বড় কথা বললেও দেশের মানুষ কী পেয়েছিল, দেশের কী উন্নতি হয়েছিল, বরং ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরতে হতো। যে সেনাবাহিনীর কাঁধে বন্দুক রেখে ক্ষমতা দখল করেছিল, সেই সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনীর জন্যই বা তারা কী করেছে?’

একটি এলিট গ্রুপ সৃষ্টি করে ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভোগবিলাস আর ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করাতেই ওই শ্রেণির দৃষ্টি ছিল, অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের মানুষ প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে এবং গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক প্রজন্ম ভুল ইতিহাস শিখলেও এখন দেশবাসী প্রকৃত ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। ইনশাল্লাহ, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব তখন বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব, এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। সংগঠনকে উন্নত করতে হবে।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই হচ্ছে একমাত্র সংগঠন যা জাতির সেবা করে, এ দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই কথাটি মনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করবার আহ্বান জানাচ্ছি।’

তথ্যসূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মার্চ ২০১৯/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়