জীবাণু ছাড়াও যে ১১ বিষয় সংক্রামক
প্রতীকী ছবি
এস এম গল্প ইকবাল : আমরা জানি যে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে। কিন্তু এমন কিছু সংক্রামক বিষয়ক রয়েছে যা আসলেই আপনাকে বিস্মিত করবে। এখানে তেমনই ১১ সংক্রামক বিষয় আলোচনা করা হলো।
* রেস্টুরেন্ট অর্ডার
ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েসের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, সেসব লোকেরা অধিকতর সুখ অনুভব করেছিল, যারা তাদের সহকর্মী বা সঙ্গীদের মতো একই পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার অর্ডার করেছিল। এসব লোকের সঙ্গী বা সহকর্মীদের অর্ডার দেখে অর্ডার দেওয়ার প্রবণতা ছিল। যদি আপনি আপনার কোমরের ব্যাপারে সতর্ক থাকেন (অর্থাৎ যদি মেদবহুল হতে না চান), তাহলে আপনার অর্ডার প্রথমে দিয়ে দিন- এর ফলে সঙ্গীর অর্ডার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
* নেতিবাচক চিন্তা
ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেমের একটি গবেষণা অনুসারে, যেসব নতুন লোক নেতিবাচক চিন্তায় মগ্ন থাকে এমন লোকদের রুমমেট হয়েছিল, মাত্র তিন মাস পর তাদের অধিকাংশের মধ্যে নেতিবাচক-চিন্তার স্টাইলের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এটা মনে রাখা ভালো যে, আপনি জীবনের চ্যালেঞ্জকে কিভাবে মোকাবেলা করছেন তা অন্য লোকদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
* সুখ
নেতিবাচক চিন্তা যেমন সংক্রামক, তেমনি ইতিবাচক অনুভূতি বা সুখও সংক্রামক, হার্ভার্ড ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি সেমিনাল গবেষণা অনুসারে- এ গবেষণাটি প্রায় ৫,০০০ জনের ওপর চালানো হয়। যখন আপনি সুখ অনুভব করেন, আপনার এক মাইলের মধ্যে থাকা কোনো বন্ধুর সুখ অনুভব করার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ বেড়ে যায় এবং প্রতিবেশীদের সুখ অনুভব করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় ৩৪ শতাংশ। একই গবেষণাটিতে এটাও উন্মোচিত হয়েছে যে, অতিরিক্ত ৫০০ ডলারে সুখ বৃদ্ধি পেয়েছিল ২ শতাংশ, যেখানে কোনো আনন্দদায়ক বন্ধুর সংস্পর্শে আসাতে ভালো অনুভূতি বা সুখ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল।
* ধূমপান বর্জন
হার্ভার্ড ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একই গবেষণা দল এটাও পেয়েছেন যে, যখন কোনো ব্যক্তি ধূমপান ছেড়ে দেয়, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের ধূমপান বর্জন করার সম্ভাবনা ৩৬ শতাংশ বেড়ে যায়। এমনকি ধূমপান বর্জনকারীর পরিচিত (ঘনিষ্ঠ নয়) লোকদেরও এ অভ্যাস ত্যাগের সম্ভাবনা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
* মানসিক চাপ
আমাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে যা সহজে অন্য লোকদের স্ট্রেস বা মানসিক চাপ শনাক্ত করতে পারে। এটি আমাদের নিজস্ব স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণে উদ্দীপনা যোগায়, বলেন স্ট্রেসঅ্যাহলিক’র লেখক ও এক্সিকিউটিভ কোচ হেইডি হান্না। কারো স্ট্রেস আপনার মধ্যে ছড়ানোর জন্য একই রুমে থাকতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই, ই-মেইল, টেক্সট বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও স্ট্রেস ছড়াতে পারে। যখন আপনি স্ট্রেসে আচ্ছন্ন হবেন, সঙ্গীকে এড়িয়ে চলে ঘুমান- এটি কিন্তু স্বার্থপরতা নয়, বরং আপনি তার মধ্যে স্ট্রেস ছড়াচ্ছেন না! এর ফলে আপনার চারপাশের লোক উপকৃত হবে।
* চুলকানি
ইতোমধ্যে হয়তো আপনার এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। আপনি হয়তো কাউকে তার ত্বক চুলকাতে দেখেছেন এবং আপনি হঠাৎ অনুভব করেছেন যে আপনার নিজের ত্বকও শিহরিত হয়েছে! সায়েন্স নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ক্রনিক চুলকানির ইঁদুরদের চুলকাতে দেখে অন্য ইঁদুররাও চুলকাতে শুরু করেছিল।
* নতুন কিছুর আকাঙ্ক্ষা
আপনার বন্ধু নতুন কোনো স্মার্টফোন কিনেছে, তাই দেখে আপনারও নতুন স্মার্টফোন কেনার আকাঙ্ক্ষা হতে পারে। জার্নাল অব নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা সেসব বস্তুকে বেশি মূল্যবান হিসেবে রেটিং করেছে, যা অন্য লোকদের আকাঙ্ক্ষার বস্তু ছিল। সাইকোলজিস্ট এলিজাবেথ প্রিভেনশন ডটকমকে বলেন, ‘আমি এটিকে ওয়েডিং-ব্যান্ড সিন্ড্রোম বলি। একজন লোকে যা চায়, অন্য লোকের কাছে সেটাই অধিক আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।’
* ওজন হ্রাস
ওবেসিটি নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ভলান্টিয়াররা ওজন কমানোর প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল, দেখা গেছে যে তাদের সঙ্গীরাও একই হারে ওজন কমিয়েছিল। আপনি যখন ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করবেন, আপনার স্ত্রীও মনে মনে ওজন হ্রাসের পরিকল্পনা করতে পারেন।
* একাকীত্ব
আপনি হয়তো মনে করেন যে দূরত্ব নিঃসঙ্গ লোকদের একাকীত্ব ছড়ানো প্রতিরোধ করে, কিন্তু জার্নাল অব পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে যে এর বিপরীতটাই সত্য। গবেষণাটি ধারণা দিচ্ছে- যদি কেউ একাকীত্ব অনুভব করতে শুরু করে, তাহলে পরবর্তীতে সময় পরিক্রমায় লোকটির সোশ্যাল গ্রুপের অন্য লোকেরাও একাকীত্ব অনুভব করে। এই অনুভূতি ছোঁয়াচে হিসেবে কাজ করে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, সোশ্যাল গ্রুপ নিঃসঙ্গ লোকদের বের করে দেয়, যা গ্রুপটিকে চলমান রাখে।
* বিবাহবিচ্ছেদ
সোশ্যাল ফোর্সেস নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ডিভোর্সি লোকের বন্ধুদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোর সম্ভাবনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ লোকের বন্ধুদের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি। কোনো বন্ধুর কোনো বন্ধুর বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ দম্পতিদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ৩৩ শতাংশ বেশি। এ গবেষণার লেখকরা বন্ধুর রিলেশনশিপ বিষয়ক সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে করতে পরামর্শ দিচ্ছেন, কারণ এতে নিজের রিলেশনশিপও মজবুত হয়। এ গবেষণায় আরো পাওয়া গেছে যে, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ আছে এমন লোকের বন্ধুদের বিবাহবিচ্ছেদের হার কম। তাই নিজের বিবাহবিচ্ছেদ এড়াতে মজবুত বন্ধনে আবদ্ধ আছে এমন লোককে বন্ধু বানিয়ে আপনার সোশ্যাল নেটওয়ার্ককে প্রসারিত করার চেষ্টা করতে পারেন।
* কিছু শারীরিক ভঙ্গি
হাই তোলা, হাসি, চুলকানি, কাশি, বমিবমি ভাব ও কান্না হলো সামাজিকভাবে সংক্রামক। কিউরিয়াস বিহেভিয়ার’র লেখক ও সাইকোলজিস্ট রবার্ট আর. প্রভিন বলেন, ‘হাই তোলা এত বেশি ছোঁয়াচে যে কেউ হাই তুললে, হাই তোলার শব্দ শুনলে অথবা হাই তোলার কথা পড়লে আমরা হাই তুলে থাকি। আমরা প্রায়সময় কারো সাথে না কারো সাথে থাকি এবং আমরা এ সহজাত প্রবৃত্তিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’ বিজ্ঞানীদের তত্ত্ব হলো, এসব শারীরিক ভঙ্গির প্রতি আমাদের সহজাত সাড়া বিবর্তনমূলক সুবিধা দিয়ে থাকে, যেমন- হাসি হলো এক ধরনের বন্ধন এবং কোনো চুলকানি চুলকানো হলো এক ধরনের নিরাপত্তা সতর্কতা। গুহামানব পূর্বপুরুষেরা কিভাবে ঘুমানো-জেগে ওঠা অ্যাডজাস্ট করেছিল তার নিদর্শন হতে পারে হাই তোলা।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন