ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

খুলনায় বিশেষ ছাড়ে ‘ভেজাল’ পণ্য বিক্রি!

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১২, ১৪ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনায় বিশেষ ছাড়ে ‘ভেজাল’ পণ্য বিক্রি!

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকায় বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির ৫২টি ভেজাল পণ্য প্রত্যাহারের আদেশ জারি করেছে উচ্চ আদালত। আদালতের এমন আদেশ জারির পর পরই খুলনার বিভিন্ন বাজারে বিশেষ ছাড়ে এসব পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।  বিশেষ করে গ্রামগঞ্জের বাজারগুলোতে এসব পণ্য বেশি বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।

দোকানিদের ভাষ্য, কোম্পানি এ মুহূর্তে কিছু পণ্যে বিশেষ ছাড় দেওয়ায় সেভাবে ক্রেতাদেরকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র অনুযায়ী, গত রোববার বিএসটিআইয়ের পরীক্ষা করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি মানহীন ও ভেজাল পণ্য ১০ দিনের মধ্যে বাজার থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।  এ ছাড়া, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিসিএসটিআইকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে, খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন দোকান থেকে এসব পণ্য প্রত্যাহার না করে তা বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।

খুলনার সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম বড় বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ভেজাল পণ্যগুলো এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।  উপরন্তু এসব ভেজাল পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নানা উপায়ে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। রোজা ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় অনেকে এসব ভেজাল পণ্য বেশি করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

খুলনার দাকোপ উপজেলার মুদি দোকানি রত্নেশ্বর রায় বলেন, ‘নামি-দামি কোম্পানির মালামাল এত কম দামে পাওয়া যাচ্ছে এ জন্য ঈদের আগে বেশি করে কিনে রাখছি।’

তিনি জানান, কয়েকটি কোম্পানির পণ্যে ১০ থেকে ২০ ভাগ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড় বাজারের মেসার্স ট্রেডার্সের একজন কর্মচারী বলেন, আদালত কোন কোন পণ্য ভেজাল ঘোষণা করেছে তা এখনো আমাদের জানানো হয়নি। তবে এ মুহূর্তে কয়েকটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা বিশেষ মূল্য ছাড়ে পণ্য সরবারাহ করছে।

ওই বাজারের আরেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজের কর্মচারীরাও একই কথা বলেন। তারা কেউই জানেন না যে, আদালত কোন পণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।

সেখানে প্রাণ কোম্পানির একজন বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে কথা হলে তিনি জানান, রমজানে কোম্পানির পক্ষ থেকে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য কয়েকটি পণ্যে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওইসব পণ্য এখন বাজারে ব্যাপক চলছে।

নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার অভিজাত শপিং মল সেইফ এন সেভ-এ হাইকোর্ট নির্দেশিত ৫২টি ভেজাল পণ্যের সবগুলোই বিক্রি হতে দেখা গেছে। শপিং মলের কর্মচারীদের ভাষ্য, এ সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত কোম্পানি কিংবা বিএসটিআই থেকে তাদের জানানো হয়নি।

বিএসটিআই খুলনার উপপরিচালক মৃণাল কান্তি বিশ্বাস জানান, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী উল্লেখিত ভেজাল পণ্যগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহারের জন্য ভোক্তা অধিদপ্তর সোমাবার থেকে মাঠে নেমেছে। বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগগুলোও এসব পণ্য প্রত্যাহারে মাঠে কাজ করছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) খুলনা জেলার সভাপতি অ্যাড. এনায়েত আলী বলেন, ‘হাইকোর্ট রিট আদেশের পর্যবেক্ষণেই বলেছে ভেজাল খাদ্যপণ্যে বাংলাদেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এটাই তো সাধারণ মানুষের বক্তব্য। অবিলম্বে নিরাপদ খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করা না গেলে পুরো জাতি ধ্বংস হয়েছে যাবে।’

উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ৫২টি ভেজাল পণ্য হলো সিটি অয়েলের সরিষার তেল, গ্রিন বি চিংয়ের সরিষার তেল, শবনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজান ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ন ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকান ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দীঘি ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদগুঁড়া, প্রাণের হলুদগুঁড়া, ফ্রেশের হলুদগুঁড়া, এসিআইর ধনিয়াগুঁড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচগুঁড়া, মিষ্টিমেলা লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইর লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইর আয়োডিনযুক্ত লবণ, মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিংয়ের ময়দা, রূপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মঞ্জিলের হলুদগুঁড়া, মধুমতির আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ফুডের হলুদগুঁড়া, গ্রিন লেনের মধু, কিরণের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচগুঁড়া, ডলফিনের হলুদগুঁড়া, সূর্যের মরিচগুঁড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিনযুক্ত লবণ, মদিনার আয়োডিনযুক্ত লবণ, নুরের আয়োডিনযুক্ত লবণ।




রাইজিংবিডি/খুলনা/১৪ মে ২০১৯/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়