ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ড্রেজিংয়ে বরাদ্দ নেই, ৩০ নদীর ২০০ নৌপথ বন্ধ

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ড্রেজিংয়ে বরাদ্দ নেই, ৩০  নদীর ২০০ নৌপথ বন্ধ

ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের সামনে ধূ-ধূ বালুচর

নজরুল মৃধা, রংপুর : উত্তরাঞ্চলে গত ১০ বছর থেকে নদনদী ড্রেজিংয়ের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।

দীর্ঘদিন থেকে ড্রেজিং না করায় এ অঞ্চলের ৩০টির বেশি নদীর ২০০ নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর বুকে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য চর।

২০০ এর বেশি নৌপথের মধ্যে এখন হাতেগোনা ২৫টির মত  নৌপথ চালু রয়েছে।  কোনো কোনো নদী একেবারে পানিশূন্য হয়ে পড়ায় সেগুলো এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে।

একসময় নদী বন্দরকে ঘিরে  প্রাণচাঞ্চল্য থাকলেও সেগুলোর অস্তিত্ব  এখন বিপন্ন। ইতিমধ্যে অনেক নৌঘাট পানিশূন্যতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব নৌঘাট এখনও কোনো রকমে টিকে রয়েছে সেগুলোরও বেহাল দশা।

চ্যানেলের অভাবে নৌযান কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। যেকোনো সময় নৌ চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পানি সঙ্কটের কারণে নৌ যোগাযোগ এখন হুমকির মুখে। যেসব রুটে এখনও যান্ত্রিক নৌকা চলছে জেগে ওঠা চরের কারণে তাদের বিকল্পপথে চলাচল করতে হচ্ছে বলে যাত্রীদের স্থলে পৌঁছাতে সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি।

অন্যদিকে ছোট ছোট নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ওইসব নদীতে ইতিপূর্বে স্থাপিত সেচ যন্ত্রগুলো এখন পানি সঙ্কটের মুখে পড়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট সেচযন্ত্রের আওতাধীন বোরো জমি পানির অভাবে এখন শুকিয়ে যাচ্ছে।

গত ডিসেম্বর থেকে ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, তিস্তা, করতোয়া  ও যমুনাসহ ছোট বড় সবগুলো নদীর পানি দ্রুত কমতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারিতে এসে অব্যাহত পানি কমার ফলে নদীগুলো নিজেদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এ তিনটি নদীর পানিপ্রবাহ এখন সর্বনিম্ন  পর্যায়ে রয়েছে। বিশাল চর জেগে উঠেছে এখন নদীর বুকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ নদীতে নাব্যতা থাকার সময় স্বাভাবিকভাবে নৌকায় চলাচল করত। এখন নদী বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চর এবং শীর্ণকায় নদীর শাখাগুলো পায়ে হেঁটে গন্তব্য স্থলে তাদের পৌঁছতে হয়। ইতিমধ্যে অনেক চরে ভূট্টা, বাদাম ও মরিচসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছে।

 


এদিকে নদীগুলো নাব্যতা হারানোর ফলে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রে সবচেয়ে বড় ঘাট হচ্ছে বালাসী নৌঘাট। এই ঘাটটি অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। নদীর পানি কমে যাওয়ায় এবং ড্রেজিং না করায় এ ঘাটটির পন্টুন এখন শুকনো মাটিতে পড়ে রয়েছে। এরপরও এই ঘাট এলাকায় নদীর পাড়  থেকে ১০টি রুটে যাত্রীবাহী যান্ত্রিক নৌকা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে । আগে ৩০টি রুটে এখান থেকে অবাধে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করত।

ড্রেজিংয়ের অভাবে বর্তমানে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যেসব রুটে নৌ চলাচল করছে সেগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও কর্তীমারী, সদর উপজেলার মোল্লারচর, কুন্দেরপাড়া ও পারদিয়ারা, ফুলছড়ির সানন্দবাড়ী, ফুটানীবাজার, জিগাবাড়ী, হরিচন্ডি, খোলাবাড়ি, খাটিয়ামারী এবং জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ, ঘুটাইল ও দেওয়ানগঞ্জসহ আরো অনেক।

আগে যেখানে একেক রুটে চারটি করে নৌকা চলাচল করত এখন সেখানে মাত্র দুইটি করে নৌকা চলাচল করছে। ফুলছড়ি উপজেলা হেড কোয়ার্টার থেকে আগে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও বাহাদুরাবাদসহ ফুলছড়ি উপজেলার গলনা, ফজলুপুর, খাটিয়ামারী, পিপুলিয়া, গাবগাছি, দেলুয়াবাড়ি, জিগাবাড়ি, ভাজনডাঙ্গা, জিয়াডাঙ্গা ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ রুটে ২০টি নৌকা প্রতিদিন যাতায়াত করত। সেখানে এখন দুই একটি চলাচল করতে দেখা যায়।

এ ছাড়া এ উপজেলার কামারপাড়া, কাতলামারী, সিংড়িয়ার মতো ছোট ছোট নৌ ঘাটগুলো এখন চরের বুকে পড়েছে। সাঘাটা থানা সদরের মীরগঞ্জ রুটেও এখন তেমন নৌকা ভেড়ে না। এই ঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ রুট, দেওয়ানগঞ্জ, ঘুটাইল ও মাদারগঞ্জসহ সাঘাটার বিভিন্ন চর এলাকায় বেশকিছু নৌকা চলাচল করতে দেখা গেলেও এখন দিনে ২/৩ টার বেশি নৌকা চলাচল করে না।

সুন্দরগঞ্জের গোয়ালঘাট, তারাপুর, বেলকা ও হরিপুর ঘাটের মধ্যে একমাত্র হরিপুর ঘাটটি থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী রুটে মাত্র দুটি করে নৌকা চলাচল করছে। এ উপজেলা থেকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও জামালপুরের ১৫টি রুটে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ রকম উত্তরাঞ্চলে ২০০ শতাধিক নৌরুট বন্ধ হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব রহমান জানান, উত্তরাঞ্চলের নদনদী ড্রেজিং করার জন্য বেশ কয়েক বছর থেকে কোনো বাজেট নেই।

তিনি জানান, ড্রেজিং না করার কারণে ব্রক্ষ্মপুত্র ও পদ্মা নদীতে হাতে গোনা কয়েকটি নৌপথ চালু রয়েছে। এ ছাড়া তিস্তা, করতোয়া, দুধকুমারসহ প্রায় ৩০টি নদীর ২০০ শতাধিক নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। 

 

 

রাইজিংবিডি/রংপুর/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/নজরুল মৃধা/রিশিত 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়