তফসিল ঘোষণা না হওয়ায় শিল্পীদের ক্ষোভ : দায়সারা জবাব
রাহাত সাইফুল : চলচ্চিত্র শিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫-১৬ কমিটির। তবে এখনো আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেনি সমিতি। সমিতির আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জায়েদ খান, চিত্রনায়িকা রোজিনাসহ অন্যান্য শিল্পীরা এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়িকা রোজিনা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শিল্পী সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৭ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা উচিৎ ছিল। কেন তারা করেননি আমি জানি না। এতে তাদের কেমন স্বার্থ জড়িত তাও বুঝতেছি না। এটা কোনো রাজনৈতিক নির্বাচন নয়, শিল্পী সমিতিকে কুলষিত করা একদমই ঠিক নয়। আশা করব, খুব দ্রুত তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন দিবেন।’
এ বিষয়ে কথা হয় বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ওমর সানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি শিল্পী সমিতির নির্বাচনে পাঁচবার অংশ নিয়েছি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিটির ক্ষমতা শেষ হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার আশার পরও সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে সাধারণ সম্পাদকই বসবেন। সভাপতির চেয়ারে সভাপতিই বসবেন। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত তাদের হাতে ক্ষমতা থাকে। নির্বাচন হওয়ার পর নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তারপর ওই চেয়ারে ছেড়ে দিবেন। এই সময়টা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।’
গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কি কেউ কিছু করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর সানী বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের বাইরে আমরা যাব না। এমন বেয়াদব হইনি। তফসিল ঘোষণা দিবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। কয়েকদিনের মধ্যেই এ ঘোষণা দেয়া হবে। আমি নিজেও চাচ্ছি খুব শিগগিরই নির্বাচন হোক। আমি একটু দেশের বাইরে যাব।’
এ বিষয়ে চিত্রনায়ক জায়েদ খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কমিটি শপথ গ্রহন করেছে। সে হিসেবে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি শিল্পী সমিতির মিটিং ছিল। কিন্তু তারা কোনো তফসিল ঘোষণা করেননি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭ ফেব্রুয়ারির পর উনারা আর ক্ষমতায় থাকতে পারেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘রকিবুল আলম রাকিবের শূন্য পদে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ইলিয়াস কোবরাকে কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়টি অনেকেই জানেন না। এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হচ্ছে। আমরা আশা করব, খুব তাড়াতাড়ি তফসিল ঘোষণা করা হবে। অন্যথায় আমরা চলচ্চিত্রের সিনিয়র শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলব।’
এ বিষয় জানতে গতকাল কথা হয় শিল্পী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সিনেমার শুটিং নিয়ে সারা বছরই ব্যস্ত থাকতে হয়। আগামীকাল শুটিংয়ের জন্য আবার কলকাতা যেতে হবে। শুটিংয়ের ব্যস্ততার কারণে গত ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তফসিল ঘোষণা করতে পারিনি। তবে আমাদের প্রস্তুতি চলছে, এই মাসের মধ্যে আমরা তফসিল ঘোষণা করব।’
ইলিয়াস কোবরাকে মেয়াদ শেষ হওয়ার দুদিন আগে কমিটিতে কেন যুক্ত করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে অমিত হাসান বলেন, ‘শূন্য পদে মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেও লোক নেয়া যাবে। পরিচালক সমিতিতে নির্বাচন করেছিলেন রকিবুল আলম রাকিব। যার জন্য তিনি ২৮ ডিসেম্বর শিল্পী সমিতি থেকে পদত্যাগ করেছেন। এই শূন্য পদেই ইলিয়াস কোবরাকে পদ দিয়েছি। এখানে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই। আমরা সঠিক সময়েই নির্বাচন দিব। আমাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হবে।’
আগামী কমিটির জন্য মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান এরই মধ্যে নিজেদের প্যানেল ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে, ওমর সানী ও ইলিয়াস কোবরা মিলে একটি প্যানেল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি শিল্পী সমিতির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতি নির্বাচিত হন শাকিব খান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান। দুই বছর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহনের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিল এই কমিটি। সমিতিতে প্রতি দুই বছর পরপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তফসিল ঘোষণা হয়নি তার কারণ ব্যক্তিগত ব্যস্ততা। এটাকে শিল্পী সমিতি সংশ্লিষ্টদের দায়সারা জবাব বলে অনেকে মনে করছেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/রাহাত/শান্ত
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন