‘বড় রান করতে পারলে ভালো লাগে’
নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি উদযাপন
ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে : শাহাদাত হোসেনের বাউন্সার অনায়াসে পুল করে বল বাউন্ডারিতে পাঠালেন। আরেক পেসার মোহাম্মদ শরীফের স্টাম্পের ওপরের বল ব্যাকফুটে ড্রাইভ করে অন সাইডে বাউন্ডারি। স্পিনার মোশাররফ হোসেন রুবেলের বলে পরপর দুবার ডাউন দ্য উইকেটে এসে লং অফ ও লং অনের মাঝ দিয়ে বাউন্ডারি। তাইবুর রহমান ও শরীফউল্লাহর বল কাট করে পয়েন্ট ও গালিতে পাঠিয়ে পেলেন রান। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার একাই খেলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত!
বিসিবি নর্থ জোনের এই ব্যাটসম্যান অসাধারণ, অনন্য, চমকপ্রদ ও মনোমুগ্ধকর এক ইনিংস উপহার দেন। তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি। ১৪২ বলে ১৮ বাউন্ডারিতে ইনিংসটি সাজান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর শরীফউল্লাহর ভেতরে ঢোকা এক বলে এলবিডব্লিউ হন। দিন শেষে রাইজিংবিডির মুখোমুখি হন বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্ট খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত।
ফুটবল খেলছিলেন, আজ কি ডিফেন্ডার ছিলেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: না, ওভাবে কোনো পজিশন ঠিক নেই। যেখানে মন চায় সেখানেই খেলি…
না, ডিফেন্ডার হলে নিউজের একটা ভালো শিরোনাম হতো…
নাজমুল হোসেন শান্ত: কী?
‘ডিফেন্ডার’ নাজমুলের আক্রমণাত্মক সেঞ্চুরি!
নাজমুল হোসেন শান্ত: না না, ওভাবে কিছু দরকার নেই। পারেন ও ভাই আপনি…
যাক, আজকের সেঞ্চুরি নিয়ে বলেন
নাজমুল হোসেন শান্ত: অনেক দিন পর একটা এক শ’ হলো। শেষ দুই-তিনটি ইনিংসে শুরুটা ভালো হতো, কিন্তু লম্বা করতে পারিনি। আজকে বড় ইনিংস খেলার পর ভালো লাগছে।
ভুলগুলো কোথায় হচ্ছিল?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমি ভালো ব্যাটিং করছিলাম প্রতিবারই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আউট হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার ওভাবে মনে হয়নি যে আমার ব্যাটিংয়ে কোনো সমস্যা ছিল কিংবা আমি ভুল করেছি। আমি আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলেছি। কিন্তু টাইমিং হচ্ছিল না বলে আউট হয়ে গিয়েছি।
ওপেনিংয়ে নামার কারণে এরকমটা হয়েছিল?
নাজমুল হোসেন শান্ত: না, ওপেনিংয়ে নামার কারণে না। আমি টপ অর্ডারে ব্যাটিং করি। ওপেনিং কিংবা দুইয়ে আমি রান করে আসছি। তিন-চার ইনিংসে রান পাইনি বলে স্যারের (কোচ জাফরুল এহসান) সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি আমাকে বলল তুমি দুই-তিন ইনিংস নিচে খেলে রান করে আবার ওপরে আসো।
এই ইনিংসটিকে কি আগের দুই সেঞ্চুরির থেকেও আলাদা করে মূল্যায়ন করবেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আসলে সেঞ্চুরি করলে ভালো লাগে। আবার আজকের পরিস্থিতিও অনুকূলে ছিল না। উইকেটে ঘাস ছিল, বোলাররা ভালো বল করছিল। এ ধরনের উইকেটে ভালো করতে পারলে, বড় রান করতে পারলে ভালো লাগে। এটা ঠিক আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। সামনের যে ইনিংসগুলো আসবে সেগুলোতে আরো ভালো করতে প্রেরণা জোগাবে।
পেসারদের বলে পুলগুলো বেশ নজর কেড়েছে। ড্রাইভগুলোও ছিল অসাধারণ। বাউন্সারেও সমস্যা হচ্ছিল না। নিউজিল্যান্ডে খেলে এসেছেন বলে কি ‘দুধ-ভাত’ মনে হচ্ছিল? ওখানে তো সাউদি, বোল্টদের খেলে এসেছেন…
নাজমুল হোসেন শান্ত: শেষ হাই পারফরম্যান্স ইউনিটে যখন আমি ছিলাম, তখন শর্ট বল নিয়ে কাজ করছিলাম। যখন জাতীয় দলের হয়ে নিউজিল্যান্ড গেলাম, ওখানে কন্ডিশন এরকম ছিল। ওখানে অনুশীলন করেছি, একটা ম্যাচও খেলেছি। এজন্য মনে হচ্ছে কিছুটা সহজ হয়ে উনাদের বলগুলো খেলতে পেরেছি।
আক্রমণাত্মক খেলবেন- শুরু থেকেই কি এমন পরিকল্পনা ছিল?
নাজমুল হোসেন শান্ত: না, আক্রমণাত্মক খেলব- এমন কিছু চিন্তা করে শুরু করিনি। বল মেরিট অনুযায়ী খেলেছি, খেলতে খেলতে হয়ে গেছে। বাজে বল পাইছি, কিছু জিনিস চেষ্টাও করেছি। সেজন্য রান পেয়েছি। স্বাভাবিক খেলাটাই খেলেছি।
কী চেষ্টা করেছেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: এই প্যাডের ওপরের বলগুলো কীভাবে ফ্লিক করা যায়। শরীরের ওপরের বলগুলো নামিয়ে কীভাবে খেলা যায়, এগুলো চেষ্টা করেছি।
আপনি আগ্রাসন দেখাননি বলছেন, কিন্তু স্কোরবোর্ড বলছে ভিন্ন কথা। একই উইকেটে নাঈম ইসলাম অসাধারণ ধৈর্য দেখাল..
নাজমুল হোসেন শান্ত: নাঈম ভাই সলিড ইনিংস খেলেছে। আমি নামার পর উনি বলেছিল, ‘একটা লম্বা জুটির দরকার।’ সেভাবেই আমরা পরবর্তীতে এগিয়ে যাই। উনিও দারুণ খেলেছে। কাল দেখবেন আরো বড় ইনিংস খেলবেন উনি।
রাইজিংবিডি/সিলেট/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ইয়াসিন/পরাগ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন