ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সেই আদুরির মামলার রায় মঙ্গলবার

বিলাস দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৭ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সেই আদুরির মামলার রায় মঙ্গলবার

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : মনে পড়ে কী রাজধানী ঢাকার ডাস্টবিন থেকে অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করা সেই আদুরিকে? মৃত ভেবে ডাস্টবিনে ফেলে যাওয়া আদুরি বেঁচে গেলে জানা যায় নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনা।

আদুরির ওপর সেই বর্বর নির্যাতনের মামলার রায় আগামীকাল মঙ্গলবার। ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩  আদালতের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার এ রায় প্রদান করবেন বলে জানা গেছে।

২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্লবীর একটি ডাস্টবিন থেকে অর্ধমৃত অবস্থায় আদুরিকে (১১) উদ্ধার করা হয়েছিল।  চার বছরের ব্যবধানে আদুরির শারীরিক কাঠামো পরিবর্তন হলেও নির্যাতনের ক্ষত চিহ্নগুলো এখনও রয়ে গেছে।

আদুরি পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠির কৌরাখালি গ্রামের মৃত খালেক মৃধার কনিষ্ঠ কন্যা । অভাবে সংসারে মা সাফিয়া বেগম দিশেহারা হয়ে নয়টি সন্তানের সকলকেই গৃহপরিচারিকার কাজে দেন। আদুরিকে এক প্রতিবেশির সহযোগিতায়  রাজধানীর  নওরীন জাহান নদীর বাসায় কাজে দেওয়া হয়েছিল। এখানেই নানা ছলছুতোয় দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয় শিশু আদুরি।

নির্যাতনের একপর্যায়ে নদী ও তার মা মৃত ভেবে আদুরিকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে যায়। সেখান থেকে  দুই নারী কর্মী অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করে আদুরিকে।  পরে পুলিশের সহায়তায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। দেড়মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হলে ৩ নভেম্বর পরিবারের কাছে আদুরিকে হস্তান্তর করা হয়। পরে আদুরির চিকিৎসা ও তার ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তৎকালিন পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম গনি। কিন্তু তিনি বদলি হওয়ার পরপরই পরিবর্তন হয় আদুরির পরিবারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি। মাঝে মাঝে গিয়ে তৎকালীন সদর থানার অফিসার ইনর্চাজ মোঃ মনিরুল ইসলাম আদুরিকে গিয়ে দেখে আসতেন। তিনিও অনত্র বদলী হলে দীর্ঘ কয়েক বছরে কোন পুলিশ কর্মতার পদচারণা ঘটেনি তাদের বাড়িতে।

এদিকে ঘটনার তিন দিন পর আদুরির মামা একটি বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কর্মরত মো. নজরুল চৌধুরী বাদী হয়ে পল্লবী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

মামলায় নদী (২৫)  ও তার মা ছাড়াও নদীর স্বামী মো. সাইফুল ইসলাম মাসুদ (৩৪), তাদের আত্মীয় সৈয়দ চুন্নু মীর ও মো. রনিকে আসামি করা হয়।

মামলায় বলা হয়, স্বামী মারা যাওয়ায় তার বোন আদুরির মা শাফিয়া বেগম (৪৫) নয় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েন। অনাহারে অর্ধাহারে তাদের জীবন কাটতে থাকে। চুন্নু মীর তার শ্যালক সাইফুল ইসলাম মাসুদের বাসায় মাসিক পাঁচশ টাকা বেতনে আদুরিকে গৃহকর্মে দেওয়ার প্রস্তাব করলে সাফিয়া রাজি হয়।

আদুরি সেখানে ভালো আছে বলে চুন্নু জানালেও মেয়েটির সঙ্গে তাদের দেখা করাতে রাজি হয়নি চুন্নু।

পরে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে পত্রিকায় আদুরির ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা জানতে পারেন তারা।

“আদুরিকে অনাহারে অর্ধাহারে রেখে  চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করা হয়েছে, গরম ইস্ত্রি দিয়ে সেঁক দিয়ে ক্ষত করে ডাস্টবিনে ফেলে রাখা হয়েছে।”

হাকিমের কাছে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ২২ ধারার জবানবন্দিতে আদুরি বলে, গৃহকর্ত্রী নদী তাকে দিনে একবেলা, শুধু রাতের বেলা মুড়ি খেতে দিত। বাসার ব্যালকনিতে থাকতে দিত। মাঝে মধ্যে লবণ দিয়ে ভাত খেতে দিত। প্রায়ই গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিত শরীরের বিভিন্ন স্থানে।

“ব্লেড দিয়ে কেটে এক সময় মুখে সে আগুন ধরিয়ে দেয়। নদীর মা তাকে লাঠি দিয়ে মারত। ভয়ে এ নির্যাতনের কথা কাউকে বলতে পারিনি।”

মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই বছর ১ অক্টোবর নদীও দোষ স্বীকার করে মহানগর হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন।

আদুরির মা সাফিয়া বলেন, ‘প্রতি রাতে ব্যাথায় আদুরি ডাকচিৎকার করছে। এখন প্রয়োজন সুচিকিৎসা।  ১৮ জুলাই ওই মামলায় রায় দেওয়া হবে। আমরা তাই ঢাকায় যাচ্ছি। আদালত সত্যের পক্ষে রায় দিবে বলে আমাগো বিশ্বাস।  আদুরি বর্তমানে জৈনকাঠি ছালিয়া দাখিল মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পরে। অভাবে কারণে আদুরির চিকিৎসা করাতে পারছিনা। পারছিনা বই, খাতা,কলম আর মাদরাসার বেতন-ভাতা  দিতে। পিতৃহারা এই আদুরির ভার কে নেবে। কীভাবে হবে ওর চিকিৎসা। ওকি শুধুই নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে বেড়ে উঠবে। যতই দিন যাচ্ছে ততই নির্যাতনের ক্ষত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ কারণে ওর সাথে অনেকেই মিশতে ভয় পায়। শুধু শরীর নয় স্পর্শকাতর স্থানগুলোতেও রয়েছে নির্যাতনের চিহ্ন।’



রাইজিংবিডি/পটুয়াখালী/১৭ জুলাই ২০১৭/বিলাস দাস/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়