ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানের স্মৃতিচারণ

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪১, ২৩ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানের স্মৃতিচারণ

অন্য সবার জন্য হয়ত ১৩, আনলাকি নম্বর কিন্তু শাহরিয়ার নাফিসের জন্য নম্বরটি আজীবন মনে রাখার মতো। শুধু জাতীয় দলের এ ক্রিকেটারের জন্য নয়, পুরো বাংলাদেশেরই সংখ্যাটা প্রিয়! কারণ ২০০৬ সালের ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংসটি উপহার দিয়েছিলেন শাহরিয়ার নাফিস।

ফতুল্লায় বাঁহাতি এ ওপেনার চোখ ধাঁধানো, মনোমুগ্ধকার এবং প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ইনিংস উপহার দেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ১৩৮ রানের ইনিংস খেলে নাকানিচুবানি খাওয়ান অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। সাদা পোশাকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের এটাই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সাফল্য। শাহরিয়ারের ইতিহাস গড়ার ম্যাচে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকে নতুন বার্তা দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু দল যখন সাফল্যের চূড়োয় তখন ‘নায়ক’ লাইমলাইটের বাইরে। ২০০৬ সালের পর আবারও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে। ১১ বছর আগের সাফল্য ভেসে উঠছে চোখের পর্দায়, কল্পনায়।

সেদিনের ‘নায়ক’ ধুমকেতু হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ধ্রুবতারার জায়গাটি দখল করতে পারেননি। তাইতো নামের পাশে একটি মাত্রই টেস্ট সেঞ্চুরি। তবে ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরিটি ছিল ভিন্ন কিছু। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের স্মৃতি নিয়ে রাইজিংবিডির সিনিয়র রিপোর্টার ইয়াসিন হাসানের সঙ্গে কথা বলেছেন শাহরিয়ার নাফিস। 

প্রশ্ন : `১৩’ সংখ্যাটিকে তো আনলাকি বলা হয়। কিন্তু আপনার জন্য তো বেশ লাকি…কি বলেন?

শাহরিয়ার নাফিস : (হাসি) অবশ্যই। সেদিন ভাগ্য আমার হয়ে দারুণ কাজ করেছে। অবশ্যই আমার জন্য লাকি নম্বর। অবিস্মরণীয় দিনটি ছিল আমার জন্য।
 


প্রশ্ন: একবারও কি ভেবেছিলেন ফতুল্লা টেস্ট শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করতে পারবেন?

শাহরিয়ার নাফিস : না সেঞ্চুরি পাব সেটা ভাবিনি। তবে ভালো কিছু করার ক্ষুধা ছিল। তখন মাত্রই আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল। যদি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো করতে পারি তাহলে আত্মবিশ্বাস শুরুতেই চলে আসবে এসব চিন্তা আসছিল। তবে সেঞ্চুরি করতে হবে এমন ভাবনা একবারও আসেনি।

প্রশ্ন: যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন কিংবা মাঝপথেও কি একবারও চিন্তা আসেনি? 

শাহরিয়ার নাফিস :  ওইটা ব্যাটিংয়ের সময় আস্তে আস্তে চলে আসবে। আপনি যখন ৭০-৮০ রানে থাকবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই চলে আসবে যে, দেখি সেঞ্চুরিটা হয় কিনা।

প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগের চার টেস্টে ব্যাটিং করেছিলেন মিডল অর্ডারে। কিন্তু ফতুল্লায় আপনাকে নামিয়ে দেয়া হয় ওপেনিংয়ে। কতটুকু চাপে ছিলেন?

শাহরিয়ার নাফিস : খুবই চাপে ছিলাম কিন্তু রোমাঞ্চিতও ছিলাম। ব্রেট লি, জেসন গিলেস্পিদের বোলিং নতুন বলে খেলার রোমাঞ্চ ছুঁয়ে যাচ্ছিল। চাপে ছিলাম কারণ আগের ম্যাচগুলোতে ভালো হয়নি পারফরম্যান্স। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাদ পড়ার একটা শঙ্কা ছিল। এ কারণে আপনা-আপনি চাপ চলে আসত।  
 


প্রশ্ন: শুনেছি আপনি ওই ম্যাচে বেশ নার্ভাস ছিলেন। নিজের ব্যাট দিয়েও ব্যাটিং করেননি…

শাহরিয়ার নাফিস : হ্যাঁ খুব নার্ভাস ছিলাম। মূল কথা কি ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ দলটি অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। কতুটুক ফর্মে থাকতে পারে একবার ভেবে দেখুন। স্বাভাবিকভাবেই একটু নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের ব্যাট দিয়ে যখন নক করছিলাম তখন বেশ ভারী মনে হচ্ছিল। পরে পাইলট ভাই (খালেদ মাসুদ) এর ব্যাট নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামি।

প্রশ্ন: ম্যান অব দ্যা ম্যাচ তো আপনিই পেয়ে যেতেন যদি রিকি পন্টিং ১১৮ রানের ইনিংসটি না খেলতেন?

শাহরিয়ার নাফিস :  অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জিতেছিল ম্যাচটি। ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নিয়ে সেদিন ভাবিনি। ভেবেছিলাম পন্টিংয়ের ব্যাটিং নিয়ে। কি অসাধারণ ইনিংসটাই না খেলেছিলেন। তবে একটা সুযোগ এসেছিল। মাশরাফি ওই ক্যাচটি ধরতে পারলে হয়ত আমরাও জিততে পারতাম। এ নিয়ে আমারদের কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ ক্যাচটা ততটা সহজও ছিল না।  

প্রশ্ন: কখন মনে হয়েছিল যে আপনি বড় ইনিংস খেলতে পারবেন?

শাহরিয়ার নাফিস : মাঠের বাইরে চাপে থাকলেও মাঠের ভিতরে তেমনটা অনুভব হয়নি। শুরুর দিকে কয়েকটি বল খেলার পরপরই মনে হয়েছিল আমার পক্ষে আজ বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। আর উইকেটটা ছিল দারুণ। যেভাবে, যেই উচ্চতায় বল খেলতে চাচ্ছিলাম ঠিক সেভাবেই খেলতে পারছিলাম।

প্রশ্ন: বলুন তো ব্রেট লি ও জেসন গিলেস্পিদের বল খেলার মন্ত্র কি ছিল?

শাহরিয়ার নাফিস : না সেভাবে কিছুই ভাবিনি আর ভাবতে চাইনি। কারণ ওরা যেভাবে বল করছিল আমি সেই মেরিট অনুযায়ী খেলেছি। বল সুন্দরভাবে ব্যাটে আসছিল। খুব সহজেই রান পাচ্ছিলাম।

প্রশ্ন: তাই বলে শেন ওয়ার্নাকে পাত্তাই দিবেন না এমনটা কি হয়?

শাহরিয়ার নাফিস : সেদিন কি হয়েছিল বলা মুশকিল। শেন ওয়ার্ন বোলিংই করতে পারছিলেন না। সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনারকে এত সহজে খেলা এর আগে কখনো হয়েছিল কিনা জানা নেই।

প্রশ্ন: আপনার সেঞ্চুরিও তো ওয়ার্নের ওভারেই…

শাহরিয়ার নাফিস: লাঞ্চের প্রায় এক বা দেড় ঘন্টা পর শেন ওয়ার্নের বলে সুইপ করে ৯৯ থেকে ১০০ তে পৌঁছাই। আমার জন্য অবিস্মরণীয় একটি মুহুর্ত সেটি। আমার প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরিও ছিল সেটা। সব মিলিয়ে দারুণ লেগেছিল। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা সবাই অভিনন্দন জানান। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট পাশে ছিল তাই সবার আগে অভিনন্দন করতে পেরেছিল।

প্রশ্ন: আপনার ব্যাটিং দেখে ওরাও তো প্রশংসা করেছিল?

শাহরিয়ার নাফিস: ওরা আসলে আমাকে চিনত না। আমি যখন ফুল ফ্লো তে তখন অনেকেই বলতে শুনেছি, আমার নাম কি বা অমুক-তমুক। ওরাও কিছুটা চাপ অনুভব করছিল। কিন্তু আমার ব্যাটিং ওদের ভালো লেগেছিল বেশ।



প্রশ্ন: ফতু্ল্লার পর চট্টগ্রামেও তো আপনি একটা ফিফটি করেছিলেন?

শাহরিয়ার নাফিস : প্রথম ইনিংসে শূন্য করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে সত্তর রানের মতো একটা ইনিংস খেলেছিলাম। খুব ভালো ফর্মে ছিলাম ওই সময়টাতে। আমরা ওই সময়টাতে আজকের মতো ধারাবাহিক ছিলাম না। প্রথম ইনিংস ভালো করলে দ্বিতীয় ইনিংস পারতাম না। অস্ট্রেলিয়া সেরা দলের একটি। ওরা ভুল এমনিতেও কম করেছিল।

প্রশ্ন: পুচকে শাহরিয়ার নাফিস অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিল। এখন শাহরিয়ার নাফিস বড়, পরিণত। নিজেকে দলের বাইরে দেখতে কতুটুক খারাপ লাগছে?

শাহরিয়ার নাফিস: আমি নিজেকে ফেরাতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত বছর ঘরোয়া ক্রিকেট ভালো গিয়েছে। এবারও ভালো যাবে সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।

প্রশ্ন: এবার অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে আমাদের পারফরম্যান্স কেমন প্রত্যাশা করছেন?

শাহরিয়ার নাফিস : আমি জয়ের কথা বলব। কারণ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা যে পারফরম্যান্স করেছিলাম সেই পারফরম্যান্স করতে পারলে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো সম্ভব। বাংলাদেশ এখন আগের থেকে অনেক পরিণত, অনেক এগিয়ে। ম্যাচ উইনিং পারফর্মারও বেশি। ওদের হারানো সম্ভব।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ আগস্ট ২০১৭/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়