ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

টেস্টের পাঁচ দিনই ব্যাট হাতে নেমেছেন তারা

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২০ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টেস্টের পাঁচ দিনই ব্যাট হাতে নেমেছেন তারা

কলকাতা টেস্টের পাঁচ দিনই ব্যাট হাতে নেমেছেন চেতেশ্বর পূজারা

আবু হোসেন পরাগ : একটা টেস্টে খেলা হয় পাঁচ দিন। সেই টেস্টের পাঁচ দিনই ব্যাট হাতে নামা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা বটে। আর টেস্ট ইতিহাসে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে মাত্র ৯ জনের। সর্বশেষ বিরল এই কীর্তির তালিকায় নাম লেখালেন ভারতের চেতেশ্বর পূজারা। ভারত-শ্রীলঙ্কা কলকাতা টেস্টের পাঁচ দিনই ব্যাট হাতে নেমেছেন ২৯ বছর বয়সি এই ব্যাটসম্যান।

এই কীর্তি গড়ার জন্য অবশ্য বৃষ্টিকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন পূজারা! গত বৃহস্পতিবার শুরু কলকাতা টেস্টের প্রথম দুই দিনই ছিল বৃষ্টির দাপট। টস জিতে ব্যাট করতে নামা ভারত প্রথম দিনে ১১.৫ ওভার ব্যাট করে তুলেছিল ৩ উইকেটে ১৭, পূজারা অপরাজিত ছিলেন ৮ রানে। বৃষ্টি ভেজা দ্বিতীয় দিনে খেলা হয় ২১ ওভার, পূজারা তখনো অপরাজিত ৪৭ রানে। তার ৫২ রানের ইনিংসটা শেষ হয় তৃতীয় দিনে, ভারত অলআউট হয় ১৭১ রানে। চতুর্থ দিনে শ্রীলঙ্কাকে ২৯৪ রানে অলআউট করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৭১, পূজারা অপরাজিত ২ রানে। সোমবার শেষ দিনে পূজারা আউট হয়েছেন ২২ রানে।

 


এমএল জয়সিমহা, ১৯৬০
পূজারা যে মাঠে পাঁচ দিনই ব্যাট হাতে নামলেন, কলকাতার সেই ইডেন গার্ডেনেই ৫৭ বছর আগে এমন নজির প্রথমবার দেখেছিল টেস্ট ক্রিকেট। গড়েছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় ব্যাটসম্যান এমএল জয়সিমহা। সে সময় টেস্টের প্রথম তিন দিন খেলার পর এক দিন ছিল 'রেস্ট ডে'। তারপর হতো বাকি দুই দিনের খেলা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারত প্রথম দিনে তুলেছিল ৭ উইকেটে ১৫৮ রান, নয় নম্বরে নেমে ২ রানে অপরাজিত ছিলেন জয়সিমহা। দ্বিতীয় দিনে ভারত ১৯৪ রানে অলআউট হলে জয়সিমহা ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়াকে ৩৩১ রানে অলআউট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ২ উইকেটে তুলেছিল ৬৭, চারে নেমে শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন জয়সিমহা। চতুর্থ দিন আরো ৪ উইকেট হারিয়ে ভারতের সংগ্রহ ২৪৩, জয়সিমহা তখনো অপরাজিত ৫৯ রানে। তার ৭৪ রানের ইনিংসটা শেষ হয় পঞ্চম দিনে, ভারত অলআউট হয় ৩৩৯ রানে। ২০৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে ১২১ রান তোলার পরই ম্যাচ ড্র হয়ে যায়।

 


জিওফ বয়কট, ১৯৭৭
ট্রেন্ট ব্রিজে অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্ট। টস জিতে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়াকে ২৪৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে প্রথম দিন শেষে ইংল্যান্ড তোলে বিনা উইকেটে ৯, বয়কট অপরাজিত ১ রানে। দ্বিতীয় দিনে ৫ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২৪২, বয়কট তখনো অপরাজিত ৮৮ রানে। তার ১০৭ রানের ইনিংসটা শেষ হয় তৃতীয় দিনে, ইংল্যান্ড অলআউট হয় ৩৬৪ রানে। চতুর্থ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ৩০৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে বিনা উইকেটে ১৭ রান তোলে স্বাগতিকরা, বয়কট অপরাজিত ১২ রানে। ১৮৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা ইংল্যান্ড পঞ্চম দিনে বয়কটের অপরাজিত ৮০ রানের সুবাদে ম্যাচ জেতে ৭ উইকেটে। আরেক ওপেনার অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলি করেছিলেন ৮১।

 


কিম হিউজ, ১৯৮০
এটি ছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটের ১০০ বছর পূর্তির ম্যাচ। ধারাভাষ্যকার হিসেবে জন অ্যারলটের শেষ টেস্ট। ম্যাচের প্রথম দুই দিনেই বাগড়া দিয়েছিল বৃষ্টি। টস জিতে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়া প্রথম দিনে তুলেছিল ২ উইকেটে ২২৭, হিউজ অপরাজিত ছিলেন ৪৭ রানে। দ্বিতীয় দিনে আরো ২ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২৭৮, হিউজ তখনো অপরাজিত ৮২ রানে। তার ১১৭ রানের ইনিংসটা শেষ হয় তৃতীয় দিনে, ৫ উইকেটে ৩৮৫ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ দিনে ইংল্যান্ডকে ২০৫ রানে অলআউট করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ১০৬ রান তোলে অসিরা, হিউজ অপরাজিত ৩৮ রানে। শেষ দিনে হিউজ ৮৪ রানে আউট হওয়ার পর ৪ উইকেটে ১৮৯ রানে ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা। ৩৭০ রানের লক্ষ্যে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে ২৪৪ রান তোলার পর ড্র হয়ে যায় ম্যাচটা।

 


অ্যালান লাম্ব, ১৯৮৪
ইয়ান বোথামের দ্বিতীয়বার ইনিংসে ৮ উইকেট নেওয়ার টেস্ট এটি। তার দল ইংল্যান্ড যদিও অস্ট্রেলিয়ার কাছে ম্যাচটা হেরেছিল ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ৩৪২ রানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ২৮৭ রানের জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুর্দান্ত জয় এনে দিয়েছিলেন গর্ডন গ্রিনিজ (২১৪*) ও লরি গোমেস (৯২*)। অথচ টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শতরানের উদ্বোধনী জুটির পর ক্লাইভ লয়েডের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। প্রথম দিন শেষে ইংল্যান্ড তুলেছিল ২ উইকেটে ১৬৭ রান, লাম্ব অপরাজিত ১৩ রানে। দ্বিতীয় দিনে ২৩ রানে আউট হন লাম্ব, ইংল্যান্ড অলআউট হয় ২৮৬ রানে। তৃতীয় দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৫ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ১১৪ রান তোলে ইংল্যান্ড, তখন লাম্ব অপরাজিত ৩০ রানে। চতুর্থ দিনে আরো ৩ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২৮৭, সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া লাম্ব তখনো অপরাজিত ১০৯ রানে। শেষ দিনে আর এক রান যোগ করেই আউট হন লাম্ব, ইংল্যান্ড ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ৩০০ রানে। এরপর ৩৪২ রানের লক্ষ্যে গ্রিনিজের ২৪২ বলে ২৯ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ২১৪ রানের ওয়ানডে স্টাইলের সেই ম্যাচজয়ী ইনিংস।

 


রবি শাস্ত্রী, ১৯৮৪
মজার বিষয়, তিন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের টেস্টের পাঁচ দিন ব্যাট হাতে নামার কীর্তি একই মাঠে- কলকাতার ইডেন গার্ডেনে! জয়সিমহার ২৪ বছর পর দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়েন শাস্ত্রী। এই ম্যাচ দিয়েই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের। অষ্টম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি টেস্ট অভিষেকেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। টস জিতে ব্যাট করতে নামা ভারত প্রথম দিনে তুলেছিল ৪ উইকেটে ১৬৮, শাস্ত্রী ২৬ রানে অপরাজিত। বৃষ্টির বাগড়ায় দ্বিতীয় দিনে খেলা হয় মাত্র ২০ মিনিট। ভারত স্কোরবোর্ডে যোগ করে ৮ রান। এই ৮ রানই করেন ১৩ রান নিয়ে ব্যাটিং শুরু করা আজহার। শাস্ত্রী তখনো আগের দিনের সেই ২৬ রানেই অপরাজিত। তৃতীয় দিনে শুধু সেঞ্চুরিয়ান আজহারের উইকেট হারিয়ে ভারতের সংগ্রহ ৩৪৮, শাস্ত্রী অপরাজিত ১০৮ রানে। তার ১১১ রানের ইনিংসটি শেষ হয় চতুর্থ দিনে, ভারত ইনিংস ঘোষণা করে ৭ উইকেটে ৪৩৭ রানে। শেষ দিনে ইংল্যান্ডকে ২৭৬ রানে অলআউট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ২৯ রান তোলে ভারত, শাস্ত্রী অপরাজিত ছিলেন ৭ রানে।

 


আদ্রিয়ান গ্রিফিথ, ১৯৯৯
হ্যামিল্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ততদিনে টেস্টের মাঝে 'রেস্ট ডে'র প্রচলন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে গ্রিফিথের সেঞ্চুরিতে প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১ উইকেটে ১৮২, গ্রিফিথ অপরাজিত ১০৩ রানে। দ্বিতীয় দিনে গ্রিফিথ আউট হন ১১৪ রানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হয় ৩৬৫ রানে। তৃতীয় দিনে নিউজিল্যান্ডকে ৩৯৩ রানে অলআউট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ১ ওভার ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনো রান করতে পারেনি, পড়েনি উইকেটও। দুই ওপেনার গ্রিফিথ ও ক্যাম্পবেল শূন্য রানে অপরাজিত। বৃষ্টি ভেজা চতুর্থ দিনে খেলা হয়েছে মোটে ২৯.১ ওভার। তখন সফরকারীদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৬৬, গ্রিফিথ অপরাজিত ১৪ রানে। শেষ দিনে গ্রিফিথ আউট হন ১৮ রানে, ক্যারিবীয়রা গুটিয়ে যায় মাত্র ৯৭ রানে। ৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।

 


অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, ২০০৬
চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক মাইকেল ভন দলে নেই। সহ-অধিনায়ক মার্কাস ট্রেসকোথিকও খেলছেন না ব্যক্তিগত কারণে। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্ব পড়ল ফ্লিনটফের কাঁধে, পুরো সিরিজের জন্যই। ফ্লিনটফ পাঁচ দিনই ব্যাট হাতে নামেন সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে, মোহালিতে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টি আর আলোকস্বল্পতায় প্রথম দিনের খেলা আগেভাগেই শেষ হওয়ার আগে ৫০.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬৩ রান তোলে ইংল্যান্ড, ফ্লিনটফ অপরাজিত ৪ রানে। একই কারণে দ্বিতীয় দিনে খেলা হয় মাত্র ১৪.৩ ওভার। ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২০০, ফ্লিনটফ তখনো অপরাজিত ২৬ রানে। তৃতীয় দিনে শেষ হয় ফ্লিনটফের ৭০ রানের ইনিংস, ইংল্যান্ড অলআউট হয় ৩০০ রানে। চতুর্থ দিনে ভারতকে ৩৩৮ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড তোলে ৫ উইকেটে ১১২, ফ্লিনটফ অপরাজিত ১৬ রানে। শেষ দিনে ইংলিশ অধিনায়ক আউট হন ৫১ রানে, তার দল গুটিয়ে যায় ১৮১ রানে। শুধু ওয়াসিম জাফরের উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রানের লক্ষ্যটা সহজেই পেরিয়ে যায় স্বাগতিকরা।

 


আলভিরো পিটারসেন, ২০১২
ওয়েলিংটনে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। ভেজা আউটফিল্ড ও আলোকস্বল্পতায় প্রথম দিনে খেলা হয় ৪২ ওভার। টস হেরে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ২ উইকেটে ১৩৬, পিটারসেন অপরাজিত ৪৪ রানে। বৃষ্টির বাধা আর আলোকস্বল্পতায় দ্বিতীয় দিনে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ওই ২ উইকেটেই ২৪৬, পিটারসেন সেঞ্চুরি থেকে ৪ রান দূরে। তার ১৫৬ রানে ইনিংস শেষ হয় তৃতীয় দিনে, দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ৪৭৪ রানে। চতুর্থ দিনে নিউজিল্যান্ডকে ২৭৪ রানে অলআউট করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ৭৫ রান তোলে স্বাগতিকরা, যেখানে পিটারসেনের অবদান ৩৮। শেষ দিনে ব্যক্তিগত খাতায় আর এক রান যোগ করেই রানআউটে কাটা পড়েন পিটারসেন, ৩ উইকেটে ১৮৯ রানে ইনিংস ঘোষণা করেন গ্রায়েম স্মিথ। ৩৮৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ৬ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে ২০০ রান, ম্যাচ হয় ড্র।

তথ্যসূত্র : ইএসপিএন ক্রিকইনফো, উইজডেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ নভেম্বর ২০১৭/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়