ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে রংপুরের জয়

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ২১ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে রংপুরের জয়

জয়ের পর রংপুরের খেলোয়াড়দের উল্লাস

ক্রীড়া প্রতিবেদক : একদিকে গেইল-ম্যাককালাম-মালিঙ্গা-পেরেরা। অন্যদিকে আফ্রিদি-পোলার্ড-আমির-লুইস। দুই দলের নেতৃত্বে দেশের দুই সেরা তারকা মাশরাফি ও সাকিব।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিপিএলের সবচেয়ে ‘হেভিওয়েট’ দুই দল রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ডায়নামাইটসের লড়াই! ম্যাচকে ঘিরে ছড়িয়েছিল উন্মাদনা, উত্তেজনা, রোমাঞ্চ। সেরাদের লড়াই দেখার জন্য মিরপুর শের-ই-বাংলাও হাউসফুল। মাঠে লড়াইও হলো, রোমাঞ্চও ছড়াল। শেষ পর্যন্ত হাসিটা চওড়া হলো মাশরাফি বিন মুর্তজার। পুরোদিন হেসেও শেষ মুহূর্তে ম্লান সাকিব আল হাসানের চওড়া হাসি!

১৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শেষ ওভারে ১০ রান প্রয়োজন ছিল ঢাকার। পোলার্ড তৃতীয় বলে ছক্কা মারলেন ঠিকই। কিন্তু শেষ করে আসতে পারলেন না। শেষ দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে রংপুরকে তৃতীয় জয়ের স্বাদ দেন থিসারা পেরেরা।

১৪২ রান তুলতে রংপুর হারায় সবকটি উইকেট। ঢাকা সব উইকেট হারায় ১৩৯ রানে। বিপিএলে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দুই দলই সবকটি উইকেট হারাল।



টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ম্যাককালাম-গেইলদের ব্যাটিংয়ে পাঠান সাকিব। গত রাতে প্রথম রানের জন্য ১২ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ক্রিস গেইলকে। আজ প্রথম বলেই পেয়ে যান ২ রান। ধারণা করা যাচ্ছিল, আজ ক্রিস গেইল আরো বিধ্বংসী ইনিংস উপহার দেবেন। কথা রাখেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব।

২৮ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৫১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন গেইল। গেইল একপ্রান্তে খেলে গেলেও অন্যপ্রান্তে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। গেইল ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান রংপুরের হয়ে লড়াই করতে পারেননি। দৃষ্টিকটু ছিল স্থানীয় ক্রিকেটারদের ব্যাটিং! মোসাদ্দেকের বলে গেইল আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত রংপুরের রান ছিল ৭ ওভারে ৭১, রান রেট ১০.১৪। সেখানে গেইল আউট হওয়ার পর বাকি ১৩ ওভারে রংপুর স্কোরবোর্ডে তুলতে পারে মাত্র ৭১। রানরেট ১০.১৪ থেকে এক লাফে নেমে যায় ৭.১৫-এ।

গেইল কথা রাখলেও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ছিলেন নিষ্প্রভ। আফ্রিদির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৮ বলে করেন ৬ রান। গেইলের তাণ্ডবের পর জুটি বাঁধেন মোহাম্মদ মিঠুন ও শাহরিয়ার নাফীস। কিন্তু তাদের ব্যাটিং দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, এটা ২০ ওভারের ম্যাচ! পাঁচ উইকেট পাওয়া সাকিবের প্রথম শিকারে পরিণত হওয়ার আগে শাহরিয়ার ৯ বলে করেন ৯ রান। ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে ওপরে তুলে আনেন মাশরাফি। কিন্তু ১ চার ও ১ ছয়ে আটকা অধিনায়কের ইনিংস। ১১ বলে ১৫ রান করে মাশরাফি আউট হন আফ্রিদির বলে। মিঠুন রান করলেও ছিল না কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছাপ। ২৬ বলে ২২ রান করে সাকিবের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। এরপর থিসারা পেরেরা (১৫) ও রবি বোপারা (১২) বাদে কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি। দীর্ঘদেহী জিয়াউর রহমান ৯ বল খেলে করেন ৪ রান।

সাকিব তৃতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৫ উইকেটের স্বাদ পান। শেষ ওভারেই নেন ৩ উইকেট। রংপুরের লেজটা গুঁড়িয়ে দিতে সাকিবের অনবদ্য বোলিংয়ের খুব প্রয়োজন ছিল। ১৬ রানে ৫ উইকেট নেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।



মাঝারি রান ডিফেন্ড করার জন্য রংপুরের দুর্দান্ত শুরুর প্রয়োজন ছিল। প্রথম ওভারেই দলকে এগিয়ে নেন মাশরাফি। সুনীল নারিন মাশরাফির বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। তিনে ব্যাটিংয়ে নামা সাকিব ১১ বলে ১১ রান করে ফেরেন সোহাগ গাজী বলে বোল্ড হয়ে। এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ডানহাতি অফ স্পিনারের বল মিস করেন সাকিব।

দ্রুত ২ উইকেট হারালেও বিচলিত হননি এভিন লুইস। তিন ছক্কায় রংপুরকে কড়া জবাব দেন ক্যারিবীয় এই ওপেনার। তাকে সঙ্গ দেন জহুরুর ইসলাম। দুজন ৪৪ রানের জুটি গড়েন। পানি পানের বিরতির পর এ জুটি ভাঙেন সোহাগ গাজী। ডানহাতি এই স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন ২৫ বলে ২৮ রান করা লুইস। ৬৯ থেকে ৭৫ পর্যন্ত যেতেই আরো ২ উইকেট হারায় ঢাকা। ১৯ বলে ২৯ রান করা জহুরুলকে দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংসে এসে বোল্ড করেন মাশরাফি। মেহেদী মারুফের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউটে কাটা পড়েন মোসাদ্দেক।

৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তুলে ঢাকাকে চেপে ধরে রংপুর। কিন্তু বুমবুম আফ্রিদির ২১ রানের ঝড়ে আবার পিছিয়ে পড়ে শিরোপাপ্রত্যাশীরা। রংপুরকে ফের এগিয়ে নেন রুবেল। ডানহাতি এ পেসারের কাটারের উত্তর জানা ছিল না আফ্রিদির।

জয়ের জন্য তখনো ৩২ রান প্রয়োজন ঢাকার। পোলার্ড ও মেহেদী জয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন ১৬ রানে। শেষ ১৮ বলে প্রয়োজন ১৬ রান। রুবেল নিজের শেষ ওভার করতে এসে ৩ রান দিয়ে নেন মেহেদী মারুফের (১৫) উইকেট। পরের ওভারে মালিঙ্গা ৩ রান দিয়ে নেন নাদিফ চৌধুরীর (২) উইকেট।



শেষ ৬ বলে ঢাকার জয়ের জন্য দরকার ১০ রান। থিসারার পেরেরার প্রথম দুই বলে কোনো রান নিতে পারেননি পোলার্ড। কী মনে করে তৃতীয় বলটি ফুলটস দেন পেরেরা। পোলার্ড সে অপেক্ষায় ছিলেন। মিড উইকেট দিয়ে বল পাঠান গ্যালারিতে। ৩ বলে দরকার ৪ রান। পরের বল আবারও ডট। এবং পঞ্চম বলে বোল্ড পোলার্ড। পেরেরার ইয়ার্কারে ব্যাট চালালেও সংযোগ করতে পারেননি ক্যারিবীয় তারকা। শেষ বলে ব্যাটিংয়ে ক্রিস গেইলের ক্যাচ মিস করা আবু হায়দার রনি। পেরেরার বলে স্কুপ মারতে গেলেন রনি। বল মিস করে হারালেন উইকেট। জয় রংপুরের। রংপুর শিবিরে উল্লাস, ঢাকা শিবিরে তখন পিনপতন নীরবতা!

রংপুর জিতলেও এ জয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে তাদেরকে। ১৪২ রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই করলেও বোলাররা ১৯ রান দিয়েছেন অতিরিক্ত খাতে। এর মধ্যে ওয়াইড ১২টি, নো বল ২টি। এগুলো তো শুধু অতিরিক্ত রানই না, এর জন্য করতে হয়েছে অতিরিক্ত বলও!

৮ ম্যাচে এটি ঢাকার তৃতীয় পরাজয়। বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা জিতেছে ৪ ম্যাচ, একটি ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে বৃষ্টিতে। ৯ পয়েন্ট নিয়ে এখনো দুইয়ে অবস্থান সাকিবের দলের। রংপুর রাইডার্স ৬ ম্যাচের ৩টিতে জিতেছে, ৩টিতে হেরেছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ নভেম্বর ২০১৭/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়