ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘লিটল ম্যাগাজিনকে ব্যবসায়িক পণ্য মনে করবেন না’

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘লিটল ম্যাগাজিনকে ব্যবসায়িক পণ্য মনে করবেন না’

ত্রিশ বছর ধরে সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘গাণ্ডীব’ সম্পাদনা করছেন তপন বড়ুয়া। ‘গাণ্ডীব’ এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বইমেলা উপলক্ষে বিগত বছরগুলোর ফেব্রুয়ারিতে ছোট কাগজটির বিশেষ সংখ্যা বের হলেও এ বছর প্রকাশ হচ্ছে না। এর পেছনে বিভিন্ন সংকটকেই দায়ী করছেন সম্পাদক। ছোট কাগজের সংকটের বিভিন্ন দিক এবং বইমেলার বেশকিছু বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অহ নওরোজ

রাইজিংবিডি : শুনলাম বইমেলা উপলক্ষে এবার ‘গাণ্ডীব’ বের হচ্ছে না। ঘটনা কী?
তপন বড়ুয়া : কে পড়ে এখন ছোট কাগজ? মানুষের সময় আছে? আগে তো বিক্রি করে যে টাকা পেতাম সেই টাকা দিয়েই নতুন আরেকটি সংখ্যা করতে পারতাম। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে কেউ আর আগের মতো কেনে না। টাকা কোথায় পাবো? আমি তো লিটলম্যাগ করতে এসে লিটল ম্যাগাজিন চালাবো করবো আবার পাশাপাশি এর টাকা দিয়ে সংসারও চালাবো, এমন প্ল্যান কখনো করিনি। আমার তো কত সুযোগ ছিল, লিটল ম্যাগাজিন করবো বলে ওসব করলাম না। সাহিত্য করতে গেলাম, বাজারিদের মতো হতে পারিনি বলে কন্টিনিউ করতে পারছি না।

রাইজিংবিডি : আপনি কী মনে করেন আপনার পত্রিকার মানের কোনো অবনতি হয়েছে?
তপন বড়ুয়া : না, আমি মনে করি না মানের কোনো  প্রবলেম আছে। আমি একটি কথা বলি-পৃথিবীর যেসব ধর্মগ্রন্থ আছে, আমি যতটুকু পড়েছি তাতে আমার মনে হয় এগুলোর প্রতিটিই উচ্চমানের মহাকাব্য। আমি এরকম ধরে নিয়েই তাদেরকে বিশ্বাস করি। মহাভারতের একটি লাইন আছে এরকম-‘কিছুই বড় নয়, কর্ম ছাড়া’। আমার কর্মই প্রমাণ করবে আমি কী করেছি। আমার সেই সাহস আছে যে কেউ যদি আমার পত্রিকার কোনো সংখ্যা নিয়ে কথা বলতে আসে আমি তার সামনে দাঁড়াতে পারবো। কেউ বলুক আমার কোনো সংখ্যা নিয়ে।

রাইজিংবিডি : গাণ্ডীব’ এর প্রথম সংখ্যা নাকি পাঁচশর বেশি বিক্রি হয়েছিল?
তপন বড়ুয়া : প্রথমদিকে সব সংখ্যায় অলমোস্ট পাঁচশোর মতন করে বিক্রি হতো। প্রথম সংখ্যা বইমেলাতেই বিক্রি হয়েছিল সাতশ। এক হাজার ছাপিয়েছিলাম। আমার সব মনে আছে। বাদাম খাচ্ছি, গল্প করছি, এ কিনছে ও কিনছে, এভাবেই বিক্রি হয়ে গেল। পুশ করে সেল না কিন্তু। পুশ-সেল করে কী সাহিত্য হয় নাকি। এভাবেই পরের সংখ্যা করার সাহস পেলাম। ঐ টাকা দিয়ে পরের সংখ্যা করেছি। ভালো লেখা খুঁজে বের করেছি। রাতের পর রাত সম্পাদনা করেছি। কোন লাইনটা কীভাবে লিখলে ঠিকমতো মানাবে সে প্রচেষ্টা করেছি। আর এখনকার অধিকাংশ ছোট কাগজের সম্পাদক সেই চিন্তা মাথাতেই রাখেন না। অনেকে আবার পত্রিকার জন্য বিজ্ঞাপনের টাকা নিয়ে পত্রিকা না করে সেই টাকা কাজে খরচ করেন।

রাইজিংবিডি : সরকারের কী উচিত নয় লিটল ম্যাগাজিনের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করা?
তপন বড়ুয়া :
সেটা যদি প্রকৃত অর্থেই ঠিকভাবে করা হত তাহলে আমি কন্টিনিউ করতে পারতাম। স্টল নিতে পারতাম বইমেলায়। সরকারের ভাবা উচিত লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে। সাহিত্যচর্চার মূল ভিত্তি হলো এই লিটলম্যাগ। এটা যদি এভাবে বাজারি হয়ে যায় তাহলে সমস্যা। এটা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। নাহলে সামনে বড় সমস্যা অপেক্ষা করছে আমাদের সাহিত্যের জন্য।

রাইজিংবিডি : এ বছর লিটল ম্যাগাজিনের স্থানটা প্রথমে উদ্যানে নেওয়া হয়েছিল। তারপর আবার আগের জায়গায় আনা হয়েছে, এতে লিটল ম্যাগাজিন কর্নার প্রস্তুত হতে দেরি হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তপন বড়ুয়া : ঐতিহ্যের একটা দাম আছে। বহেরা তলায় লিটল ম্যাগাজিন স্টল দিয়ে প্রথম দিয়ে এটা যখন বইমেলার সাথে যুক্ত হয়েছিল সেই প্রথম সময়ের দিকে আমিও ছিলাম। সাজ্জাদ ছিল (সাজ্জাদ শরীফ), শান্তনু ছিল (শান্তনু কায়সার)। এই জায়গা থেকে সরে যাওয়া উচিত নয়। ঐতিহ্যের একটা দাম আছে। যারা প্রকৃত অর্থে লিটল ম্যাগাজিন চর্চা করে তারা কী এটা ব্যবসায়িকভাবে নেয়? লিটল ম্যাগাজিন কখনোই ব্যবসার পণ্য নয়। লিটল ম্যাগাজিনকে ব্যবসায়িক পণ্য মনে করবেন না। ব্যবসার জন্য আরো অনেক কিছু আছে। এই যে লিটল ম্যাগাজিনের স্থান সরানো সেটা প্রমাণ করে, বাংলা একাডেমি বাজারি হতে বলছে। তবে লিটলম্যাগ কর্নারটা সেখানেই ফেরানো হয়েছে দেখে ভালো লাগছে।

রাইজিংবিডি : এবারের বইমেলা কেমন লাগছে?
তপন বড়ুয়া :
এবার একটু ফাঁকা স্পেস পাওয়া গেছে উদ্যানে। ধুলোবালি কম। সবমিলিয়ে ভালো লেগেছে। আর এখনো তো জমেনি। আরো কিছুদিন যাক বলবো। তবে একথা সত্য যে স্টল নম্বরটা এখনো দেওয়া হয়নি, বিষয়টি ঠিক করেনি তারা। এটির সমাধান হওয়া উচিত।

রাইজিবিডি : এবার কারো নামে কোনো চত্বরও করা হয়নি।
তপন বড়ুয়া :
সেটাই তো দেখছি। এতে স্টলগুলো খুঁজে পেতেও বেশ ঝামেলা হচ্ছে। বাংলা একাডেমিকে এই বিষয়গুলো ভাবা উচিত।

রাইজিংবিডি : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দাদা।
তপন বড়ুয়া :
তোমাকেও। ভালো থেকো।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/অহ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়