ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভ‌্যাট ফাঁকি : এনবিআরের হিসাবে রবির ১০ কোটি টাকা

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভ‌্যাট ফাঁকি : এনবিআরের হিসাবে রবির ১০ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : পাওনা মূল্য সংযোজন কর (ভ‌্যাট/মূসক) বাবদ ১০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে বেসরকারি মোবাইলফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড।

একইসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) বাকি পাওনা পর্যায়ক্রমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কোম্পানিটি।

রোববার রবির পক্ষ থেকে এলটিইউর হিসাবে ওই টাকা জমা দিয়ে তার চালান পাঠানো হয়েছে বলে এনবিআর সূত্র জানা যায়। ভ‌্যাটের চালান পাওয়ার বিষয়টি এলটিইউর উপকমিশনার মো. বদিরুজ্জামান মুন্সি রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে এনবিআর সূত্রে আরো জানা যায়, রবি কর্তৃপক্ষ আজ পাওনা ১০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। বাকি পাওনা টাকা তারা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করার কথা জানিয়েছে। তবে ভ‌্যাটবাবদ অন‌্যান‌্য পাওনার বিষয়ে আইনি নিষ্পত্তির জন‌্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) সহায়তা নেবে রবি।

এর আগে রোববার ভ‌্যাট ফাঁকির অভিযোগে রবির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ রাখা সংক্রান্ত এনবিআর করা আবেদনটি নিষ্পত্তি করেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মূল্য সংযোজন কর ফাঁকির অভিযোগে মোবাইলফোন অপারেটর রবির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দে এনবিআরের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভ‌্যাট ফাঁকির অভিযোগে রবির ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো তিন দিনের জন্য জব্দ রাখতে সব ব্যাংককে নোটিশ দেয় এনবিআর। প্রায় ১৯ কোটি টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) থেকে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়।

অন‌্যদিকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৯২৪ কোটি ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ টাকা আদায়ে চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করে এনবিআর। পাঁচটি চিঠির মধ্যে একটি চিঠিতে কোম্পানিটির কাছে ৭১১ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৭ টাকা টাকা দাবি করেছে এলটিইউ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট প্রদান সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরীক্ষা করা হয়। ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ মূসক অডিটের পাঁচ সদস্যের কমিটি কর্তৃক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এসএপি সফটওয়্যার খাতে অপরিশোধিত মূসক বাবদ ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫২৮ টাকা এবং অপরিশোধিত উৎসে মূসক বাবদ ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৮ টাকা কম পরিশোধের প্রমাণ পায়। অর্থাৎ অনাদায়ী হিসেবে মোট ৭১১ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৭ টাকা আদায়ের জন্য মূসক আইন, ১৯৯১ এর ৫৫ এর ৩ উপধারা অনুযায়ী দাবিনামা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পৃথক অপর চিঠিতে ইন্টারকানেকশন চার্জ হিসেবে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ টাকা দাবিনামা চূড়ান্ত করে চিঠি দিয়েছে এলটিইউ।

এর আগে এ দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মূসক আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছিল সংস্থাটি। কোনো জবাব না পাওয়ায় এবারে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করেছে।

আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যাটারি, ক্যাবল, প্রিন্টেড বোর্ড, রাইডার ও সুইচ ইত্যাদি আমদানিতে রেয়াত গ্রহণ করে রবি আজিয়াটা ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৬২ টাকা ফাঁকি দিয়েছে বলে আর একটি চিঠিতে দাবি করেছে মূসক কর্তৃপক্ষ, যা মূসক আইন, ১৯৯১ এর ৯(১)(ঙ) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বকেয়া ওই অর্থ আদায়ে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করার পর রোববার দাবিনামা চূড়ান্ত করে নোটিশ দেয় বৃহৎ করদাতা ইউনিট।

অপর চিঠিতে টেলিফোন, টেলিপ্রিন্টার, টেলেক্স, ফ্যাক্স বা ইন্টারনেট সংস্থা ও সিমকার্ড সরবরাহকারীসহ বিবিধ সেবার ওপর প্রযোজ্য ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৩৪৮ টাকা ভ্যাটবাবদ চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করা হয়।

সর্বশেষ চিঠিতে রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের একীভূতকরণের ক্ষেত্রে মার্জ ফি বাবদ ১০০ কোটি টাকা এবং এয়ারটেলের অনুকূলে তরঙ্গ মূল্য সমন্বয়বাবদ ৫০৭ কোটি টাকাসহ মোট ৬০৭ কোটির ওপর প্রযোজ্য উৎসে মূসক হিসেবে ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে, যা মূসক আইন, ১৯৯১ এর ৬(৩), ৬(৪ক), ৬(৪খ), ৬(৪ঙ) ধারা ও বিধিমালা অনুযায়ী আদায়যোগ্য। অনাদায়ী ওই টাকার দাবিনামা মূসক আইনের ৫৫ এর (৩) উপধারা অনুযায়ী চূড়ান্ত করা হয়। আর দাবিকৃত রাজস্ব অনতিবিলম্বে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান জন্য অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিটি চিঠিতে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মার্চ ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়