ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

২৬৫ বিদেশি নাগরিকের ঢাকা ত্যাগ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৩ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২৬৫ বিদেশি নাগরিকের ঢাকা ত্যাগ

একাত্তরে বাংলাদেশের জন্য নিউইয়র্কে মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের কনসার্টে উপস্থিত দর্শকশ্রোতা

শাহ মতিন টিপু : ১৯৭১-এর ১৩ মার্চ ছিল শনিবার। এদিনটি ছিল অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ষষ্ঠ দিবস। একাত্তর সালের এ সময়টা ছিল চরম উত্তাপ ছড়ানো। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই বিস্ফোরণের দিকে ধাবমান।

যে কোনো সময়েই ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের অঘটন এমন উপলব্ধি থেকে বিদেশিদের ঢাকা ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়। আজকের এইদিনে ৪৫ জাতিসংঘ কর্মীসহ ২৬৫ বিদেশি নাগরিক ঢাকা ত্যাগ করেন।  বিদেশিদের এভাবে দেশত্যাগ ঢাকায় বড় ধরনের গণহত্যার পরিবেশ তৈরিরই ইঙ্গিত বহন করছিল।

অসহযোগের কারণে যথারীতি আজও সরকারী, আধাসরকারী অফিস-আদালত কর্মচারীদের অনুপস্থিতির জন্য বন্ধ থাকে। বেসরকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী স্বাভাবিকভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যায়। অন্যদিকে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে শোক হিসাবে আজও সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠান, বাসভবন এবং যানবাহনে উত্তোলিত ছিল কালো পতাকা ।

এদিন সিএ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, নৌ-পরিবহন, ডক, পাটকল এবং সুতাকলের শ্রমিক সংগঠনসমূহ এবং ছাত্র ইউনিয়ন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) প্রাঙ্গণে পরিষদের সকল আঞ্চলিক শাখার আহ্বায়ক, সম্পাদক ও সদস্যদের সভা আহ্বান করে।

অপরদিকে সমগ্র পাকিস্তানে ভুট্টোর পিপলস পার্টি এবং কাইয়ুম মুসলিম লীগ ব্যতীত অন্য সব রাজনৈতিক দল যেমন ন্যাপ (ওয়ালী), ন্যাপ (ভাসানী), কাউন্সিল মুসলিম লীগ, কনভেনশন লীগ, ইস্তেকলাল পার্টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও জমিয়তে ওলামায়েসহ অন্য দলগুলো এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যালঘু দলগুলোর এক যৌথ সভা আজ লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়।

জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যালঘু দলসমূহের সিদ্ধান্তে বলা হয় যে, “বর্তমান সঙ্কটের মূল কারণ হচ্ছে পারস্পরিক অবিশ্বাস। আমরা মনে করি যে, অবিলম্বে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় গিয়ে দ্রুত সকল প্রকার অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা ও মতদ্ধৈততা দূর করে, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে এনে, আন্তরিকভাবে ও মুক্ত মনে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করে ৪টি শর্ত মেনে নিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আলোচনা শুরু করবে। অবিলম্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করার যথাযথ পরিবেশ তৈরি করবে।”

সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে যে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকে বসতে বাধ্য করেছিলেন এ সভায় গৃহীত প্রস্তাবটি এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

দৃশ্যত, সমগ্র পাকিস্তানে মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর একচ্ছত্র নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং খোদ পশ্চিম পাকিস্তানে দাবি ওঠে প্রেসিডেন্ট যেন অবিলম্বে ঢাকা যান। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সকল দাবি নিঃশর্তভাবে মেনে নেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ মার্চ ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়