ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কাজের জন্য বেঁচে থাকবেন বিশ্বের মানুষের কাছে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ১৫ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাজের জন্য বেঁচে থাকবেন বিশ্বের মানুষের কাছে

চলে গেলেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিং। খ্যাতনামা এ পদার্থবিদ ৭৬ বছর বয়সে বুধবার যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে নিজ বাসভবনে মারা গেছেন। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী হকিং মাত্র ২১ বছর বয়সে দুরারোগ্য মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকেরা মাত্র দুই থেকে চার বছর বাঁচবেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত সেই মানুষটি সবাইকে অবাক করে দিয়ে বেঁচে ছিলেন আরো ৫৫ বছর। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত  সব শারীরিক অক্ষমতা জয় করে তাঁর সাধনা অব্যাহত রেখেছেন। গবেষণা করেছেন ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর এবং আপেক্ষিকতা নিয়ে । বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন বিজ্ঞানের নতুন নতুন তত্ত্ব।

হকিংয়ের জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে। তিনি ভালো ছাত্র ছিলেন না। স্কুলে ক্লাসে তাঁর অবস্থান ছিল শেষ দিকে। বাবা তাঁকে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়তে উদ্বুদ্ধ করলেও তিনি পদার্থবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা নেন। পরে কেমব্রিজে শিক্ষকতা করেন তিনি। কিন্তু ১৯৬২ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সেই মোটর নিউরোন রোগ ধরা পড়ে। মস্তিষ্কের দূরারোগ্য এ ব্যাধি তাঁকে, তাঁর মনোবলকে কাবু করতে পারেনি। অদম্য সাধনা ও অধ্যবসায় দিয়ে অধ্যাপক হকিং নিজেকে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আলবার্ট আইনস্টাইনের পর তাঁকেই সবচেয়ে প্রভাব সৃষ্টিকারী বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যুতে শোকাহত।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। এ  গ্রন্থে তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মহাবিশ্বের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন যুক্তি, তথ্য ও তত্ত্বের নিরিখে। বইটি বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি সাধারণ পাঠকের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। যে কারণে স্টিফেন হকিং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।  তাঁর এ বইটি টানা পাঁচ বছর ছিল বেস্ট সেলারের তালিকায়। মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ‘বিগ ব্যাং থিওরি’র প্রবক্তাও তিনি। তাইতো জীবিত অবস্থাতেই  কিংবদন্তির মর্যাদা ও জনপ্রিয়তা পান হকিং। আলবার্ট আইনস্টাইনের পর আর কোনো বিজ্ঞানী বিশ্বজুড়ে এত জনপ্রিয়তা পাননি, এত আলোচিত হননি। কাকতালীয় বিষয় সেই আইনস্টাইনের জন্মদিনেই (১৪ মার্চ) তিনি বিদায় নিলেন নশ্বর পৃথিবী থেকে।

হকিং একের পর এক তত্ত্ব সৃষ্টি করে গেছেন। শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন, তাঁর সেই বিখ্যাত যান্ত্রিক হুইলচেয়ার নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিভিন্ন সভা–সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি বিজ্ঞানের নতুন নতুন গবেষণার ফল সম্পর্কে জানিয়েছেন। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতায় তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। একই সঙ্গে বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন, এ ক্ষমতার অপব্যবহার যেন না হয়। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বেশ ভাবিয়েছে তাঁকে। এজন্য পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। যে কারণে কিছুদিন আগে তিনি অবিলম্বে বাসযোগ্য অন্য কোনো গ্রহ খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছেন মানুষকে।

মোটর নিউরন রোগ নিয়ে সচেতনতাও গড়ে তুলেছিলেন অধ্যাপক হকিং। যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী তাদের প্রতি অধ্যাপক হকিংয়ের পরামর্শ ছিল- যেটি অর্জন করা যাবে দৃষ্টি দাও সেটিতেই। একবার নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হকিং বলেছিলেন, যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তাদের প্রতি আমার উপদেশ হল- তুমি এমন কাজের প্রতি দৃষ্টি দাও, যেখানে ভাল করতে হলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা তৈরি করবে না। তুমি কখনও মানসিক দিক থেকে প্রতিবন্ধী হবে না।

অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এ বিজ্ঞানী আজ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তিনি তার কাজ, চিন্তা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন বিশ্বের মানুষের কাছে। মহৎ এই বিজ্ঞানীর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ মার্চ ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়