ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

খসে পড়ল আরেকটি ধ্রুবতারা

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ২৩ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খসে পড়ল আরেকটি ধ্রুবতারা

এই জার্সিতে আর দেখা যাবে না এবি ডি ভিলিয়ার্সকে

ইয়াসিন হাসান : টেস্ট ক্রিকেট ছাড়বেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। সেই গুঞ্জন অনেকটাই ডালপালা মেলে বারবার ইনজুরিতে পড়ায়। তবুও আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায় থাকে কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দেননি। বরং ফিরে এসেছেন দারুণভাবে। সাদা পোশাকে ২২ গজে ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা। ব্যাট হাতে করেছেন রান। দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল অন্তত ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে অবসর ঘোষণা করলেন বুধবার। শুধু টেস্ট নয়, পুরো

 



বলছিলাম বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্সের কথা। গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি যুগ হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, আইপিএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশ খেলার জন্য হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ছেন ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু না, দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে লিগ খেলার কোনো চিন্তা নেই তার। বলেছেন, ‘টাইটানসের হয়ে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার ইচ্ছে আছে।’

ধুমকেতু হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে আগমণ এবি ডি ভিলিয়ার্সের। ধ্রুবতারা জায়গাটি দখল করতে সময় নেননি। অসাধারণ স্পোর্টসম্যানশিপ, দারুণ ব্যাটিং, অভাবনীয় ফিল্ডিং স্কিল এবং দুর্দান্ত এক অধিনায়কে এবি ডি ভিলিয়ার্স যেন পুরোপুরি এক প্যাকেজ। সব সময় বৃত্তের বাইরে গিয়ে চিন্তা করার দক্ষতা তার। যেটা কেউ কোনোদিনও কল্পনা করতে পারেননি সেটা করে দেখিয়েছেন। ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে শটের আবিষ্কারকও তো তিনিই। ক্যারিয়ার শেষ করেছেন, কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আটকে আছেন এখনো।

 



ওয়ানডেতে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি, ১৫০ রানের রেকর্ডের মালিক এই প্রোটিয়া হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি এবং ৩১ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ডি ভিলিয়ার্স। ওই ম্যাচে আউট হন ১৪৯ রানে। কিছুদিন পর বিশ্বকাপে ৬৪ বলে করেন ১৫০ রান। শেন ওয়াটসন ৮৩ বলে করেছিলেন ১৫০। তার চেয়ে ১৯ বল কম খেলে ১৫০ রান করে ডি ভিলিয়ার্স গড়েন নতুন  রেকর্ড। ৬৬ বলে ১৬২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার রান নিয়ে গিয়েছিলেন ৪০৮-এ।

ওয়ানডেতে ডি ভিলিয়ার্স রান করেছেন ৯৫৭৭। এর মধ্যে ৫০০০ রান পূর্ণ করেছিলেন ৫০ এর ওপরে গড় এবং ১০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট নিয়ে। এক বর্ষপঞ্জিকায় অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ছক্কা (৬০) মারার রেকর্ডটাও তারই দখলে। ওয়ানডেতে ২৫ সেঞ্চুরির মালিক ডি ভিলিয়ার্স। এর মধ্যে ৮টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ৭৫ বা এর কম বল খেলে। এ পরিসংখ্যানই বলে দেয় ব্যাট হাতে কতটা বিধ্বংসী ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পাশাপাশি পুরো ক্যারিয়ার ঘাটলে বোঝা যাবে তার অবস্থান। ওয়ানডেতে ৯ হাজারের ওপরে রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট তার। ৯৫৭৭ রান করেছেন ৫৩.৫০ গড়ে, ১০১.০৯ স্ট্রাইক রেটে। তার পরে আছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট- ৯৬.৯৪ স্ট্রাইক রেট, রান ৯৬১৯।

 



ওয়ানডের ফর্ম টিকে যায় টেস্টেও। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দ্রুততম একশর রেকর্ডটি এখনো তার দখলে (৭৫ বল)। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৪ সালে তার টেস্ট যাত্রা শুরু। পরের ৭৭ ইনিংসে রানের খাতা খুলেছেন প্রতিটিতেই। ৭৯তম ইনিংসে প্রথম ডাকের স্বাদ পান। অভিষেকের পর টানা সবচেয়ে বেশি ইনিংসে শূন্য রানে আউট না হওয়ার রেকর্ডটা এখনো তারই দখলে। পাশাপাশি অভিষেকের পর টানা ৯৮ টেস্ট খেলার রেকর্ডও তার দখলে ছিল। অনেকদিন এ রেকর্ড ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু ইনজুরি তাকে সেঞ্চুরি করতে দেয়নি। এই ইনজুরি তার পথের কাঁটা হয়ে থাকল ক্যারিয়ারের শেষ মুহূর্তেও। ‘ক্লান্ত’ বলে অবসর নিয়ে নিলেন ডি ভিলিয়ার্স।

আরেকটি বিশ্বকাপ তার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু তার আগেই সরে দাঁড়ালেন। তার সরে দাঁড়ানোয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে একটি ধ্রুবতারা খসে পড়ল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আইসিসির সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। তিন বছর ওয়ানডের সেরা ব্যাটসম্যান নির্বাচিত হয়েছেন (২০১০, ২০১৪, ২০১৫)। ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আট বছরে সাতবারই আইসিসি ওয়ানডে বর্ষসেরা একাদশে জায়গা পেয়েছেন। ২০১২ সালে শুধু বাদ পড়েছিলেন। নয়তো টানা আট বছর বর্ষসেরা একাদশে জায়গা পাওয়ার রেকর্ডটি তার নামের পাশেই লেখা থাকত।

 



এত অর্জনের ভিড়ে একটি সাফল্য ডি ভিলিয়ার্স শুধু ছুঁতে পারেননি। তা হলো বিশ্বকাপ ট্রফি। সেই সুযোগটি হয়তো ছিল। ২০১৯ বিশ্বকাপের মঞ্চও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু সুযোগ নিলেন না বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় পোস্টারবয়। তবুও ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এবি ডি ভিলিয়ার্স যে ভালোবাসার রেণু ছড়িয়ে দিয়েছেন, তা টিকে থাকবে অনন্তকাল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মে ২০১৮/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়