ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সর্বাত্মক ও সদর্থক এক বিদ্রোহী

যতীন সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪২, ২৫ মে ২০১৮   আপডেট: ১৪:২৫, ১৪ অক্টোবর ২০২১
সর্বাত্মক ও সদর্থক এক বিদ্রোহী

‘বিদ্রোহী’ কবিতার সূত্রেই ‘বিদ্রোহী কবি’ কথাটি নজরুলের নামের সঙ্গে গ্রথিত হয়ে যায়। শুধু এই কবিতা নয়, নজরুলের সমস্ত সৃষ্টি বিদ্রোহের বাণীরূপ। সে-কারণেই তাঁর জন্য ‘বিদ্রোহী কবি’ অভিধাটি যে অসঙ্গত হয় নি, সে-কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তবে, নজরুলের সমসাময়িক পাঠক ও রসগ্রাহীগণের কাছে তাঁর বিদ্রোহের স্বরূপ প্রকৃতি যে স্পষ্ট উপলব্ধি হয় নি, সে-কথাও অস্বীকার করা যায় না। তাঁর বিদ্রোহকে অনেকেই দেখেছেন একমাত্রিক রূপে, বহুমাত্রিকতা প্রায় সকলেরই নজর এড়িয়ে গেছে। এ-কারণেই নজরুল নিজে ‘বিদ্রোহী কবি’ আখ্যা খুব খুশি মনে মেনে নিতে পারেন নি। ১৯২৯ সনে এলবার্ট হলে তাঁকে যে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছিল, সেই সংবর্ধনার প্রতিভাষণ-এর একস্থানে তিনি বলেছিলেন:

‘‘আমাকে ‘বিদ্রোহী’ বলে খামাখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এ নিরীহ জাতিটাকে আঁচড়ে কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়াবার ইচ্ছা আমার কোনো দিনই নেই। তাড়া যারা খেয়েছে, অনেক আগে থেকেই মরণ তাদের তাড়া করে নিয়ে ফিরছে। আমি তাতে এক-আধটু সাহায্য করেছি মাত্র। এ-কথা স্বীকার করতে আজ আমার লজ্জা নেই যে, আমি শক্তিসুন্দর রূপ-সুন্দরকে ছাড়িয়ে আজো উঠতে পারিনি। ... কীটসের মতো আমারও মন্ত্র 'Beauty is truth, truth is beauty."


তিনি যে কেবল বিদ্রোহের জন্যই বিদ্রোহের কথা বলেন নি, তাঁর বিদ্রোহ যে কেবল পুরনোকে ভাঙার জন্য নয়, নতুনের সৃষ্টিই যে তাঁর মূল লক্ষ্য এ কথার স্পষ্ট অভিব্যক্তি তো তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতাতেই আছে- ‘আমি উপাড়ি ফেলিব অধীন বিশ্বে অবহেলে নবসৃষ্টির মহানন্দে।’ এ-রকম নবসৃষ্টির মহানন্দ বা সৃষ্টিসুখের উল্লাসের বাণীরূপ ধারণ করেই তিনি বিদ্রোহী। ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি তাঁর যে-কাব্যের অন্তর্গত, সেই ‘অগ্নিবাণী’র প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস’-এরও তো একই বাণী-

‘‘ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? -প্রলয় নূতন সৃজন বেদন।

আসছে নবীন-জীবন-হারা অসুন্দরে করতে ছেদন।

তাই সে এমন কেশে বেশে

প্রলয় বয়েও আসছে হেসে

মধুর হেসে।

ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চির-সুন্দর!”

ভাঙা ও গড়ার, ধ্বংস ও সৃষ্টির দ্বান্দ্বিকতার ধারক বলেই তো তাঁর উচ্চারণ- ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতুর্য্য।’ ‘বিদ্রোহী’ হয়েও তিনি যে ‘শক্তি-সমুদ্র রূপ-সুন্দর’-এর উত্তর-সাধক, সে-কথার প্রমাণ তো বিধৃত হয়ে আছে তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতারই অনেকগুলো ছত্রে-

‘আমি বন্ধন হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়ে বহ্নি

আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি।

...

আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন, শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর।

আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,

আমি অপমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের।

আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,

আমি চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর।

আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,

আমি চপল মেয়ের বালোবাসা, তার কাঁকন-চুড়ির কন-কন।’

এই ছত্রগুলো কি একটি প্রেমের কবিতারও হতে পারে না? কিংবা এই ছত্রগুলোকেই একটি নিটোল প্রেমের কবিতা বলে গণ্য করা যায় না কি? আবার এই ছত্রগুলোতেই কবির প্রেমিক সত্তার সঙ্গে বিদ্রোহী সত্তা যে জড়িত, মিশ্রিত হয়ে রয়েছে, তা-ও তো অস্বীকার করতে পারি না। বিধবার বুকের ‘ক্রন্দন শ্বাস’ কিংবা ‘অপমানিতের মরম-বেদনা’ ঘোচাতে না পারলে নর-নারীর প্রেম কোনো মতেই সার্থকতার স্পর্শমণ্ডিত হতে পারে না, এবং সে কারণেই প্রেমিককেও বিদ্রোহী হয়ে উঠতে হয়, বিদ্রোহী হয়েই বাস্তব পরিপার্শ্বকে প্রেম-সাধনার উপযোগী করে তুলতে হয়। যখন ‘উৎপীড়িতের ক্রন্দন-বোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না’ এবং ‘অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না’ তখনকার সেই শান্ত উদার নিঃক্ষত্রিয় বিশ্বেই রচিত হবে প্রেমিক-প্রেমিকার কাঙ্ক্ষিত মিলনকুঞ্জ। ‘চির উন্নত-শির’ ‘চির-বিদ্রোহী বীর’ প্রেমিক তখন আপন প্রেমিকাকেই ‘বিজয়িনী’ বলে ঘোষণা করে বলতে পারবে-

‘হে মোর রাণী! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে। আমার বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ তলে এসে।’

এবং

‘বিদ্রোহীর এই রক্তরথের চূড়ে

বিজয়িনী! নীলাম্বরীর আঁচল তোমার উড়ে’

বিদ্রোহী কবির প্রেম-ভাবনা যে প্রেমের কবিতাতেও বিদ্রোহ-চেতনার সঞ্চার ঘটিয়ে তাকে অন্যরকম করে তুলেছে, তার অনন্য উদাহরণ ‘অ-নামিকা’ কবিতাটি। কবিতার প্রেমিক পুরুষটি যেন এক বিদ্রোহী কালাপাহাড়। কোনো বিশেষ প্রেমিকা এই প্রেমিকের উদ্দিষ্টা নয়, নৈর্ব্যক্তিক প্রেমেরই জয়-ঘোষণা তার কণ্ঠে-

‘প্রেম সত্য, প্রেম-পাত্র বহু অগণন,

তাই-চাই, বুকে পাই, তবু কেন কেঁদে ওঠে মন।

মদ্য সত্য, পাত্র সত্য নয়,

যে পাত্রে ঢালিয়া খাও সেই নেশা হয়।’

এমন নৈর্ব্যক্তিক ও সর্বাত্মক প্রেম তো সেই কবির ভাবনাতেই স্থান পেতে পারে যিনি জীবনের বহুমাত্রিকতা ও সমগ্রতার সাধক, সকল ক্লেদ ও কালিমা থেকে মুক্ত করে জীবন সার্থক ও সুন্দর করার জন্যই যিনি বিদ্রোহী, যাঁর চেতনায় আছে অন্ন ও পুষ্পের সহাবস্থান। ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত একটু নুন’- এমন কট্টর বাস্তববাদী ভাবনা যে-কবির, যে-কবি অনায়াসে ঘোষণা করতে পারেন- ‘প্রার্থনা করো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস/ যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ’, সেই কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখেই তো ধরা পড়ে জীবন-বাস্তবের উল্টো পিঠের ছবিও। খাদ্যের ক্ষুধা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গেই যে মানুষের নান্দনিক ক্ষুধার পরিতৃপ্তি ঘটাতে হবে, সে বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন ছিলেন বলেই সমগ্রতার সাধক এই কবি লিখলেন: ‘মানুষ পেট ভরে খেয়ে, গা ভরা বস্ত্র পেয়ে সন্তুষ্ট হয় না, সে চায় প্রেম, আনন্দ, গান, ফুলের গন্ধ, চাঁদের জ্যোৎস্না। যদি শোকে সান্ত্বনা দিতে না পারেন, কলহ-বিদ্বেষ দূর করে সাম্য আনতে না পারেন, আত্মঘাতী লোভ থেকে জনগণকে রক্ষা করতে না পারেন, তাহলে তিনি অগ্র-নায়ক নন।”

সারস্বত সাধনায় এই অগ্র-নায়কের ভূমিকা গ্রহণ করেছেন বলেই নজরুলকে ‘বিদ্রোহী’ হতে হয়েছে। মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার পথে বাধার পাহাড় তৈরি করে রেখেছে যে-বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা, সেই সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধেই তাঁর বিদ্রোহ। সেই সমাজব্যবস্থার ধারক যারা, সেই শাসক-শোষক জমিদার মহাজন মোল্লা পুরুত- সকলের বিরুদ্ধেই তাঁর বিদ্রোহ। তাঁর পুরো সৃষ্টির পরতে পরতে বিধৃত হয়ে আছে জীবনের সমগ্রতার ধারক সদর্থক বিদ্রোহ-চেতনা। তার এই বিদ্রোহের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ-র কাছে লেখা সেই বিখ্যাত পত্রটিতে নিজেই তিনি জানিয়েছিলেন-

‘‘বিদ্রোহী’র জয়-তিলক আমার ললাটে অক্ষয় হয়ে গেল আমার তরুণ বন্ধুদের ভালোবাসায়। একে অনেকেই কলঙ্ক তিলক বলে ভুল করেছে, কিন্তু আমি করিনি। বেদনা-সুন্দরের গান গেয়েছি বলেই কি আমি সত্য-সুন্দরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি? আমি বিদ্রোহ করেছি বিদ্রোহের গান গেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে যা মিথ্যা, কলুষিত, পুরাতন-পচা সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে। হয়ত আমি সব কথা মোলায়েম করে বলতে পারিনি, তলোয়ার লুকিয়ে তার রূপার খাপের ঝকমকানিটাকেই দেখাইনি এই তো আমার অপরাধ। এরই জন্য তো আমি বিদ্রোহী। আমি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি, সমাজের সকল কিছু কুসংস্কারের বিধি-নিষেধের বেড়া অকুতোভয়ে ডিঙিয়ে গেছি, এর দরকার ছিল মনে করেই।”

নজরুল-রচনাবলির যেকোনো মনোযোগী পাঠকই উপলব্ধি করবেন যে নজরুলের বিদ্রোহের প্রকাশ তাঁর বক্তব্যে ও বিষয়ে যেমন, তেমনই আঙ্গিকে ও প্রকরণে। আরবি-ফারসি শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ও দেশজ শব্দের সুষম বিন্যাস ঘটিয়ে এবং হিন্দু ও ইসলামি পুরাণের নবায়ন ও যুগোপযোগী তাৎপর্য উদঘাটন করে বাংলা কবিতার আঙ্গিকে ও প্রকরণে  তিনি রেখেছেন অচিন্তিতপূর্ব বিদ্রোহের স্বাক্ষর। কিন্তু বুদ্ধদব বসু যখন আচমকা বলে বসেন যে, ‘নজরুলের রচনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিদ্রোহ আছে, কিন্তু সাহিত্যিক বিদ্রোহ নেই’, তখন আমাদের বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয় বৈকি! ‘সাহিত্যিক বিদ্রোহ’ বলতে কি বোঝেন এই বিদগ্ধ কবি, সমালোচক ও সাহিত্যতাত্ত্বিক? নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে বিপুলভাবে নন্দিত হয়েছিল, সে কি শুধু ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক বিদ্রোহে’র জন্যই? প্রচুর ও গভীর সাহিত্যিক বিদ্রোহকে ধারণ করেই কি তাঁর কবিতা অনন্য হয়ে ওঠে নি? তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় সামাজিক-রাজনৈতিক বিদ্রোহের আধেয় যে-আঁধারে ধৃত হয়েছে, সেই সাহিত্যিক আঁধারটিতেও তো প্রচলিত কবিতার যত বন্দন, যত নিয়ম-কানুন শৃঙ্খলা সব কিছুকে ভেঙেচুরে সাহিত্যিক বিদ্রোহের পরাকাষ্ঠাই প্রদর্শন করেছেন। যে-ছন্দে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচিত সেই ‘মাত্রাবৃত্ত ছন্দে মুক্তবন্ধ কবিতা দেখা যায় না’ - প্রখ্যাত ছন্দশাস্ত্রী প্রবোধচন্দ্র সেনও সে-কথা জানতেন। অথচ তিনিই দেখলেন, ‘বাংলা মাত্রাবৃত্ত ছন্দে মুক্তবন্ধ কবিতার অতি উৎকৃষ্ট নিদর্শনস্বরূপ বাংলার উদীয়মান কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ নামক কবিতাটি উল্লেখযোগ্য।’

সাহিত্যিক বিদ্রোহের নিদর্শন রূপেই মাত্রাবৃত্ত ছন্দ নজরুলের হাতে হয়ে গেল মুক্তবন্ধ তথা ‘নৃত্যপাগল ছন্দ’, এবং ছন্দেও যেমন অলংকারে উপমায়-উৎপ্রেক্ষায়ও নজরুল তেমনই বিদ্রোহী মুক্ত জীবনানন্দ। ‘ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার’-এর সঙ্গে সমান মর্যাদায় ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা হুঙ্কারকে বিদ্রোহের দৃষ্টান্ত রূপে হাজির করা, কিংবা একইসঙ্গে ‘বাসুকির ফণা’ ও ‘স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা’ জাপটে ও সাপটে ধরার মতো সাহিত্যিক বিদ্রোহের কথা আধুনিক কালের বাংলা কবিতায় নজরুলের আগে আর কেউ সম্ভবত চিন্তাও করতে পারেন নি। নজরুলের কবিতায় সাহিত্যিক বিদ্রোহের এ-রকম অচিন্তিত পূর্বতার বিষয়টি অনেক রসগ্রাহীর চেতনাতেই ধরা পড়েছিল। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণসংখ্যা ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় ‘অগ্নিবীণা’র অন্তর্ভুক্ত ‘কামালপাশা’ কবিতাটি প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল-

‘তুর্কীর নব-সৌভাগ্যের প্রতিষ্ঠাতা কামাল পাশার নামে যে কবিতাটি রচিত হইয়াছে সেটি বঙ্গসাহিত্যে অপূর্ব সৃষ্টি। গদ্যপদ্যময় কবিতার সংস্কৃত নাম ‘চম্পূ’, সে হিসাবে এই কবিতাটিকে চম্পূ বলিলে ইহার বিশেষত্ব বুঝান যায় না, কারণ ইহাতে যে উদ্দীপনা আছে প্রাচীন চম্পৃতে তাহা পাই না। যুদ্ধে অভিযানে জয়ডঙ্কার তালে তালে যোদ্ধাদের যে জয়োল্লাস এই ‘কামালপাশা’ কবিতায় পাই- তাহা এদেশের সাহিত্যে নূতন। কবির ছন্দে ও ভাষায় আমরা মুগ্ধ হইয়াছি; ইরান ও ভারতের এমন অপূর্ব মিলন, মোগল সম্রাটদের আমলের নামজাদা হিন্দী-সাহিত্যেও দেখি নাই। বঙ্গের কবিসমাজে নজরুল ইসলামের স্থান অতি উচ্চে।”

কোনো সন্দেহ নেই। বিদ্রোহই বঙ্গের কবিসমাজে নজরুলের উচ্চস্থান লাভের আসল হেতু। সে-বিদ্রোহ একই সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক। এক কথায় সামগ্রিক। তবে, এ-রকম সর্বাত্মক ও সদর্থক বিদ্রোহ কেবল বিদ্রোহই নয়, প্রকৃতপক্ষে তা বিপ্লব। বিদ্রোহ তো নিতান্ত খণ্ডিত, নঞর্থক ও দায়িত্বহীনও হতে পারে। একান্ত অপরিণামদর্শী মানুষও কোনো বিষয়ে আশুফল লাভের আশায় বিদ্রোহের আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু বিপ্লবে সে-রকম হতে পারে না। বিপ্লবের জন্য যে-বিদ্রোহ, সে-বিদ্রোহের ধারককে অবশ্যই হতে হয় অখণ্ড জীবনদৃষ্টিসম্পন্ন; হতে হয় সদর্থক, দায়িত্ববান ও পরিণামদর্শী। নজরুলের জীবনচেতনায় ও শিল্পচেতনায় এ-রকম সকল ইতিবাচক উপাদানের উপস্থিতি ছিল বলেই তাঁর সকল বিদ্রোহ ছিল বিপ্লবাভিমুখী।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়