ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

১৯৬৬ বিশ্বকাপ: জিওফের কীর্তিতে বিশ্বকাপের রাজা ইংল্যান্ড

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫২, ২৯ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৯৬৬ বিশ্বকাপ: জিওফের কীর্তিতে বিশ্বকাপের রাজা ইংল্যান্ড

বিশ্বকাপ জয়ের পর ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের উল্লাস। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজনের পাশাপাশি শিরোপাও জেতে তারা।

আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা! তার পরেই শুরু `গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ`। বিশ্বকাপ ফুটবল। এক মাস সারা পৃথিবীকে এক সুরে বেঁধে রাখবে সেই এক খেলা। সারা বিশ্ব জুড়ে কয়েক কোটি মানুষ টিভির পর্দাতেই রোনালদো, মেসি, নেইমারদের পায়ের জাদুতে মগ্ন হবেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে এসে গেল ফুটবল বিশ্বকাপের মৌসুম। দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের মাসকট ‘জাভিবাকা’।

প্রায় শতবর্ষের কাছাকাছি চলে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের শুরুটা হয়েছিল কিভাবে? ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসই বা কি ছিল? বিশ্বকাপের আগের আসরগুলো কেমন ছিল? রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে এ প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। তাঁদের জন্য রাইজিংবিডি’র বিশেষ আয়োজন ‘‘ফিরে দেখা বিশ্বকাপ’’। ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা হবে বিশ্বকাপের আগের ২০টি আসর। আজ প্রকাশ করা হচ্ছে অষ্টম পর্ব।
 

ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট। ফাইনলে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র ফাইনালে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড।


১৯৬৬ বিশ্বকাপ: ফুটবলের জন্ম দিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু তারাই শুরুতে বিশ্বকাপটা মানতে পারেনি। ১৯৫০ সালে প্রথম অংশ নেয় দলটি। চার আসর যেতেই ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ইংলিশরা। তবে পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে লড়াইটা জমে প্রচণ্ড। তবে ফুটবলের জনক বলেই হয়তো পশ্চিম জার্মানির চেয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে ভোট বেশি দেয় সদস্য দেশগুলো। আর ফুটবলও নিজের ঘরে ফিরে দু’হাত ভরিয়ে দেয় ইংলিশদের। তবে শুরুতেই কেলেঙ্কারি। টুর্নামেন্ট শুরুর কিছু দিন আগে চুরি হয়ে যায় ট্রফি। যদিও সপ্তাহখানেক পর তা ফেরত পায়। এরপর মাঠেও ছিল নানা ধরণের বিতর্ক।

বরাবরের মতো এবারও বিশ্বকাপে মূল পর্বে খেলে আগের মতোই ১৬টি দেশ। বাছাইপর্বে অবশ্য অংশ নিয়েছিল ৭১টি দেশ। তার মধ্যে ইউরোপ থেকে সুযোগ পায় ১০টি দেশ- পশ্চিম জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, বুলগেরিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ল্যাতিন আমেরিকা থেকে সুযোগ মেলে তিনটি দেশের - ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে। কনকাকাফ অঞ্চল থেকে মেক্সিকো আর এশিয়া থেকে সুযোগ পায় উত্তর কোরিয়া।
 

১৯৬৬ বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বল


বাছাই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ১২৭টি ম্যাচ। আর ইংল্যান্ডের ৮টি ভেন্যুতে টুর্নামেন্টের মোট ৩২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আগের দুই আসরের নিয়মেই অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। ১৬টি দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। চার গ্রুপের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় কোয়ার্টার ফাইনাল। এরপর যথারীতি সেমি-ফাইনাল ও ফাইনাল।

আগের দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল এবারও ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামে। শুরুটাও করে দারুণ। প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে হাঙ্গেরি ও পর্তুগালের কাছেই পাত্তাই পায়নি তারা। ফলে টানা দুই আসরের চ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপ শেষ হয় গ্রুপ পর্বেই। আর তার ঠিক উল্টো ছিল স্বাগতিকরা। ফেভারিট না হয়েও ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে ইংল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে অবশ্য হোঁচট খায়। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র। কিন্তু এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। যদিও কথিত আছে তাদের স্বপ্নযাত্রায় ছিল রেফারিদের হাত। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১-০ গোলের কষ্টসাধ্য জয়, আর সেমি-ফাইনালে অপ্রতিরোধ্য পর্তুগালের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে ইংল্যান্ড।
 

বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট


সে আসরে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে দারুণ খেলেছিল উত্তর কোরিয়া। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় আর চিলিকে ১-১ গোলে রুখে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে দলটি। নক পর্বেও দারুণ সূচনা তাদের। পর্তুগালের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ইউসেবিওর অতিমানবীয় ফুটবল খেলায় উল্টো পাঁচ গোল হজম করে তারা। তবে ফুটবল বিশ্বের মন করেছিল দলটি। আর অপর দিকে উরুগুয়ে ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে বিদায় করে প্রথমবারের মতো অলইউরোপ ফাইনালের আয়োজন করে পশ্চিম জার্মানি।
 

বিশ্বমঞ্চ একাই রাঙিয়েছেন পর্তুগালের ইউসোবিও।  ৯টি গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।


ওয়েম্বলিতে ফাইনালে অবশ্য দারুণ খেলে ইংল্যান্ড। ৪-২ গোলে ম্যাচ জিতে নিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ আয়োজন করেই শিরোপায় চুমু খায় তারা। যদিও তাদের বরাবরের মতো ফাইনাল ম্যাচেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। পর্তুগাল তৃতীয় ও সোভিয়েত ইউনিয়ন চতুর্থ হয়। অষ্টম বিশ্বকাপে মোট গোল হয় ৮৯টি। ৯টি গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন পর্তুগালের ইউসোবিও। ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট এ বিশ্বকাপের ফাইনলে হ্যাটট্রিক করেন। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র ফাইনালে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ মে ২০১৮/মুহাম্মদ মেহেদী হাসান/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়