ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ওপর পাকিস্তানিদের গোয়েন্দা নজরদারির তথ্য প্রকাশ

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধুর ওপর পাকিস্তানিদের গোয়েন্দা নজরদারির তথ্য প্রকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট : ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার ৪৬টি ফাইলে ৪০ হাজার পৃষ্ঠার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে। শুক্রবার ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আইবি) অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৪ খন্ডের বইটি প্রথম খন্ড এটি। এই প্রথম খন্ডে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন, সংগ্রাম, ভাষণ, গতিবিধি এবং কর্মকান্ডের বিভিন্ন তথ্য সংযোজিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘একটি মিথ্যা কখনই সত্যকে ঢেকে রাখতে পারে না, জাতির পিতাকে ছাড়া কখনই বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হতে পারে না। কারণ, বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্যের মূল অংশ জুড়েই রয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

হাক্কানী পাবলিশার্স বইটির প্রকাশক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বইটির সম্পাদনাসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।

জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী তার বক্তৃতায় কিভাবে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার বিশাল এই তথ্য ভান্ডারকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের ২২ সদস্যের একটি দলের সাহায্যে নথি হিসেবে প্রস্তুত করেন তার বৃত্তান্ত তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত ডন পত্রিকার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘বাঙালি সব সময় বৈষম্যের শিকার ছিল আর এই বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

তিনি বলেন, ‘এই বঞ্চনার বিরুদ্ধেই তিনি সোচ্চার ছিলেন এবং আজন্ম লড়াই-সংগ্রাম করেছেন জাতির পিতা। এ কারণে মনে হয় তার প্রতি পকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর একটি বৈরী মনোভাব ছিল এবং এর ফলে তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা সবসময় সক্রিয় ছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কি করছেন, কি বলছেন, তার বিরুদ্ধে সবসময় পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ রিপোর্ট তৈরি করতো এবং রিপোর্ট পাঠাতো। আর এই রিপোর্ট যে পাঠাতো তারই ওপর ভিত্তি করে তার বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা দেয়া হত এবং তাকে বারবার গ্রেফতার করে জেলে পাঠনো হত। আমরা সন্তান হিসেবে খুব কম সময়ই তাকে কাছে পেয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বঞ্চনার থেকে মুক্তির জন্যই বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করেন। ধাপেধাপে একটি জাতিকে তিনি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন এবং তারই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি এসবি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুদ্দিনকে সে সময়কার (পাকিস্তান আমলের) গোয়েন্দা রিপোর্টগুলোর বিষয়ে জানালে শামসুদ্দিন সে সমস্ত ফাইলের হদিস তাকে জানান। তিনি সমস্ত ফাইল নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসেন ।’

বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেন, ‘তিনি সে সময় ফাইলের তিনটি ফটোকপির সেট করে এক সেট নিজের কাছে রাখেন এবং তিনি ও প্রয়াত বেবী মওদুদ সেসব ফাইল নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং একটি সেট আমেরিকায় বঙ্গবন্ধুর গবেষক ড. এনায়েতুর রহিমের কাছে পাঠান।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়বার ২০০৮ সালে সরকারের আসার পর এসবি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বর্তমান আইজিপি ড. জাভেদ পাটোয়ারীকে তিনি এসব ফাইলের কথা এবং এ সংক্রান্ত প্রকাশনার আগ্রহ ব্যক্ত করলে ড. জাভেদ এবং তাদের একটি ২২ জনের একটি দল এই ডকুমেন্ট নিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করেন। যদিও এসব পুরনো কাগজ ঘেঁটে বই আকারে তথ্য প্রস্তুত করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ ছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় ৪৬টি ফাইল এবং ৪০ হাজারের মত পাতা। সেগুলোকে নিয়ে বসে এডিট করে এর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে নিয়ে সেগুলোকে ‘ডি ক্লাসিফাইড’ করে আজকে এই প্রকাশনাটি করতে পেরেছি। এটার যে নামটা ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টোলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সেটাই আমরা দিয়ে আজকে এটি প্রকাশ করলাম।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রকাশনার মধ্য দিয়ে অমূল্য তথ্যভান্ডার পাওয়া গেছে। প্রথমে হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট যেগুলো সবই জাতির পিতার বিরুদ্ধে, এই রিপোর্টের মধ্যদিয়েই ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার প্রতিটি কর্মকান্ড, গতিবিধি, কোন মিটিং করেছেন এবং সেখানে কি বক্তৃতা দিয়েছেন- তার অনেক তথ্য সেখানে আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক চিঠি-পত্র পাওয়া গেছে যেগুলো বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন। যা প্রাপকের কাছে কোন দিন পৌঁছেনি এবং তাকেও অনেক চিঠিপত্র লেখা হয় সেগুলোও সেখানে পাওয়া গেছে। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আমাদের সংগঠন আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীর নাম সেখানে পাওয়া গেছে। ’৬৬ র ছয় দফা এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলারও সকল তথ্যাবলী এবং গণঅভ্যুথানের ফলে আইয়ুব খান যখন বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো সেই মুক্তি প্রদানের নির্দেশনাও সেখানে রয়েছে।’

তিনি এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশের আইজিপি ড.জাভেদ পাটোয়ারী এবং এসবি’র ২২ জনের দল এবং প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বইটির প্রকাশনা সংস্থা হাক্কানী পাবলিশার্সকে বাকি ১৩টি খন্ডের দ্রুত প্রকাশনা সম্পন্ন করে ফেলার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, প্রথম খন্ডটি করা দুরুহ ছিল সেটা আমরা করে ফেলেছি, প্রথম খন্ডে ১৯৪৮ খেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে ধারণ করা হয়েছে, বাকি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মোট ১৩টিসহ মোট ১৪টি খন্ডে এটি প্রকাশিত হবে।

বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান এবং হাক্কানী পাবলিশার্সের কর্ণধার গোলাম মোস্তফা এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা,মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, তিন বাহিনী প্রধান, বিদেশি কুটনিতিকরা এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও তার পুত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং পরিবারের অন্য সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ বরেণ্য ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়