ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে না রাখলে মহাবিপর্যয়’

এনএ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ৮ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে না রাখলে মহাবিপর্যয়’

রাইজিংবিডি ডেস্ক : বর্তমান বিশ্ব জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশ্বের মানুষ প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু মানুষেরই সৃষ্ট কর্মকাণ্ড বিশ্বকে বিপন্ন করে তুলছে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি বলা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। শিল্প, কল-কারখানা বৃদ্ধিতে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ক্রমে বাড়ছে। ফলে বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। কার্বন নিঃসরণের বর্তমান এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী এক যুগে বিশ্বে খরা, বন্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রাও বাড়বে ব্যাপক। এতে বিশ্বে মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে এই বলে সতর্ক করা হয়েছে যে, দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ( ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) অতিক্রম করবে। নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বিশ্ব।

সোমবার আইপিসিসি গ্লোবাল ওয়ার্মিং অব ১.৫ ডিগ্রি শিরোনামে ৭২৮ পৃষ্ঠার বিশেষ ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে আরো বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখার জন্য খুব বেশি সময় হাতে নেই। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের সাপেক্ষে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে।
 


এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার ২০১০ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। আর ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের হার শূণ্যে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে জ্বালানি, শিল্প ও পরিবহনসহ ও শহর-নগরে  ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।

এ প্রসঙ্গে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষক অ্যান্ড্রু কিং বলেন, এটি বেশ উদ্বেগের। কারণ আমরা জানি, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার  ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে ব্যাপক সমস্যা হবে। বিশ্বের অনেক জায়গায় তাপদাহ দেখা দেবে। একদিকে প্রচণ্ড গরম এবং ভয়াবহ খরা দেখা দিবে। অন্যদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ভারী বর্ষণ হবে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার সুযোগ ক্রমাগত শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো কার্বন নির্গতকরণের হার যে মাত্রায় কমানোর অঙ্গীকার করেছেন, তাতে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার নয়।
 


উষ্ণতা বৃদ্ধির হার যেন স্থিতিশীল থাকে, তা নিশ্চিত করতে আগামী কয়েক বছরে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, উষ্ণতা বৃদ্ধির হার সীমিত রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে ও নজিরবিহীন পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। তবে বিশ্বনেতারা যদি এখন থেকে কোনোভাবে মানব-সৃষ্ট উষ্ণতাকে দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করতে পারেন, তা হলে বিশ্বের আবহাওয়া, স্বাস্থ্য ও বাস্তুব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির বিপর্যয়পূর্ণ এই মাত্রা এড়াতে ‘সমাজের সবক্ষেত্রে দ্রুত, সুদূরপ্রসারী ও নজিরবিহীন পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তবে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ঠেকানোর এই চ্যালেঞ্জ বিশ্ব কতটুকু মেটাতে পারবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের প্যানেল। অবশ্য আইপিসিসি’র গবেষকরা হতাশ হতে নারাজ। তারা বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন অনেক বড় কাজ। কিন্তু এটা করা অসম্ভব নয়। আগামীর পৃথিবীকে আমরা কিভাবে দেখতে চাই সে সিদ্ধান্ত এখন আমাদের হাতে।’

সূত্র : আইপিসিসি, গার্ডিয়ান, সিএনএন

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ অক্টোবর ২০১৮/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়