ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এলএনজির মূল্য নির্ধারণের আহ্বান

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ২৪ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 এলএনজির মূল্য নির্ধারণের আহ্বান

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : দেশের অর্থনীতির সার্বিক কল্যাণে এলএনজির মূল্য নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান।

শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই আয়োজিত চেম্বার অডিটরিয়ামে ‘এলএনজি মূল্য নির্ধারণ: ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে এর প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় স্বাগত বক্তব্যে এ আহবান জানান তিনি।

আবুল কাসেম খান বলেন, আমাদের শিল্প-কারখানার জন্য যৌক্তিক মূল্যে জ্বালানি প্রাপ্তির বিষয়টি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। আমাদের শিল্প-কারখানার অগ্রগতির চাকাকে সচল রাখার ক্ষেত্রে সম্প্রতি গ্যাসের স্বল্পতার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন প্রায় ২,৭০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট যেখানে আমাদের চাহিদা রয়েছে ৩,৪০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এবং চাহিদার এ গ্যাপ মেটানোর জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এলএনজি আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যা আশাব্যঞ্জক।

আবুল কাসেম খান বলেন, শিল্প খাতে এলএনজি আমদানির প্রভাব ৭২%-৯৩%, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে প্রায় ২০৬ শতাংশ এবং ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে প্রায় ৬৬ শতাংশ হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারকে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় কয়লার উত্তোলন ও তার ব্যবহারের আহবান জানান।

এ সময় তিনি এলএনজির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাশ্ববর্তী দেশসমূহের কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব করাসহ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারে কূপ অনুসন্ধান কার্যক্রম আরো বাড়ানো এবং একই সাথে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানো একান্ত আবশ্যক বলে জানান।    

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ১০ বছরে বৈশ্বিক বাজারে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬৩ শতাংশ ও ১১৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা প্রায় ৯০ ভাগ এবং এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎসের বহুমুখীকরণ আবশ্যক।

তিনি বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পাশ্ববর্তী দেশগুলো হতে একই দামে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের শিল্প-কারখানাসমূহে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে সরকার সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে ভারত হতে প্রায় ১১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যৌথভাবে ‘হাইড্রো পাওয়ার’ ও ‘সোলার পাওয়ার’ ব্যবহার লক্ষ্যে একটি সার্ক সোলার গ্রিড স্থাপনের প্রস্তাব করেছে। এছাড়া এলএনজি আমদানির পর তার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় যেন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে সরকার যত্মবান হবে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য রহমান মুরশিদ বলেন, জ্বালানি দাম বৃদ্ধিতে বিইআরসি আয়োজিত গণ শুনানিসমূহে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের আরো বেশি হারে তথ্যভিত্তিক বক্তব্য প্রয়োজন। যার মাধ্যমে বিইআরসি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাক্তন সচিব ড. মোহাম্মদ ফওজুল কবির খান। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের পর আমরা নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পারিনি। যার ফলে বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস মজুত রয়েছে তা আগামী ৬-৭ বছরের মধ্যে ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনই বাস্তবতায় আমাদের এলএনজির পাশাপাশি অন্যান্য উৎসসমূহ ব্যবহারে আমাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে স্থলভিত্তিক টার্মিনাল এবং সমুদ্র এলাকায় ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের মধ্যে সমন্বয় সাধন আবশ্যক। এলএনজি আমদানি ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে। তবে সেটা যেন কোনোভাবেই আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সেদিকে সরকারকে যত্মবান হতে হবে।

নির্ধারিত আলোচক হিসেবে এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস্ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জহিরুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজিব হায়দার, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. এম শামসুল আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল আলম অংশগ্রহণ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ নভেম্বর ২০১৮/নাসির/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়